খণ্ডকালীন চাকরিতে অর্জন ও উপার্জন
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
নিজের নিয়মিত কাজের পাশাপাশি বাড়তি আয়ের জন্য যে ধরনের কাজ করা হয়, তা-ই মূলত পার্টটাইম জব বা খন্ডকালীন চাকরি। এমন খন্ডকালীন পেশা উন্নত দেশ, বিশেষ করে ইউরোপ-আমেরিকার হাত ধরে এশিয়ার দেশগুলোতেও বেশ আলোচিত এবং পছন্দের চাকরি হয়ে উঠছে। পড়াশোনার পাশাপাশি আত্মনির্ভরশীল হতে অনেক তরুণ-তরুণীই এখন খন্ডকালীন চাকরিকে আপন করে নিচ্ছেন। খন্ডকালীন চাকরি হেসে-খেলেই করা যায়, যদি না কাজটি পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটায়। আশপাশের বন্ধুরা যে সময়টায় আড্ডাবাজি বা ‘জাস্ট ফান’-এর নামে অহেতুক সময় কাটাচ্ছেন, পার্টটাইম জবে কর্মরত আপনি সেই সময়টুকু কাজে লাগিয়ে উপার্জন করছেন। অর্থের সঙ্গে আপনার সিভিতে যোগ হচ্ছে কাজের অভিজ্ঞতা। বাড়ছে দায়িত্ববোধ ও পেশাদারিত্ব। তাই পড়াশোনার ফাঁকে পার্টটাইম জব সময়ের সঙ্গে ব্যক্তির চিন্তাধারা ও কাজের ধরনে ইতিবাচক বদল আনে।
উপার্জন
খন্ডকালীন চাকরিতে যেমন বৈচিত্র্য, তেমনি এখানে বেতনেও থাকে বৈচিত্র্য। তবে যে কোনো চাকরিতে আপনি সর্বনিম্ন ৮ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত পেতে পারেন। তারপর দক্ষতার পালা। এ দক্ষতাই আপনাকে
দেখিয়ে দেবে পথ!
নিয়োগ প্রক্রিয়া
সাধারণত খন্ডকালীন চাকরির নিয়োগ দেওয়া হয় দু’ভাবে। প্রথমত সরাসরি বা পরিচিতদের রেফারেন্সে; দ্বিতীয়ত পত্রিকা ও অনলাইনে বিভিন্ন জবসাইটে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে। শুধু সতর্কতার সঙ্গে চাকরির পত্রিকা ও অনলাইনে বিভিন্ন জবসাইটে নজর রাখলেই যোগ্যতা অনুযায়ী পেয়ে যাবেন কাগ্ধিক্ষত চাকরি। খন্ডকালীন চাকরিতে তরুণদের পাশাপাশি এখন বয়সে সিনিয়ররাও নিজেদের নিযুক্ত করছেন। এ ক্ষেত্রে চাহিদার দিক থেকে সবার কাছে যেসব চাকরি প্রাধান্য পায়, চলুন তা দেখে নিই।
কল সেন্টার
দেশের মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিসহ বিদেশি আউটসোর্সিংনির্ভর ফার্মগুলো বিশ্ববিদ্যালয় পড়ূয়া শিক্ষার্থীদের জন্য কল সেন্টারের মাধ্যমে বেশকিছু পার্টটাইম চাকরির সুযোগ করে দিয়েছে। কল সেন্টারে শিক্ষার্থীরাই বেশি কাজ করছেন। আর এ ক্ষেত্রে প্রাধান্য পাচ্ছেন স্ট্মার্ট ব্যক্তিত্ব, ইংরেজিতে দক্ষ, প্রমিত উচ্চারণ, ভালো কণ্ঠ ও যোগাযোগে অভিজ্ঞ শিক্ষার্থীরা। বেতনও ভালো।
বিজ্ঞাপনী সংস্থা
যারা ভবিষ্যতে বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কাজ করতে চান, পার্টটাইম জব দিয়েই শুরুটা করতে পারেন। কারণ বিজ্ঞাপনের দুনিয়ায় পা রাখার জন্য শুধু পুঁথিগত বিদ্যাই যথেষ্ট নয়। বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলো স্ট্মার্ট, পজিটিভ ও সৃষ্টিশীল তরুণ-তরুণীদের পছন্দ করে। বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়া সম্ভব। পড়ালেখার পাশাপাশি সৃজনশীল যে কোনো শিক্ষার্থী এখানে কাজ করতে পারেন। কপিরাইটার, ক্লায়েন্ট সার্ভিস কিংবা ক্রিয়েটিভ ধারণা প্রদানের জন্য এখানে সৃজনশীল তরুণ-তরুণীদের জন্য রয়েছে বিশেষ সুযোগ।
ফ্রিল্যান্সিং
বর্তমানে তরুণদের মাঝে ফ্রিল্যান্সিং অত্যন্ত জনপ্রিয় পার্টটাইম জব। দেশের প্রায় ৩০ হাজার তরুণ-তরুণী এ কাজের সঙ্গে জড়িত। তারা ঘরে বসেই ফ্রিল্যান্সিং করে মাসে গড়ে এক থেকে দেড় হাজার মার্কিন ডলার উপার্জন করছেন। ফ্রিল্যান্সিং কাজের মধ্যে রয়েছে সফটওয়্যার তৈরি ও উন্নয়ন, ওয়েবসাইট তৈরি ও ডিজাইন, মোবাইল অ্যাপস, গেমস, অ্যাপ্লিকেশন প্ল্যাটফর্ম, ভিওআইপি অ্যাপ্লিকেশন, ডাটা অ্যান্ট্রি, গ্রাফিক ডিজাইন, প্রি-প্রেস, ডিজিটাল ডিজাইন, সাপোর্ট সেবা, কাস্টমাইজড অ্যাপ্লিকেশন তৈরি, রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি। এ ছাড়াও রয়েছে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন ও সোশ্যাল মার্কেটিংয়ের কাজ।
ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট
দেশের আনাচে-কানাচে বিভিন্ন ব্র্যান্ড প্রমোট করা, ক্যাম্পেইন কিংবা অনুষ্ঠানে সহায়তা করার জন্য ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ফার্মগুলো স্ট্মার্ট তরুণ-তরুণীদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে থাকে। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কাজগুলো হয় দিন, সপ্তাহ কিংবা মাসভিত্তিক। এখানে শেখার অনেক কিছু আছে। এ মাধ্যমে কাজ করলে বিভিন্ন দেশের, বিভিন্ন এলাকার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ে, ব্যবস্থাপনার মৌলিক ধারণা শেখা যায়, আরও শেখা যায় করপোরেট দুনিয়ার হালচাল।
ফ্যাশন হাউস
ক্রেতাকে সহায়তা, সঠিক পণ্যটি বাছাই ও বিক্রয় করতে ফ্যাশন হাউসগুলোতে বিক্রয় সহযোগী কাজ করে থাকেন। এ বিক্রয় সহযোগীদের ৮০ শতাংশই ছাত্রছাত্রী। আত্মবিশ্বাস আর ভাষার দক্ষতা থাকলেই এ সেক্টরে পার্টটাইম জব করা যায়। যারা ইংরেজিতে কাঁচা, তাদের ভয় নেই। ফ্যাশন হাউসগুলোই প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করে নেবে আপনাকে।
সুপারশপ
সুপার স্টোরের গ্রাহকসেবার জন্য নিয়োগ করা হয় শিক্ষিত তরুণদের। এ ধরনের স্টোরের বেশিরভাগ জবই হয় পার্টটাইম। সুপার স্টোরগুলোতে দুই ধরনের কাজ থাকে। প্রথমত, পণ্য বহন করা। দ্বিতীয়ত, গ্রাহক বা কাস্টমার কেয়ার। কাস্টমার কেয়ারের মূল কাজ প্রোডাক্ট সম্পর্কে গ্রাহকদের বোঝানো এবং পণ্য নির্ধারিত জায়গায় গুছিয়ে রাখা। বর্তমানে দেশে আছে ২০-২৫টি চেইন সুপারশপ। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় এদের ২০০ থেকে ২৫০টির মতো আউটলেট আছে। এসব আউটলেটে কাজ করছেন প্রায় ১৩ হাজার কর্মী। এখানে ৫ থেকে ৮ ঘণ্টা কাজ করার সময় নির্ধারিত থাকে।
গণমাধ্যম
গণমাধ্যম বা মিডিয়া বলতে সাধারণত বোঝায় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মাধ্যম। বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে পার্টটাইম জবের আকর্ষণীয় ক্ষেত্র গণমাধ্যম। পত্রিকায় ফিচার লিখতে কিংবা সাংবাদিকতায় আগ্রহীরা বিভাগীয় সম্পাদক বা প্রধান প্রতিবেদকের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে লেখালেখি শুরু করতে পারেন। কাজ করতে পারেন প্রদায়ক অথবা শিক্ষানবিশ সাংবাদিক হিসেবে। স্যাটেলাইট টেলিভিশন স্টেশনে অনুষ্ঠান ও সংবাদ উপস্থাপক, প্রতিবেদক, স্ট্ক্রিপ্ট রাইটার, সহকারী প্রযোজক, প্রোডাকশন সহকারী, সহকারী আর্ট ডিরেক্টর হিসেবেও খন্ডকালীন কাজ করা যায়। এফএম রেডিও স্টেশনে পার্টটাইম কাজ করাটা অনেক তরুণের স্বপ্ন। এফএম রেডিওগুলোতে পার্টটাইম জবের মধ্যে রয়েছে আরজে, উপস্থাপক ও প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করা।
কোচিং সেন্টার
ছাত্রাবস্থায় ছাত্রছাত্রী পড়ানো খুব আকর্ষণীয় পার্টটাইম জব। এতে একদিকে যেমন চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার জন্য পুরনো পড়াগুলো ঝালাই হয়ে যায়; অন্যদিকে এমন জ্ঞানও অর্জিত হয়, কোনো কারণে যা আগে এড়িয়ে গিয়েছিলেন আপনি। ছাত্রছাত্রীদের যোগ্যতা ও পাঠ্য বিষয় মাথায় রেখেই ক্লাস নিতে হয় কোচিং সেন্টার ও টিউশনিতে। শিক্ষার্থীর শ্রেণিভেদে এখানে বেতনও হয় ভিন্ন। তবে সপ্তাহে তিনদিন কোচিং এবং টিউশনি করে দিব্যি নিজেকে চালিয়ে নেওয়া যায় শহরে। বাড়তি ইনকামের জন্য টিউশনি ও কোচিংয়ে একাধিক ক্লাস নিতে পারেন।
এ ছাড়া প্রায় সব সেক্টরেই এখন সুযোগ তৈরি হচ্ছে পার্টটাইম জব বা খন্ডকালীন চাকরির। এখানে যে কোনো সময় যে কোনো চাকরি যেমন নেওয়া যায়, তেমনি ভালো না লাগলে ছেড়েও দেওয়া যায়। তবে নিজের দক্ষতা বাড়াতে খন্ডকালীন চাকরির বিকল্প নেই। তাই ক্যারিয়ারে যেই পথে পাড়ি দিতে চান, সেই পথের শুরুটা করতে পারেন খন্ডকালীন চাকরি দিয়ে।