জিডিএস: গ্রাফিক ডিজাইনে নতুন ক্ষেত্র
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
বর্তমান সময়ে কম্পিউটার-নির্ভর গ্রাফিক ডিজাইনের কাজটি অনেকেই করে থাকেন নানাভাবে। সাধারণত মুদ্রিত ও ওয়েব মাধ্যমে প্রকাশনাসহ নানা ধরনের কাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে গ্রাফিক ডিজাইন। গ্রাফিক ডিজাইন শুধু দেশের কাজেই সীমাবদ্ধ নয়, ইন্টারনেটের প্রসারতার এই যুগে এ কাজটি এখন দেশের বাইরেও করা যায়। অর্থাৎ দেশে বসেই দেশের বাইরের গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ করে নিজের পেশা গড়ে তোলা যায়। শুরুর দিকে এ খাতে কাজের ক্ষেত্র কম হলেও ধীরে ধীরে তা বাড়ছে। এখন এ ধরনের কাজ দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও করছে, যেখানে চাকরিও পাওয়া যায়।
গ্রাফিক ডিজাইন সার্ভিসেস
গ্রাফিক ডিজাইন সার্ভিসেস (জিডিএস) কাজটির বর্তমানে রয়েছে বেশ চাহিদা। মূলত গ্রাফিকসের নানা ধরনের কাজ জিডিএসের অন্তর্ভুক্ত। সাধারণভাবে জিডিএসের বিভিন্ন ধাপের কাজের মধ্যে সহজ কাজগুলো হচ্ছে নির্দিষ্ট সফটওয়্যারের মাধ্যমে ছবি সম্পাদনা, ছবি ঠিকঠাক করাসহ এমন কিছু, যা করার জন্য ওই সফটওয়্যারের ওপর দক্ষতাই যথেষ্ট। গণমাধ্যমের মধ্যে মুদ্রণ, ওয়েবসাইটসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রেই ব্যবহূত হচ্ছে এ ধরনের কাজ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমসহ কিংবা অন্যান্য ক্ষেত্রের প্রতিষ্ঠান এ কাজগুলো অন্য দেশ থেকে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে করিয়ে থাকে। যেসব দেশ এ কাজগুলো করে থাকে, তার মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে।
সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র
‘জিডিএস কাজের বর্তমানে রয়েছে যথেষ্ট সম্ভাবনা। গ্রাফিক ডিজাইনের কাজগুলো অনেক দিন ধরেই চলে আসছে। শুরুতে আমাদের দেশের বাজারে এ কাজটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ ছিল। তবে এখন তথ্যপ্রযুক্তি সেবা খাতের (আইটিইএস) আওতাভুক্ত হওয়ায় জিডিএসের ক্ষেত্রটা বেড়েছে আগের চেয়ে অনেক বেশি।’ জানালেন গ্রাফিক পিপল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমতিয়াজ এলাহী।
‘জিডিএসের নানা ধরনের কাজের মধ্যে রয়েছে ছবি সম্পাদনা (ক্লিপিং পাথ), ছবির দাগ দূর করা এবং ছবির বিভিন্ন ধরনের সম্পাদনা ও সংযুক্তি (ইমেজ এনহেসমেন্ট) ইত্যাদি। তুলনামূলকভাবে এ কাজগুলো সহজ হওয়ায় এর জন্য তেমন কোনো আলাদা সৃজনশীলতার প্রয়োজন নেই। আবার উচ্চশিক্ষারও দরকার হয় না।’ বললেন জানালা বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তামজিদ সিদ্দিক। তিনি জানান, এ কাজের জন্য অ্যাডবি ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর আর ইনডিজাইন সফটওয়্যারের কাজ জানাই যথেষ্ট। ‘কাজের ক্ষেত্রটা দেশে ও দেশের বাইরে দুই জায়গাতেই আছে এবং সাধারণত দেশের বাইরের কাজগুলো করার জন্য প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কাজ করার প্রয়োজন হয়।’ জানালেন তামজিদ সিদ্দিক।
যা যা লাগবে
তামজিদ সিদ্দিক বলেন, ‘জিডিএসে কাজ করার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা খুব বেশি যে লাগবে, তা নয়। সাধারণভাবে মাধ্যমিক পর্যায় শেষ করেও এ কাজে যুক্ত হওয়া যায়।তবে উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ হওয়ার পর এ কাজটি করা সহজ হয়। কারণ কাজের ক্ষেত্রে নানা সময়ে কিছু ইংরেজিতে দক্ষতা থাকলে ভালো হয়।’ প্রাথমিকভাবে নির্দিষ্ট সফটওয়্যারগুলোর কাজ জানা থাকলে প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পাওয়া সহজ হয়।এরপর পুনরায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় বলেও জানান তিনি।
‘জিডিএসের নানা ধাপে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের কাজ, যার মধ্যে সহজ একটি কাজ হচ্ছে ছবি সম্পাদনা। এ কাজের জন্য তাই যে সফটওয়্যারগুলো প্রয়োজন, সেগুলোর কাজ জানা এবং কোন ক্ষেত্রে কাজ করতে হবে, সেই নির্দেশনা অনুসরণ জানতে হয়।’ জানালেন ইমতিয়াজ এলাহী। ‘ইন্টারনেটের ওপর দখল থাকলে এ কাজ করতে অনেক সুবিধা হয়। এ সফটওয়্যারগুলোর কাজ শিখতে নির্দিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠান না থাকলেও নানা মাধ্যমে এ কাজগুলো শেখানো হয়। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও ইনস্টিটিউটে বর্তমানে রয়েছে মাল্টিমিডিয়ার ওপর প্রশিক্ষণ ও ডিগ্রির ব্যবস্থা। এসব প্রতিষ্ঠানে গ্রাফিক ডিজাইন শেখার মাধ্যমে পরবর্তী সময়ে নিজে নিজে গ্রাফিকসে গড়ে তোলা সম্ভব আপন দুনিয়া। তবে সব কিছুর পরও সহজ একটি পরামর্শ হচ্ছে, সফটওয়্যারের প্রাথমিক কাজগুলো দেখে কাজটি নিজে নিজে শিখতে পারলে ভালো হয়।’ বললেন তামজিদ সিদ্দিক।
নিজেই শুরু করুন
যাঁদের দক্ষতা রয়েছে এ ধরনের কাজে, তাঁরা নিজেরাই শুরু করতে পারেন এ কাজটি। তামজিদ সিদ্দিক জানান, ন্যূনতম ১০ জনের একটি দল নিয়ে নিজেই শুরু করতে পারেন এই কাজ। তবে এ ক্ষেত্রে দক্ষ জনবল ছাড়াও এ কাজের জন্য নিজস্ব অবকাঠামো এবং ইন্টারনেট সংযোগ জরুরি। তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনীয়সংখ্যক কম্পিউটারের পাশাপাশি ইন্টারনেট সংযোগ-সুবিধা থাকতে হবে। তবে সবার আগে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করা বিশেষভাবে জরুরি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ কাজের চাহিদাও বাড়ছে অনেক। শিক্ষার্থীরা নিজেদের পড়াশোনার পাশাপাশি খণ্ডকালীন কাজের সুযোগ হিসেবেও এ কাজটি করতে পারবেন। এ কাজের দক্ষতার জন্য একটু অনুশীলন আর কাজের প্রতি আগ্রহই যথেষ্ট। আর এই কাজের মাধ্যমে রয়েছে ভালো করার সুযোগ।’ বললেন পিক্স আর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুক রহমান। তিনি জানান, ধীরে ধীরে বাড়তে থাকা এ খাতে নানা ধরনের সুযোগ আসছে। আর জিডিএসকে পেশা হিসেবে নেওয়াটাও যথেষ্ট সম্ভাবনাময়।
এগিয়ে যাওয়ার পথে
নানা ধরনের কাজের মধ্যে পেশা গড়ার জন্য অন্যতম একটি উপায় হচ্ছে জিডিএস। দেশে কিংবা দেশের বাইরে কাজ করার ক্ষেত্র থাকায় এতে সহজে ভালো করা যাবে এবং নিজেকে গড়ে তোলা যাবে নিজের মতো করে। আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে এ কাজটি সহজে করা সম্ভব বলে যে কেউ নিজের আগ্রহের মাধ্যমে এ কাজে যুক্ত হতে পারেন। যথেষ্ট সম্ভাবনাময় এ খাতে কাজের ক্ষেত্রও বাড়ছে ধীরে ধীরে। এখন প্রয়োজন নিজেকে কাজের সঙ্গে তৈরি করে নেওয়া। তাহলে সহজেই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব।