সময়ের পেশা বিউটিশিয়ান

সময়ের পেশা বিউটিশিয়ান

রবিউল কমল : রূপচর্চার বিষয়টি আবহমান কাল ধরে আমাদের সংস্কৃতির সাথে মিশে থাকলেও সময়ের সাথে সাথে এর ধরণটা গেছে বদলে। আর সে কারণেই এখন বিউটিশিয়ানদের চাহিদা তৈরি হয়েছে প্রায় সব স্থানেই। শহর কিংবা গ্রাম, সব জায়গাতেই এখন রয়েছে বিউটিশিয়ানদের চাহিদা। আর তাই যারা বিউটিশিয়ানদের মধ্যেও একটু ব্যতিক্রমী করে নিজের ক্যারিয়ারকে গড়ে তুলতে চান, তাদের জন্য সুযোগ রয়েছে ভ্রাম্যমাণ বিউটিশিয়ান হয়ে ওঠার।


ভ্রাম্যমাণ বিউটিশিয়ানের ধারণাটি আমাদের জন্য খানিকটা নতুন। সাধারণত মানুষ এখন রূপচর্চার জন্য বিউটি পার্লারগুলোতেই প্রফেশনাল বিউটিশিয়ানদের শরণাপন্ন হয়ে থাকেন। তবে যাদের প্রফেশনাল বিউটিশিয়ানের দক্ষতা রয়েছে, তারা নির্দিষ্ট বিউটি পার্লারের উপর নির্ভর না হয়ে, একটি নির্দিষ্ট স্থানে থিতু না হয়েও পেশাগত দক্ষতার চর্চা করতে পারেন সকলের মাঝে এবং জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারেন নিজ কাজের ক্ষেত্রে। ভ্রাম্যমাণ বিউটিশিয়ানদের সবচেয়ে বড় সুবিধাটি হচ্ছে এর জন্য আপনাকে কেবল রূপচর্চায় অভিজ্ঞ হলেই চলবে। এর জন্য প্রয়োজন নেই দোকান ভাড়া, ডেকোরেশন, কর্মচারী ও আলাদা বিউটিশিয়ান কিংবা বড় পুঁজির ভাবনা।

আন্তরিকতা আর নিষ্ঠা থাকলে আপনার কাজের দক্ষতাই এনে দেবে সফলতা। আবার এই কাজের জন্য ধরাবাঁধা সময়ও নেই। যার অর্থ হচ্ছে, এই পেশাতে আপনি পুরোপুরি নিজের মতো করে কাজ করতে পারবেন। তবে একটা বিষয় লক্ষণীয়, কাজের দক্ষতা থাকতে হবে পুরো মাত্রায়।

যে যোগ্যতা ও দক্ষতা লাগবে :

ভ্রাম্যমাণ বিউটিশিয়ান হতে চাইলে আপনাকে রূপচর্চার প্রতিটি বিষয় জানা থাকতে হবে, থাকতে হবে ত্বক ও চুল সম্পর্কে ভালো মেডিক্যাল সেন্স। সময়ের চাহিদাটাকেও বুঝে চলতে হবে। পরিবেশ বুঝে পোশাক-পরিচ্ছদ, রং, উপস্থাপনা নিয়ে ভাবতে হবে। এসব বিষয়ে দক্ষ হয়ে ওঠার জন্য একাডেমিক পড়ালেখা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে এসএসসি উত্তীর্ণ হলে ভালো হয়। রূপচর্চাবিষয়ক কোর্স করতে গেলেও এসএসসি উত্তীর্ণ হতে হয়। ভ্রাম্যমাণ বিউটিশিয়ান হতে চাইলে আপনাকে রূপচর্চার গতানুগতিক সব বিষয়েই দক্ষ হতে হবে। রূপচর্চার বিষয়বস্তু গভীরভাবে জানতে হলে তাই বিভিন্ন ধরনের কোর্স করতে পারেন। আবার কোনো ভালো পার্লার থেকে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ নিয়েও নিতে পারেন। অনেক পার্লারেই ইন্টার্নশিপ বা এ জাতীয় সুযোগ থাকে। এগুলোও গ্রহণ করতেপারেন।

কোর্সের খবরাখবর ও খরচ : 

আমাদের দেশে রূপচর্চায় বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন মেয়াদের কোর্স করিয়ে থাকে। কোর্সের মেয়াদের উপরেই নির্ভর করে এসব কোর্সের খরচ। এই বিষয়ে রয়েছে ছয় মাস মেয়াদি বেসিক ফুল কোর্স, তিন বা আড়াই মাস মেয়াদি লং কোর্স ও এক মাস বা ১৫ দিন মেয়াদি কিছু শর্ট কোর্স। শর্ট কোর্সগুলোতে সাধারণত একটি নির্দিষ্ট বিষয়েই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আবার লং কোর্সগুলোতে পরস্পরের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ একাধিক বিষয় নিয়ে প্যাকেজ আকারে কয়েকটি আইটেম শেখানো হয়। আর বেসিক ফুল কোর্সের আওতায় মূলত সব ধরনের রূপচর্চার বিষয়গুলোই থাকে। বিউটিশিয়ান হতে চাইলে রূপচর্চার কোর্স করতে গেলে আপনাকে বেশিরভাগ কাজই করতে হবে হাতে-কলমে। ভালো প্রতিষ্ঠানগুলোতে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণই থাকে কোর্সের প্রায় ৭০ ভাগ। আর বাকি ৩০ ভাগ থাকে রূপচর্চার তাত্ত্বিক পড়ালেখা। তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক উভয় ক্ষেত্রেই উত্তীর্ণ হতে হবে সার্টিফিকেট পেতে হলে। প্রতিষ্ঠানভেদে কোর্সের খরচ কমবেশি হয়ে থাকে। তবে বেসিক ফুল কোর্সে ৫০,০০০ টাকা থেকে ১,২০,০০০ টাকা লাগে। লং কোর্সগুলোর খরচ ২০,০০০ টাকা থেকে ৬৫,০০০ টাকা। শর্ট কোর্সগুলো করা যাবে ৫,০০০ টাকা থেকে ২৫,০০০ টাকায়।

সাফল্য পেতে : 

প্রাথমিকভাবে ভ্রাম্যমাণ বিউটিশিয়ান হিসেবে নিজেকে পরিচিত করে তোলা গুরুত্বপূর্ণ। সেক্ষেত্রে প্রথমেই নিজের আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে নিজের এই প্রচারের কাজটা করে যেতে হবে। পরে পরিচিতি বাড়াতে পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে পারেন। বিভিন্ন এলাকায় লিফলেটও বিলি করতে পারেন। ভিজিটিং কার্ড তো থাকতেই হবে। যেখানেই যান না কেন, নিজের ভিজিটিং কার্ডটি বিতরণ করতে ভুলবেন না। তবে সাফল্যের জন্য সবচেয়ে বেশি লাগবে মানসস্মত সেবা এবং কাস্টমারের সাথে সুন্দর আচরণ।

যা যা লাগবে : 

আপনি যে ধরনের কাজ করবেন, তার সাথে সঙ্গতি রেখে প্রয়োজনীয় উপকরণ কিনে নিতেই হবে। শুরুতেই বাড়তি অনেক কিছু কেনার প্রয়োজন নেই। বিভিন্ন ধরনের মেকআপ, কনসিলার, ফেস পাউডার, গ্লসি পাউডার, শেড ও চোখের সাজ, ঠোঁটের সাজ, নখের সাজ, হেয়ার কাট, ফেসিয়াল, থ্রেডিং, মেনিকিউর, পেডিকিউর, ম্যাসেজ, স্পা, চুল রং করা, ব্লিচ, চুল কার্লি-স্ট্রেইটসহ রূপচর্চার অন্যান্য কাজের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ কিনে নিবেন। তবে উপকরণ যা কিনবেন, তা যেন ভালো ব্র্যান্ডের হয় তা খেয়াল রাখবেন। আর এগুলো কোনোভাবেই মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া চলবে না। শুরু থেকেই ভালো সেবা দিতে পারলে দেখবেন অল্পদিনের মধ্যে নানা জায়গা থেকে ডাক পেতে শুরু করেছেন।

Sharing is caring!

Leave a Comment