চলো কৃষি পড়ি
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
ইতিহাস, বিজ্ঞান, সাহিত্য, প্রকৌশল…কত রকম বিষয় আছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। কোন বিষয়ে আমি পড়ব, সিদ্ধান্ত নেওয়াই কঠিন। কৃষিসংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়েও আজকাল অনেকে পড়াশোনা করছেন। ক্যারিয়ারে সফলও হচ্ছেন তারা।
কী পড়ানো হয়
ফসলের উৎপাদন, চাষপদ্ধতি, রোগবালাই নির্ণয় ও প্রতিরোধ, নতুন নতুন শস্যের জাত উন্নয়ন এবং সর্বোপরি পুষ্টিনিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে কৃষিতে বিভিন্ন বিষয় পড়ানো হয়। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি অনুষদের অধীনে কৃষিতে গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি দেওয়া হয়। এ অনুষদে রয়েছে ১৬টি বিভাগ। কৃষিতত্ত্ব, মৃত্তিকাবিজ্ঞান, কীটতত্ত্ব, উদ্যানতত্ত্ব, উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব, ফসল উদ্ভিদবিজ্ঞান, কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন, কৃষি সম্প্রসারণ, কৃষি রসায়ন, প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান, ফুড সেফটি ম্যানেজমেন্ট, বায়োটেকনোলজি, পরিবেশবিজ্ঞান, সিড সায়েন্স ও টেকনোলজি বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হয়। সুতরাং একটি ফসলের জন্ম থেকে ফলন ও জাত উন্নয়নে যত বিষয় জড়িত থাকতে পারে, প্রায় সবই পড়ানো হয় কৃষিসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে।
ক্যারিয়ার কোথায়
কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে সরকারি ও বেসরকারি অনেক ভালো ও প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানে চাকরি পাওয়া যায়। প্রতিবছর ভালো ফলের মাধ্যমে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হওয়ার সুযোগ থাকছে। কৃষি বিষয়ে পাঠদানের জন্য অনেকে কলেজেও শিক্ষকতা করা যায়। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, সার্ক অ্যাগ্রিকালচার সেন্টারসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ থাকছে। বিসিএস পরীক্ষায় কৃষি গ্র্যাজুয়েটরা টেকনিক্যাল ক্যাডারে বিশেষ সুযোগ পাচ্ছেন। তাঁরা উপজেলাগুলোতে কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন। সাধারণ ক্যাডারে কৃষিবিদদের সংখ্যাও লক্ষণীয়। এর পরই কৃষিবিদদের খুব পছন্দের জায়গা হলো সরকারি কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ তুলা গবেষণা ইনস্টিটিউট, মৃত্তিকা গবেষণা উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেওয়া যায়।
তা ছাড়া উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠানেও ক্যারিয়ার গড়া যায়। বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ একাডেমি ফর রুরাল ডেভেলপমেন্ট, তুলা বোর্ড, চা বোর্ড, পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা কাউন্সিলেও কৃষিবিদেরা সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন। অন্যান্য ব্যাংক তো বটেই, সরকারের বিশেষায়িত ব্যাংক যেমন, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে কৃষিপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকেন। এ ছাড়া সার কারখানা, চিনিকল, বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি, কীটনাশক তৈরির কারখানা, ব্র্যাক, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানিতেও কাজ করছেন কৃষিবিদেরা। এসিআই, অ্যাগ্রো মেটাল, সিনজেনটা, লালতীরসহ বিভিন্ন বেসরকারি গবেষণা ও বীজ উৎপাদন প্রতিষ্ঠানে ক্যারিয়ার সুযোগ আছে।
ভবিষ্যৎ কী
কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে রোল মডেল। ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে চতুর্থ, সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, আম উৎপাদনে সপ্তম। মৌসুমি ফল উৎপাদনে শীর্ষ ১০টি দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। তা ছাড়া সবজি, ফল, ফসলের জাত উন্নয়নে বিশ্বে বাংলাদেশ শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। সুতরাং কৃষি নিয়ে পড়াশোনা ও গবেষণার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রয়েছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জিত হলেও খাদ্যনিরাপত্তা (ফুড সেফটি) ও পুষ্টিনিরাপত্তায় আমরা অনেকটাই পিছিয়ে আছি। সুস্থ জীবনযাপনে বিষয়টি এখন বিশ্বে অনেক আলোচিত। তাই কৃষিপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন নতুন সুযোগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। ভেষজ ওষুধ উৎপাদনেও কৃষি গ্র্যাজুয়েটদের সম্ভাবনাময় পদচারণ শুরু হয়েছে। বেসরকারি বীজ উৎপাদন প্রতিষ্ঠান, কৃষি প্রশিক্ষণ প্রকল্পে যুক্ত থেকে নতুন নতুন ফসলের জাত উদ্ভাবনের অপার সুযোগ তো থাকছেই।
কারা পড়বেন
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে একটি বেসরকারি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে। কৃষি তাঁদেরই পড়া উচিত,
যাঁরা মাটি ও উদ্ভিদের সঙ্গে থাকতে চান। দেশে-বিদেশে গবেষণা করে নতুন জাত উদ্ভাবন, ফসলের প্রক্রিয়াজাত করে খাদ্যের মূল্যমান বৃদ্ধি, কৃষি বিপণন ও রপ্তানি কিংবা কৃষি উদ্যোক্তা হতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা কৃষি নিয়ে পড়তে পারেন।