ফ্যাশন শিল্পে ক্যারিয়ার
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
আধুনিক মানুষ অনেক বেশি ফ্যাশন সচেতন—এ তো জানা কথা। ফলে আধুনিক কর্মক্ষেত্র হিসেবে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির গুরুত্ব ও চাহিদা প্রতিনিয়তই বাড়ছে। আমাদের দেশে যদিও শুরুর দিকে এ ক্ষেত্রটি ছিল তুলনামূলক আনকোরা, এবং অধিকাংশ মানুষই এ সংক্রান্ত পেশাগুলোতে আসতেন অনেকটা শখের বশে; কিন্তু এখন এটি রীতিমতো মর্যাদাপূর্ণ ও সিরিয়াস কর্মক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। দেশে ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি সম্পৃক্ত বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়। তা ছাড়া নানাবিধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে করানো হচ্ছে কোর্স। এ ইন্ডাস্ট্রি যে মূলত তরুণ প্রজন্মকেই বেশি আকৃষ্ট করছে—সে কথা বলা বাহুল্য। কেননা, এখানে একদিকে যেমন রয়েছে নিজের সৌন্দর্যবোধ ও শিল্পরুচি প্রকাশের দুর্দান্ত সুযোগ, অন্যদিকে রয়েছে সম্মান ও অর্থ উপার্জনের নিশ্চয়তা।
মডেলের জাদু
ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পেশাটির নাম মডেলিং। এ পেশায় আসার জন্য তথাকথিত সুন্দর হওয়ার আবশ্যকতা নেই; তবে চেহারা হওয়া চাই ফটোজেনিক। শুরুতে ছিমছাম বডি শেপ না থাকলেও সমস্যা নেই, জিমের ট্রেইনার আর নিউট্রিশনিস্ট দেখিয়ে দেবেন পথ। তারপর চুল, স্কিন আর পোশাক দিয়ে গ্রুমিং করতে কতক্ষণ! এরপর ইন্ডাস্ট্রিতে ঢুকবেন কী করে? প্রথমেই ভালো ফটোগ্রাফারকে দিয়ে চোখ ধাঁধানো একটা পোর্টফোলিও বানিয়ে নিতে হবে। তারপর উপায় দুটি। নিজে চেষ্টা করা কিংবা কোনো প্ল্যাটফর্মের সাহায্য নেওয়া। প্ল্যাটফর্ম বলতে বিউটি কনটেস্ট। সেখানে একবার ঢুকে কয়েকটি রাউন্ড পেরিয়ে নিলে দেখবেন, মডেল কো-অর্ডিনেটর ও স্পন্সরদের জগতে আপনার নাম ছড়িয়ে পড়েছে। কনটেস্ট জিতুন আর না-ই জিতুন, মোবাইলে কিংবা ফেসবুকের ইনবক্সে অ্যাসাইনমেন্ট লাইন দিয়ে অপেক্ষা করবে! প্রথম রাস্তাটি কিন্তু নিজে করে নিতে হবে। অর্থাৎ ফ্যাশন হাউসগুলোয় ছবি পাঠাতে শুরু করুন। তবে পেশাদার মডেল হতে কিছু বিশেষ পোজ, র্যাম্পের ক্ষেত্রে ক্যাটওয়াকের চাল- এসব রপ্ত করা দরকার। এ জন্য ঢাকায় অনেক ক্র্যাশ কোর্স বা মডেলিং স্কুল পাবেন। পেতে পারেন অন্যান্য শহরেও।
ডিজাইনারের জার্নাল
ফ্যাশন ডিজাইনিং খুবই বড় একটি ক্ষেত্র। পোশাক ছাড়াও জুতো ও অ্যাক্সোসরি ডিজাইনিংয়ের ফিল্ডগুলো পড়ে এখানে। এ দুনিয়ায় আসতে গেলে সবার আগে প্রয়োজন টেক্সটাইল ডিজাইন, লেদার ডিজাইন, জেমস অ্যান্ড জুয়েলারি ডিজাইনিং বা নিটওয়্যার ডিজাইনে ব্যাচেলর ডিগ্রি। মনে রাখা দরকার, কাউকে শূন্য থেকে ডিজাইনার বানানো শিক্ষকদের কাজ নয়। তারা কেবল গাইড করতে পারেন। যিনি ডিজাইনার হওয়ার প্রতিভা রাখেন, তাদের কাজই প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। তাই কেবল জ্ঞ্ন্যামার দুনিয়ার প্রলোভনে নয়, যদি বিষয়টির প্রতি আগ্রহ থাকে, তাহলেই এ পথে পা বাড়ানো শ্রেয়।
দেশের নামি ফ্যাশন ডিজাইনিং ইনস্টিটিউটগুলো ফাইনাল ইয়ার ছাত্রদের জন্য ক্যাম্পাসিংয়ের বন্দোবস্ত করে থাকে। বেশিরভাগ নামি ডিজাইনারই ব্র্যান্ড বা ফ্যাশন হাউসগুলোয় জায়গা পেয়ে যান। তবে আরও বেশি উচ্চাকাগ্ধক্ষাযুক্ত পড়ুয়ারা মুখিয়ে থাকেন অ্যানুয়াল ডিজাইনিং কম্পিটিশন, বিভিন্ন ফেস্ট বা প্রদর্শনীর জন্য। কারণ সেখানে খ্যাতনামা ডিজাইনার বা স্বপ্নের ব্র্যান্ডের কর্তাব্যক্তিরা সশরীরে উপস্থিত থাকেন। তখন নিজের প্রতিভা দেখিয়ে উঠতি বয়সেই তাদের গুডবুকে ঢুকে পড়ার সুযোগ মেলে। এ ছাড়াও মিলে যেতে পারে ড্রিম ডিজাইনারের অধীনে ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ। পরে নিজস্ব ফ্যাশন বুটিক খোলার রাস্তা চওড়া হতে থাকবে।
স্টাইলিস্টের লিস্ট
বলা যেতে পারে, ‘স্টাইলিস্ট’ শব্দটি এ কর্মক্ষেত্রে নতুন ঢুকেছে। এটি অনেকটাই ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত হলেও, খানিকটা আলাদাও বটে। শুধু পোশাক-আশাক বা অ্যাক্সোসরিজ নয়, মডেল বা ক্লায়েন্টের সম্পূর্ণ লুকটি কেমন হবে, কীভাবে তিনি পোশাক পরবেন, পুরোটা ছক কষে, জামা-কাপড় পরিয়ে, শরীরের ভাষা পর্যন্ত স্থির করে দেওয়ার দায়িত্বটি পালন করেন একজন স্টাইলিস্ট।
মেকআপ আর্টিস্টের বাক্স
ফ্যাশন দুনিয়ার মেকআপ আর কেশবিন্যাস দুই-ই আলাদা; একটু নাটকীয়ও বটে! যতই দাবি করুক, বিউটিশিয়ান সংস্থাগুলো কিন্তু এখনও হাতে ধরে এ বিষয়টি শিখিয়ে দিতে পারে না। তাই প্রশিক্ষণের সঙ্গেই প্রতিদিন ম্যাগাজিন ও ইন্টারনেট ঘেঁটে নতুন ধরনের মেলোড্রামাটিক মেকআপ বা কেশসজ্জা নিয়ে নিজেকে আপডেট করে রাখা চাই। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন ইন্টারন্যাশনাল বিউটি একাডেমি যেসব স্পেশালাইজড কোর্স করায়, তার কয়েকটা বায়োডাটায় জুড়ে নিলে ক্যারিয়ারের পথে অনেকটা এগিয়ে থাকবেন আপনি।
ফটোগ্রাফার ও ক্লিক
ফ্যাশন ফটোগ্রাফির ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। একটি প্রফেশনাল ডিগ্রি তো প্রাথমিক শর্ত। আলোর ব্যবহার, পোজ, সৌন্দর্যশিকারি চোখ তৈরি করতে সেরা উপায় কোনো দিকপাল ফ্যাশন ফটোগ্রাফারের সাহচার্য। অর্থাৎ নিজের তোলা ছবি পাঠিয়ে ইন্টার্নশিপের জন্য আবেদন করতে থাকুন।
ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টে স্বাগতম
যেসব ইভেন্ট ফার্ম মূলত ফ্যাশন সংশ্নিষ্ট কাজগুলো করে থাকে, সেখানেও ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ রয়েছে আপনার। মডেল ও শো কো-অর্ডিনেটর, অ্যাঙ্কর, শো-ডিজাইনার [যার মাথা থেকে শোয়ের কনসেপ্ট বের হয়], কোরিওগ্রাফার, লাইটিং অ্যান্ড সাউন্ড এক্সপার্ট, সেট আর্কিটেক্ট- এসব পদে বাঁধা-ধরা চাকরি করতে পারেন, কিংবা ফ্রিলান্সিংও।
দমের দাম
ফ্যাশন আসলে যুগের কথা বলে। বলা ভালো, ফ্যাশন দেখে বোঝা যায় যুগের ভাষা ঠিক কী রকম। তাই এ যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ক্রমাগত বেড়ে চলেছে ফ্যাশন ডিজাইনিং ইন্ডাস্ট্রিতে দক্ষ জনশক্তির দাম। এটি একটি সৃজনশীল কর্মমাধ্যম। এখানে সারাক্ষণ প্রস্তুত রাখতে হয় নিজেকে। প্রয়োজনের মুহূর্তে শরীর ও মাথা নিংড়ে সেরাটা উজাড় করে যেতে হয়।
আরেকটি কথা মনে রাখা দরকার, ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করলে আপনার আশপাশে থাকবেন সৃষ্টিশীল নানা মানুষ। তাদের অনেকেই খুঁতখুঁতে হবেন; একটু ভুল হলেই আঘ্নেয়গিরির মতো ফেটে পড়তেও পারেন। তাদের সামলে চলা এই ইন্ডাস্ট্রিতে সাফল্য পাওয়ার অন্যতম হাতিয়ার। তাই থাকা চাই ম্যান ম্যানেজমেন্ট স্কিল।