হতে পারেন হিসাবরক্ষক
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
সিএ এবং এসিসিএ দুটোই প্রফেশনাল ডিগ্রি। পরিচালিত হয় ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব অ্যাকাউনটেন্টসের (আইএফসি) অধীনে। দুটোর কর্মক্ষেত্র এবং পড়াশোনা অ্যাকাউন্টস নিয়ে। সিএ পড়াশোনায় আর্টিক্যালশিপ ও থিউরিক্যাল দুটোই রয়েছে। এতে অন্য কোনো চাকরির সঙ্গে জড়িত থাকার সুযোগ নেই। কিন্তু এসিসিএ শুধু থিউরিক্যাল। যে কোনো বিষয়ের শিক্ষার্থীরা এই ডিগ্রি নিতে পারবেন। পাশাপাশি করা যায় অন্য চাকরিও। সিএ পরীক্ষায় পাসের কোনো নির্দিষ্ট নম্বর নেই, অন্যদিকে এসিসিএ পরীক্ষায় পাসের নির্দিষ্ট নম্বর আছে। সিএ পরীক্ষা হয় ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউনটেন্টের (আইসিবি) অধীনে, কিন্তু এসিসিএ পরীক্ষা হয় ব্রিটিশ কাউন্সিলের অধীনে। দুটোই আন্তর্জাতিক ডিগ্রি, তবে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সিএর চাহিদা বেশি হলেও বিশ্বব্যাপী তুলনামূলকভাবে এসিসিএর চাহিদা বেশি।
পড়তে চাইলে সিএ
দুই বছর ধরে সিএ পড়াশোনা করছেন ওয়াহিদুর রহমান। তার মতে, ‘এখানে পড়াশোনাটা একটু কঠিন। তবে মনোযোগী ও অধ্যবসায়ী হলে পড়া বুঝতে সমস্যা হয় না। সিএ সম্পন্ন করার পর বাংলাদেশ ছাড়াও বাইরের কোম্পানিতে ভালো বেতনে চাকরির সুযোগ আছে। ভালো ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করেই পড়তে আসা।’
সিএদের কাজের ক্ষেত্র
দেশি-বিদেশি ব্যাংক, বীমা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, এনজিও থেকে শুরু করে প্রায় সব প্রতিষ্ঠানে চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টের চাহিদা রয়েছে। কাজের ক্ষেত্র সম্পর্কে চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট ও ওয়ান ব্যাংকের অ্যাসিস্টেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট আহমেদ কুতুবুদ্দিন বলেন, সিএ শেষ করার পর চাকরি ছাড়াও নিজেই ফার্ম খুলে প্র্যাকটিস করতে পারেন। নিজে ফার্ম খুলে কাজ করাটা কিছুটা চ্যালেঞ্জিং, তবে স্বাধীনভাবে কাজের ইচ্ছাটা পূরণ হয়।
সিএদের ক্যারিয়ার সম্ভাবনা
চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্সিতে পড়াশোনা করলে চাকরির অভাব হয় না। সাধারণ আর্টিক্যালশিপ শেষ করে চাকরির ক্ষেত্রে একজন চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টের প্রাথমিক বেতন ১৮ থেকে ২২ হাজার টাকা হতে পারে। এছাড়া সিএ’র বিভিন্ন পার্ট পাস করার পর বেতন শুরুতে ২০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে এবং পুরো সিএ কোর্স সম্পন্ন করার পর শুরুতে বেতন ৭০ হাজার হতে পারে। বলছিলেন মাহবুব মহসিন অ্যান্ড কোম্পানির চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট ফাকের আহমেদ।
সিএতে ভর্তি যোগ্যতা
ডিগ্রি বা অনার্স অথবা মাস্টার্স শেষ করে সিএ পড়া শুরু করা যায়। তবে এসএসসি ও এইচএসসির পরও সিএ পড়া যায়। এ ক্ষেত্রে দুটিতেই এ প্লাস থাকতে হবে। ইংরেজি মাধ্যম পড়াশোনার ক্ষেত্রে ও লেভেলে কমপক্ষে দুই অথবা তিন সাবজেক্টে বি এবং এ লেভেলে কমপক্ষে দুই সাবজেক্টে বি এবং তিন সাবজেক্টে সি থাকতে হবে। ভর্তির যোগ্যতা সম্পর্কে চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট ও আমেরিকান লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ফিন্যান্সিয়াল কন্ট্রোলার আহমেদ এম আলাউদ্দিন বলেন, ‘এখানে আসলে কার কতটুকু শিক্ষাগত যোগ্যতা আছে তার চেয়ে বড় ব্যাপার হলো চেষ্টা ও পরিশ্রম। অধ্যবসায় থাকলে এইচএসসির পরও শুরু করা যেতে পারে। তবে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে সিএ পড়া শুরু করলে উত্তীর্ণের সম্ভাবনা বেশি।’
ভর্তি প্রক্রিয়া
ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউনটেন্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএবি) অধীনে প্রায় ২০০টির মতো তালিকাভুক্ত সিএ ফার্ম আছে। প্রথমেই তালিকাভুক্ত যে কোনো একটি কনসালট্যান্সি ফার্মে আর্টিক্যালশিপ নিতে হবে। এরপর ওই সিএ ফার্মের তত্ত্বাবধানে আইসিএবিতে ২৫ হাজার টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। সিএ কোর্সের মোট তিনটি লেভেল। প্রতিটিতে আলাদাভাবে টাকা জমা দিতে হবে। রেজিস্ট্রেশন ছাড়া সম্পূর্ণ কোর্সে প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হবে। গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে আর্টিক্যালশিপ নিলে সময় লাগবে তিন বছর আর এইচএসসি ও এ লেভেলের পর নিলে চার বছর।
পরীক্ষা কীভাবে কখন অনুষ্ঠিত হবে
বর্তমান সিলেবাস অনুযায়ী সিএ-তে তিনটি লেভেলে পরীক্ষা দিয়ে পাস করতে হয়। এক লেভেল সম্পূর্ণ না হলে পরের লেভেলে পরীক্ষা দেয়া যায় না। তিনটি লেভেল হলো-প্রফেশনাল নলেজ (পিকে), প্রফেশনাল অ্যাপলিকেশন (পিএ) এবং অ্যাডভান্স লেভেল (এএল)। প্রতিবছর ছয় মাস পর পর আইসিবিএর তত্ত্বাবধানে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পিকে এবং পিএ লেভেলে পাস করার জন্য একজন ছয়বার সুযোগ পায়। এ পরীক্ষায় সাবজেক্টওয়াইজ পাস করতে হয়। অর্থাৎ আগের পরীক্ষায় পাস করা বিষয়ে পরে পরীক্ষা দিতে হয় না। পিকে এবং পিএ-তে ৭০০ নম্বর করে এবং এএল-এতে ৩০০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হয়।
সদস্য পদ
তিনটি লেভেল সম্পূর্ণ করার পর একজন সিএ অ্যাসোসিয়েট মেম্বারশিপের জন্য আবেদন করতে পারে। অ্যাসোসিয়েট মেম্বারদের বলা হয় এসিএ। পরে প্রয়োজনীয় ক্রেডিট অর্জন করে এসিএ থেকে এফসিএ হওয়া যায়। এসিএ এবং এফসিএ-রা দেশে-বিদেশে বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে ফাইন্যান্স ম্যানেজার, চিফ ফাইন্যান্স অফিসারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। এসিএ এবং এফসিএ মিলে আইসিবিএর বর্তমান সদস্যসংখ্যা ১২০০-এর কিছু বেশি।