এসএসসির পর কোথায়, কোন গ্রুপে ভর্তি হবেন

এসএসসির পর কোথায়, কোন গ্রুপে ভর্তি হবেন

  • ক্যারিয়ার ডেস্ক

অতি সম্প্রতি এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। অল্পদিনের মধ্যেই শুরু হবে কলেজে ভর্তির প্রক্রিয়া। এখনই সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার। কে কোথায় ভর্তি হবেন, কোন গ্রুপে ভর্তি হবেন তা এখনই নির্বাচন করা জরুরি।  এই সময়ের সামান্য একটি ভুল সিদ্ধান্ত বয়ে আনতে পারে ক্যারিয়ার জীবনে বিপর্যয়। তাই সাবধান হোন, অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিন এবং বেছে নিন আপনার প্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং পড়ার প্রিয় বিষয়।

সাধারণ নাকি কারিগরি শিক্ষা?

এই ব্যবস্থার শিক্ষায় এসএসসি পাস করে একজন শিক্ষার্থী দুই বছরের এইচএসসি ও চার বছরের অনার্স কোর্স পাস করে মোট ছয় বছর পড়া শেষ করে চাকরির বাজারে প্রবেশের জন্য প্রস্তুতি নেন।

অন্যদিকে কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে এসএসসি পাসকৃত একজন শিক্ষার্থী সরাসরি চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা গ্রহণ করে সাধারণ শিক্ষার্থীর তুলনায় দুই বছর আগেই উপসহকারী প্রকৌশলী হিসেবে চাকরির বাজারে প্রবেশ করতে পারেন। কারিগরি কোর্সের শিক্ষার্থীরা হাতে-কলমে প্রশিক্ষিত হওয়ার পাশাপাশি ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাটাচমেন্টের মাধ্যমে সরাসরি বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিতে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পেয়ে থাকেন।

শুরুটা মাধ্যমিক থেকেই

ক্যারিয়ার প্ল্যানিং শুরু করা উচিত মাধ্যমিক বা তার আগে থেকেই। তখন থেকে ভাবা উচিত কোন ফিল্ডের ডিমান্ড ৪-৫ বছর পর অনেক ভাল থাকবে। সে ফিল্ডে যে কাজ করতে হবে, সেসব কাজে আগ্রহ আছে কিনা, কাজগুলো পছন্দ কি না। তারপর ভাবতে হবে সে কাজ করার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাতেও কিছু শেখানো হচ্ছে কি না। সে কাজ করতে হলে কী কী শেখা দরকার তা শিখতে হবে। তবে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো পছন্দ। অর্থাত যে বিষয়গুলো বা কাজগুলো বা যে লাইনের পড়ালেখা আপনার ভালো লাগে সেদিকেই যেতে হবে। কারো কথা শুনে বা চাপিয়ে দেয়া পথে গেলে আপনারও মানসিক শান্তি আসবে না এবং ভবিষ্যতে ভালো কিছু করাও মুশকিল হয়ে যাবে।

চলুন, দেখা যাক এসএসসির পর কোনদিকে কী কী আছে।

(১) এইচএসসি

(২) ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং

(৩) নার্সিং ও প্যারামেডিক্যাল ডিপ্লোমা

এইচএসসি

এসএসসি পাস করার পর প্রতিটি শিক্ষাথী তার ক্যারিয়ার প্রতিষ্ঠার জন্য ভালো কলেজে ভর্তি হতে চান। বিসিএস ক্যাডার হতে হলে এই ধাপ অতিক্রম করে যেতে হবে। সকল বিসিএস ক্যাডার কিন্তু এই এইচএসসি শেষ করে, গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করে, তারপর বিসিএস এ অংশগ্রহণ করেন। এইচএসসি দুই বছরের। এই এইচএসসিতে পর্যায়ে বাংলাদেশের ৯৫ শতাংশ ছাত্রছাত্রীরা ভর্তি হয়ে থাকেন।

এইচএসসি সম্পন্ন করার পর যা যা করতে পারবেন:

(ক) যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন। বিসিএস ক্যাডার হতে হলে এই ধাপ পার করতে হবে, তারপর গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করে বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন।

(খ) অনার্স ও ডিগ্রী করতে হলে এইচএসসি পাস করতে হবে অবশ্যই।

(গ) বিএসসি ইন নাসিং করতে পারবেন।

(ঘ) সরকারী ৯৫ শতাংশ চাকরির জন্য আবেদন করা যায়।

(ঙ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সাত কলেজ ভর্তির সুযোগ পাবেন। এ ছাড়াও আরো অনেক কিছু করার সুযোগ আছে। আপনারা চোখ-কান খোলা রাখলে সেসব সম্পর্কেও জানতে পারবেন।

এইচএসসিতে গ্রুপ পরিবর্তন

অনেকে জিজ্ঞেস করেন, আমি এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগ ছিলাম, এখন আমি মানবিক নিতে চাচ্ছি। এটা কী সম্ভব?

হ্যাঁ, এটা অবশ্যই সম্ভব। তবে তার আগে নিজের স্বপ্ন ঠিক করে নেওয়া দরকার। আপনার স্বপ্ন দেখার উপরই নির্ভর করবে আপনি কী হতে চান। স্বপ্নের পাশাপাশি আর একটি বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত। সেটি হচ্ছে সামর্থ। এইচএসসিতে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে হলে অধিকাংশক্ষেত্রেই প্রাইভেট বা কোচিং করতে হয়। আপনার সেই প্রাইভেট-কোচিং করার সামর্থ আছে কিনা ভেবে দেখুন। তারপর ভেবে দেখুন আপনি ফল ভালো করতে পারবেন কিসে? যদি মানবিকে ভালো ফল করতে পারবেন বলে আপনার আত্মবিশ্বাস থাকে তাহলে অবশ্যই মানবিক নিন। এক কথায় নিজের মেধা, যোগ্যতা, ভালো লাগা, আগ্রহ ও সামর্থ অনুযায়ী স্বপ্ন দেখুন।

ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং

বর্তমান বিশ্বে দক্ষ ও যোগ্য হয়ে উঠার জন্য প্রয়োজন সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত। ক্যারিয়ার গঠনের জন্য কর্মমুখী শিক্ষা নেয়াটা বর্তমানে খুবই নির্ভরযোগ্য সিদ্ধান্ত। তথ্য প্রযুক্তির এ যুগে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কর্মমুখী শিক্ষার কর্মপরিধি ব্যাপক ও বিস্তৃত। তাই কর্মমুখী শিক্ষা নিয়ে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে এসএসসির পরে ভর্তি হতে পারেন চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে।

যে বিষয়ে পড়তে পারেন: কারিগরি শিক্ষাবোর্ডে অধীনে সেমিস্টার ভিত্তিতে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর পড়ানো হয়। উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো হচ্ছে- সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রুনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং, আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ারিং, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং, এনভায়রনমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং, রিফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ার কন্ডিশনিং ইঞ্জিনিয়ারিং, ইন্সট্রুমেন্টশন অ্যান্ড প্রসেস কন্ট্রোল ইঞ্জিনিয়ারিং, টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং। এ বিষয়গুলোতে পড়ালেখা করে বসে থাকার সম্ভাবনা খুবই কম।

ভর্তির যোগ্যতা : কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে অধীনে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়তে চেয়ে এসএসসি, দাখিল বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। সরকারি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে ভর্তি জন্য আবেদন করতে চাইলে (গত বছরের শর্ত বিজ্ঞাপন অনুযায়ী) গণিত বা উচ্চতর গণিত বিষয়ে জিপিএ ৩.০০সহ কমপক্ষে জিপিএ ৩.৫০ পেয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে। এছাড়া বেসরকারি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে ভর্তির জন্য গণিতে জিপিএ ২.০০ পেলেই চলবে।

ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। কেননা, বর্তমান যুগে কারিগরি শিক্ষার পরিধি দিন দিন বাড়ছে। বাড়ছে কর্মক্ষেত্রের পরিধিও। বিশেষত ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সটি শিক্ষার্থীদের জন্যে আশীর্বাদস্বরূপ বলতে হয়। কেননা, এ কোর্সে পড়াশোনা করে বেকার থাকার সম্ভাবনা খুব কম। তাই এসএসসির পর চাইলে কোনো শিক্ষার্থী ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে পছন্দমতো বিষয়ে ভর্তি হতে পারে। এ কোর্সটি চার বছরমেয়াদী। একজন শিক্ষার্থী চারবছর পর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে চাকুরিতে ঢুকতে পারে ও বিএসসি করতে পারে এবং সহজে উচ্চ শিক্ষাগ্রহণ করার সুযোগ রয়েছে।

নার্সিং ও প্যারামেডিক্যাল ডিপ্লোমা

মেয়েদের জন্য নার্সিং পেশা অত্যন্ত সম্মানজনক। দেশে এখন প্রায় সব জেলা-উপজেলা শহরগুলোতেই সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিক গড়ে উঠেছে। ক্রমেই বেড়ে চলছে এসব হাসপাতালের সংখ্যা। তাই এসব প্রতিষ্ঠানে প্রতিবছরই নার্সের প্রয়োজন হয়। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে নার্স নিয়োগ করে বাংলাদেশ সরকারের সেবা পরিদপ্তর।

সচাইলে এ পেশায় আসতে পারেন আপনিও। এ পেশায় আসতে হলে এর ওপর ডিপ্লোমা–ইন–নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কোর্সটি করতে হবে। যাঁরা এ পেশায় আসতে চান, তাঁদের জন্য সুযোগ করে দিয়েছে নার্সিং ও মিডওয়াইফ অধিদপ্তর। দেশের মোট ৪৩টি সরকারি নার্সিং ইনস্টিটিউটে ২ হাজার ৫৮০টি আসনে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করা হয়। তাই এ কোর্সটি করে আপনিও এই সেবামূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারেন।

Sharing is caring!

Leave a Comment