শিপ বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ক্যারিয়ার

শিপ বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ক্যারিয়ার

  • ক্যারিয়ার ডেস্ক

ক্যারিয়ার নিয়ে যারা চিন্তিত কিংবা যারা নতুন পথে ক্যারিয়ার গড়তে চান তাদের কাছে চাকরির বাজারে শিপ বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং অনেকটা নতুন। তবে এটি বাংলাদেশের জন্য বেশ পুরনো! এই পেশার চাহিদা শুরু থেকেই লোভনীয়। এখানে যারা ক্যারিয়ার গড়েন তাদের খাটাখাটুনি অন্য আর দশটা পেশার চেয়ে কিছুটা বেশি হলেও মাস শেষে মোটা অঙ্কের টাকা পকেটে পুরতে পারেন শিপ বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়াররা। এজন্যই তরুণদের কাছে পেশাটার বেশ গুরুত্ব। অনেকে তো এই পেশাকে আপন করার স্বপ্ন দেখেন উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেই!

জলযান বা জাহাজের স্ট্রাকচার, নতুন ডিজাইন ও ডিজাইন ডেভেলপমেন্ট, নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত কাজগুলোই হচ্ছে শিপ বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারদের কাজ।

কাজের ধরন
এই আধুনিক সময়ে এসেও আপনাকে মেনে নিতে হবে, যোগাযোগের সবচেয়ে সহজ পথটাই হচ্ছে সাগর। এই পথ ধরে অনায়াসে পণ্য পৌঁছে দেওয়া যায় পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে, যা করা হয় জাহাজের মাধ্যমে। তাই এই জাহাজ বা শিপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই নিয়ে পৃথিবীব্যাপী প্রতিনিয়ত চলছে গবেষণা। পাল্টাচ্ছে এর স্ট্রাকচার। আর এই স্ট্রাকচারই হচ্ছে নির্মাণ শিল্পের সবচেয়ে বড় ও স্বয়ংসম্পূর্ণ। শিপ এবং বোট হচ্ছে জলপথের একমাত্র বাহন। নিত্যনতুন ডিজাইন, শিপ আপগ্রেড ও মেরামতের কাজই হচ্ছে একজন শিপ বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারের কাজ।

যত কাজ
শিপ বিল্ডিংয়ের কাজকে সাত ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- ডিজাইন, কনস্ট্রাকশন, প্লানিং, ওয়ার্কপ্রিয়র টু কিল লায়িং শিপ ইরেকশন, লঞ্চিং, ফাইনাল আউটফিটিং ও সি-ট্রায়ার। এই সাতটি ধাপেই কিন্তু জাহাজের ডিজাইন ইভালুয়েশন ও ক্যালকুলেশন, কনভারশন রিভল্ডিং, মডার্নাইজেশন, জাহাজ রিপেয়ারিংও শিপ বিল্ডিংয়ের আওতাভুক্ত।

বেতনভাতা
পড়া শেষ করে শিপ কনস্ট্রাকশন ফিল্ডের ‘প্রোডাকশন’, ‘প্ল্যানিং’, ‘কোয়ালিটি কনট্রোল’ এর যে কোনো বিভাগেই কাজ শুরু করতে পারেন। শিপ বিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের ধরনের ওপর বেতন নির্ধারিত হয়ে থাকে। সাধারণত ৩০-৪০ হাজার দিয়ে বেতন কাঠামো শুরু হলেও যারা তৈলাক্ত ও ভেজা জায়গায় কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করেন, স্বভাবতই তাদের বেতন কাঠামো অন্যদের চেয়ে আলাদা। তাদের চাহিদাও বেশি। বেতন থাকে অন্যদের চেয়ে বেশ ওপরে। আর নিজের অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা দিয়ে ৬ থেকে এক বছরের মধ্যে বেতন টেনে লাখের ঘরে নিয়ে যাওয়া যায় অনায়াসেই।

আপনাকে স্বাগতম
ইচ্ছা থাকলেও আপনি পারছেন না এই পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে। কারণ পড়াশোনায় প্রায় ইতি টেনে ফেলেছেন। তবু স্বপ্নটাকে থমকে দিতে চান না। বলি, আপনার স্বপ্নের বীজ বুনে দিতে পারেন পরিবারের ছোট সদস্যের মাঝে। সে যদি এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষা দিয়ে থাকে, তবে তাকে ভর্তি করিয়ে দিতে পারেন এখানে। সুযোগটা চাইলে আপনিও নিতে পারেন। কারণ এখানে আসতে হলে আপনাকে সদ্য এসএসসি শেষ না করলেও চলবে। যে কোনো সালে এসএসসি শেষ করে এখানে ভর্তি হতে পারেন। তারপর শান দিতে পারেন আপনার স্বপ্নে। তা ছাড়া এখানে ভর্তি হতে সায়েন্স, আর্টস এবং কমার্সের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। যে কোনো সাবজেক্টে পড়েই এখানে আসতে পারেন।

দক্ষতার দাম
মনে পড়ে টাইটানিকের কথা? পৃথিবী চমকে দেওয়া সেই জাহাজটাও কিন্তু বানিয়েছিলেন শিপ বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়াররা। জাহাজটি সাগরের গভীরে হারিয়ে যাওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত রাজ্যের কথা বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। কেউ কেউ দায়ী করছেন শিপ বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারদের। এই থেকে সতর্কতার বার্তা নিতে পারেন আপনিও। কাজে নামার আগে অবশ্যই নিজেকে দক্ষ করে পা বাড়াবেন। আপনি একজন জাহাজ নির্মাণ প্রকৌশলী।  এই জাহাজ তৈরি বা রিপেয়ারিংয়ের সময় যদি কোনো ভুল করেন তবে জাহাজে অবস্থিত জানমাল কখনোই নিরাপদে পৌঁছতে পারবে না। তাই একজন শিপ বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আপনাকে হতে হবে দক্ষ, জ্ঞানী ও বিচক্ষণ। চ্যালেঞ্জ নেওয়ার ক্ষমতাও থাকতে হবে আপনার।

প্রস্তুতি পর্ব
শিপ বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারদের হতে হয় পরিশ্রমী। পাশাপাশি তাদের পড়তে হয় বেসিক নলেজ অব শিপ, স্ট্রাকচারাল রিকয়ারমেন্ট, বেসিক অব রেজিস্ট্রান্স, শিপ ড্রয়িং এবং ক্যালকুলেশন, শিপ কনস্ট্রাকশন এবং ইঞ্জিনিয়ারিং, প্রোপালশন, শিপ সেমাশন, সি-ফিশিং, মেশিনারি ও সিস্টেম লে আউট, ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্টস, শিপ মেটাল এবং মেটাল ফরমিং, শিপ ডিজাইন, শিপ ওয়ার্কশপ, শিপ কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ফিটিংস, শিপ অক্সিলারি সিস্টেম অ্যান্ড মেশিনারি, ইলেকট্রিক মেশিনারি, শিপ স্টিয়ারিং অ্যান্ড পাম্পিং, মেরিন ইঞ্জিনস, মেরিটাইমস ল, শিপ সেফটি অ্যান্ড ফায়ার ফাইটিং, শিপ স্টিয়ারিং অ্যান্ড রাডারের মতো বিষয়-আশয়। আমাদের শিপ বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়াররা নাম কুড়িয়েছেন পৃথিবীজুড়ে। অনেক নামি কোম্পানি তাদের চাহিদা মেটানোর জন্য দক্ষ শিপ বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ার খোঁজে বাংলাদেশে। তাই এখানে ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন অনায়াসে। তবে নিজেকে খুব সহজেই বদলে নিতে পারেন পরিশ্রম ও দক্ষতা দিয়ে। এই পরিশ্রম ও দক্ষতা দেখিয়ে নিজেই প্রতিষ্ঠান খুলে বসতে পারেন। চাকরি দিতে পারেন অন্যদেরও।

Sharing is caring!

Leave a Comment