পেশা যখন কথা বলা
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
এই যুগে নাকি কথা বলাটাই সব, এফএম রেডিওর জনপ্রিয়তা এই কথাটাই বেশ জোর দিয়ে প্রমাণ করে। আট থেকে ৮০ এখন নতুন করে রেডিওতে মশগুল। এখন মুঠোফোনের ইয়ার ফোন কানে গুঁজলেই ভেসে আসতে থাকে আজকের দিনের পপুলার আর হট ফেভারিট স্টার আরজে গলাগুলো। বেতার তরঙ্গের বিভিন্ন এফএম রেডিও স্টেশনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা শ্রোতাদের মাতিয়ে রেখে স্টেশন আর শ্রোতাদের মাধ্যে যোগসূত্র রক্ষার কাজ করেন রেডিও জকি বা ‘কথা বন্ধু’। ছোট কথায় ‘আরজে’। বিভিন্ন বেসরকারি রেডিও স্টেশনের রমরমা সঙ্গে সঙ্গে রেডিও জকি এখন অন্যতম আকর্ষক পেশা।
শুধু কথার মালা গাঁথা!
রেডিও জকির কাজ গানের ফাঁকে ফাঁকে কথার পিঠে কথার মালা গাঁথা। তবে অতিকথন বা বাজে বকা নয়। বিনোদনের সঙ্গে দরকারি তথ্য শ্রোতাদের জানানো। যাকে বলে ‘ইনফোটেনমেন্ট’। স্টুডিওতে থাকে কম্পিউটার কনসোল ও মাইক্রোফোন। কনসোল অপারেশন করে গানের সিডি বাজাতে হয়। ফলে কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তিগত দিকটাও সামলাতে হয়। আবার শ্রোতারা বিরূপ সমালোচনা করলে ঠা-া মাথায় সামলাতে হয়। চ্যানেলের নির্ধারিত শ্রোতাদের চাহিদা ও জীবনশৈলীর ওপর নির্ভর করে অনুষ্ঠানের রূপরেখা তৈরি হয়। সমগ্র অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন রেডিও জকি। কিন্তু পুরো কাজটি কার্যনির্বাহী প্রযোজকের নির্দেশে হয়। হাড্ডাহাড্ডি প্রতিযোগিতার বাজারে বেসরকারি রেডিও স্টেশনগুলোর মূল লক্ষ্য নির্ধারিত শ্রোতাদের অনুষ্ঠান শুনতে বাধ্য করা, যাতে বিজ্ঞাপনদাতারা আকৃষ্ট হন।
আরজেতেই শেষ?
এফএম রেডিও স্টেশন যোগ্যতার ওপর ভিত্তি করে অন্যান্য পদের পদন্নোতি হয়। যেমন:
প্রডিউসর : অনুষ্ঠান সম্প্রচার পরিকল্পনার দায়িত্বে থাকেন। তার কাজ অনুষ্ঠান প্রযোজনা, স্ক্রিপ্ট তৈরি, কথোপকথনের বিষয় বাছাই করা।
মিউজিক ম্যানেজার : রেডিও জকি অনুষ্ঠানে কোন কোন গান বাজাবেন, কখন বাজাবেন, কতক্ষণ অন্তর সেই গান পুনঃপ্রচার করা হবে, এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন।
স্টেশন ম্যানেজার : স্টেশন পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকেন স্টেশন ম্যানেজার।
অন্য পেশায় যেতে পারেন : কণ্ঠস্বরের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে রেডিও জকি ছাড়াও ফ্রিল্যান্স অনুষ্ঠান সঞ্চালনা, টিভিতে ভয়েস ওভার দেওয়া, সিনেমা বা অ্যানিমেশন ফিল্ম ডাবিং করে ভালো রোজগার করা যায়।
টকিং স্টার হতে হলে
সাফল্যের রসায়নের জন্য ভালো কণ্ঠস্বর থাকা প্রয়োজন, কিন্তু তার মানে জলদগম্ভীর কিংবা কিন্নরী কণ্ঠী হওয়ার দরকার নেই। কণ্ঠস্বরে আবেগ ও নাটকীয়তা থাকতে হবে, যাতে শ্রোতা সহজে নিজের সঙ্গে মেলাতে পারে। সাজিয়ে-গুছিয়ে কথা বলার ক্ষমতা। নতুন মানুষের সঙ্গে আলাপ করার ক্ষমতা। মিউজিক সম্পর্কে ‘ডিটেল নলেজ’ থাকলে ভালো। সেন্স অব হিউমার ভালো হতে হবে। কথা বলায় কনভিন্সিং অ্যাটিটিউড থাকতে হবে। শ্রোতার বন্ধু হতে হবে। রেডিও ১:১ মাধ্যম, সে জন্য শ্রোতার সঙ্গে কথা বলার সময় বহুবচন অর্থাৎ আপনারা না বলে আপনি সম্বোধন করা হয়। আজকের দিনে আরজেকে হতে হয় অনেক বেশি সমসাময়িক, শ্রোতার পছন্দ বুঝতে হয়। উপস্থাপনার গুণে নিজের স্টেশনের ফ্রিকোয়েন্সিতে শ্রোতাদের আটকে রাখতে হয়। মাথায় রাখতে হবে সেই অনুষ্ঠানে শ্রোতা কারা কোন বয়সের। বয়স অনুযায়ী কথা বলার ভঙ্গিও বদলে যায়। অনেক ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট চিত্রনাট্য থাকে না। তাৎক্ষণিকভাবে কথার পিঠে কথা সাজিয়ে নিতে হয়। এক কথায় রেডিও জকি হলো কথার ‘জাদুকর’। কিন্তু কোন সময়ে কী কথা বলবেন, তার মাত্রাজ্ঞান থাকা দরকার। বিষয়ের ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য আনার জন্য বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনা চাই। নিজের কণ্ঠস্বর রেকর্ড করে শুনলে অনেক দোষ-ত্রুটি সংশোধন করা যায়। এটি একটি পারফর্মিং আর্ট। ভেতরে সুরের মাত্রাজ্ঞান না থাকলে যেমন কণ্ঠশিল্পী হওয়া যায় না, তেমনই সহজাত দক্ষতা না থাকলে ও ভালো ট্রেনিং নিলে কিছুটা উপকৃত হওয়া যায়।
হিসাব-নিকাশ
বর্তমানে বেশ কয়েকটি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট দেশে আরজে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস এবং কোনো বিষয়কে সুন্দরভাবে শব্দচয়নের মাধ্যমে উপস্থাপন করার যোগ্যতা থাকলে আরজে হতে আগ্রহীরা এফএম রেডিও স্টেশনে যোগাযোগ করতে পারেন। প্রাথমিকভাবে একজন রেডিও জকি পার্টটাইম এবং ফুলটাইম দুইভাবে কাজ করতে পারে। পার্টটাইম হিসেবে একজন আরজেকে তিন ঘণ্টা অনুষ্ঠান পরিচালনা করার লক্ষ্যে কমপক্ষে পাঁচ ঘণ্টা অফিস করতে হয়। আর ফুলটাইমের ক্ষেত্রে এই সময়সীমা ৮ ঘণ্টা থেকে তদূর্ধ্ব হয়ে থাকে। বেতন শুরুতে সাধারণত ১০ হাজার থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে কর্মদক্ষতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেতন-সম্মানীও বাড়াতে থাকে।
তৈরি তো?
যদি নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস থাকে : টকাটক কথা, ফাটাফট উত্তর ঝাটঝাট প্রশ্ন, স্যাটাস্যাটা রেফারেন্স দিয়ে শ্রোতাকে বিমোহিত করে রাখার ক্ষমতা। তাহলে দেরি কেন? কথা বলতে পারাটা একটা শিল্প। আর এটা যদি হয় নেশা থেকে পেশা তাহলে বলা যায়, এই চাকরির মন্দার বাজারে সোনায় সোহাগা।