অর্থনীতি পড়তে চাইলে

অর্থনীতি পড়তে চাইলে

ইতিহাস, বিজ্ঞান, সাহিত্য, প্রকৌশল…কত রকম বিষয় আছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয়। কোন বিষয়ে আমি পড়ব, সিদ্ধান্ত নেওয়াই কঠিন। স্বপ্ন নিয়ের এই বিভাগে আমরা একেকটি বিষয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিই। আজ অর্থনীতি সম্পর্কে বলেছেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক পারিসা শাকুর


কী পড়ানো হয়?

আমাদের জীবনে অর্থনীতির ব্যবহার আছে প্রায় সব ক্ষেত্রে। বিষয়টি একজন শিক্ষার্থীকে যুক্তিসংগত সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। অর্থনীতি–বিষয়ক জ্ঞান প্রয়োগ করে যেকোনো সিদ্ধান্ত আরও ভালোভাবে নেওয়া যায়। পড়ালেখাটা শুধুই সংখ্যা, লেখচিত্র, হিসাব–নিকাশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। অর্থনৈতিক জ্ঞান কাজে লাগিয়ে কীভাবে মানুষের জীবনযাপনকে আরও উন্নত করা যায়, সেটাই আমরা শেখাতে চেষ্টা করি। অর্থনীতি হলো ভিত্তি; আর বিপণন, ব্যবস্থাপনা, আর্থিক সংস্থানের মতো বিষয়গুলো হলো এর শাখা-প্রশাখা। অর্থনীতি ঠিকঠাক বুঝতে পারলে এসব বিষয় বোঝা সহজ হয়ে যায়।

কোনো একটি দেশের অর্থনীতি কীভাবে কাজ করে ও করা উচিত, অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক খাতে কী ধরনের পরিবর্তন আনা যায়, স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠানগুলো দক্ষতার সঙ্গে কীভাবে পরিচালনা করা যায়, কীভাবে কম খরচে বেশি মুনাফা লাভ করা যায়—এ সম্পর্কে অর্থনীতির ছাত্রছাত্রীরা ধারণা পান। এ ছাড়া ব্যক্তিগতভাবে সীমিত উৎস দিয়ে নিজেদের ঘরোয়া বাজেট, খরচ ও আয়কে কীভাবে আরও উন্নত করা যায়, তাও জানা যায় অর্থনীতি পড়ে।

ভবিষ্যৎ কী?

বিশ্বে মৌলিক বিষয়গুলোর যেমন চাহিদা রয়েছে, অর্থনীতির চাহিদাটাও ঠিক সে রকমই। বর্তমানে বিশ্ব কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দিকে এগোচ্ছে। একটা সময় আসবে যখন খুব কমসংখ্যক ক্ষেত্রেই মানবিক বুদ্ধিমত্তার প্রয়োজন হবে। রোবট কোনো একটি বিষয় তার মধ্যে ধারণ করে নিলে, পরবর্তীকালে তা কাজে লাগিয়েই সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। সে সময় অনেক কিছুরই প্রয়োজন না থাকলেও একটি মৌলিক বিষয় হিসেবে অর্থনীতির চাহিদা থেকেই যাবে।

ধরুন, বিশ্বের সবচেয়ে অনুন্নত দেশে যদি কমপক্ষে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ও থাকে, তবে সেখানে অর্থনীতি বিভাগটি অবশ্যই থাকবে। অতএব অর্থনীতিতে পড়লে কাজের সুযোগ নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না। স্নাতক পর্যায়ে অর্থনীতিতে পড়ে পরবর্তীকালে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি করার সময় বিশেষায়িত দিকে যাওয়াই ভালো। কারণ এখন প্রায় সব বিষয়ই বিশেষায়িত হয়ে যাচ্ছে। তাই সেসব বিশেষায়ণ সম্পর্কে জানা না থাকলে পরবর্তীকালে সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। আমি যেমন স্নাতকে অর্থনীতি নিয়ে পড়লেও স্নাতকোত্তরে লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস থেকে ‘ইকোনমিকস অ্যান্ড সোশ্যাল পলিসি’ নিয়ে পড়েছি। যেটা অর্থনীতির বিশেষ ও স্বতন্ত্র একটি ক্ষেত্র। এ রকম আরও অনেক ক্ষেত্র রয়েছে, যেমন—অ্যাপ্লাইড ইকোনমিকস, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিকস, লেবার ইকোনমিকস ইত্যাদি।

ক্যারিয়ার কোথায়?

অর্থনীতি পড়ে কেউ যদি শিক্ষকতা করতে চান, তাহলে পিএইচডি করে নেওয়া ভালো। এ ছাড়া শিক্ষকতার পাশাপাশি গবেষণা করা যায়। সেটা একক গবেষণা হতে পারে, বা কোনো প্রতিষ্ঠানের হয়ে গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করা যেতে পারে। আমাদের দেশে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা আছে, যেমন: পিআরআই, সিপিডি (সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ), পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট ইত্যাদি। এ ছাড়া বহুজাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যাঁরা অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিয়ে কাজ করেন, যেমন: এডিবি (এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক), ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট ইত্যাদি। এসব প্রতিষ্ঠানেও একজন অর্থনীতিতে পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীর কাজের সুযোগ রয়েছে। বিশ্বের যেকোনো জায়গায় যেকোনো ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অর্থনীতির ছাত্রছাত্রীরা কাজের ক্ষেত্র খুঁজে পাবে।

কারা পড়বে?

অর্থনীতিতে পড়ার আগে প্রস্তুতির জন্য সব বিষয়েই যে ভালো দখল থাকতে হবে, তা কিন্তু নয়। আমি যখন পড়েছি, তখন সবচেয়ে বেশি কাজে লেগেছে গণিত ও ইংরেজির জ্ঞান। যেহেতু অর্থনীতির ভালো বইগুলো প্রায় সবই ইংরেজিতে লেখা, তাই ইংরেজিতে দখল থাকলে বিষয়গুলো সহজে রপ্ত করা যায়। আর যেহেতু অর্থনীতিতে পরিসংখ্যান ও অঙ্কের অনেক ব্যবহার রয়েছে তাই অঙ্কের ভিতটাও শক্ত থাকা দরকার। খুব যে ভালো হতে হবে তা-ও নয়। কিন্তু অঙ্ককে ভয় পেলে অর্থনীতি বিষয়টা বেছে না নেওয়াই ভালো।

সূত্র: প্রথম আলো

Sharing is caring!

Leave a Comment