এই সময়ের শীর্ষ পেশা
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
প্রায় সকল শিক্ষার্থীই পড়ালেখা শেষ করে নয়, শিক্ষাজীবনেই বিভিন্ন পেশায় যুক্ত হতে চায়। কারণ এখন নিজেকে এগিয়ে রাখার একটা প্রতিযোগিতা চলে এসেছে সবার মধ্যেই। বিশেষ করে মাত্র পড়ালেখা শেষ করে যারা কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করছেন তাদের প্রতিযোগিতাটা অনেক বেশি। আর এই প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে বেশি এগিয়ে থাকেন তারা, যারা নতুন নতুন আইডিয়া তৈরি করতে পারেন এবং ব্যবহারিক কাজে দক্ষ। এক্ষেত্রে তরুণরা অনেক চ্যালেঞ্জিং এবং সৃজনশীল পেশাও বেছে নিতে শুরু করেছেন। আমাদের আজকের ক্যারিয়ারের মূল আয়োজন এই সময়ের তরুণ-তরুণীদের পছন্দের পেশাগুলো, যেসব পেশায় তারা নিজেদের মেধা খাটানোর জায়গাও খুঁজে পাবেন এবং কাজটাকে উপভোগও করবেন।
ব্যাংকিং অ্যান্ড ফিন্যান্স
বর্তমানে চাকরির বাজারে ভালো অবস্থানে রয়েছে ব্যাংকিং সেক্টর। সদ্য শিক্ষাজীবন শেষ করা তরুণ-তরুণীদের পছন্দের প্রথম কাতারে রয়েছে এই পেশা। কারণ এই পেশাটিকে সবাই চিন্তামুক্ত একটি পেশা হিসেবেই মনে করেন এবং এর ভবিষ্যতও অনেক ভালো। ব্যাংকিং খাতের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এই খাতে ক্যারিয়ারকে অনেক বেশি নিরাপদ মনে করা হয়। ব্যাংকিং সেক্টরে প্রাইভেট ব্যাংকগুলো প্রবেশ করায় এই পেশায় তরুণদের সুযোগ দিনে দিনে বাড়ছে। প্রাইভেট ব্যাংকগুলোর সেবার মান সরকারি ব্যাংকের তুলনায় ভালো বলে গ্রাহকসংখ্যাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই চাহিদার সঙ্গে তাল মেলাতে বাড়ছে বেসরকারি ব্যাংকের নতুন শাখা। সেইসঙ্গে সেবার মান উন্নত করতে প্রয়োজন পড়ছে অধিক কর্মীর। আর ভালো জনশক্তি সংগ্রহের জন্য ব্যাংকিং সেক্টরে কাজের ভালো পরিবেশের সঙ্গে রয়েছে ভালো বেতন কাঠামো। তাই এই পেশার জন্য নিজেকে গড়ে তুলতে আগ্রহী হয়ে উঠছে তরুণরা। ব্যাংকের নিয়োগে বিভিন্ন পদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন যোগ্যতা চাওয়া হলেও এমবিএ/এমবিএম/পোস্ট গ্র্যাজুয়েট/সিএ ডিগ্রিসহ বিভিন্ন ডিগ্রিধারীদের প্রাধান্য দেওয়া হয়ে থাকে।
টেলিকম সেক্টর
প্রযুক্তির উত্কর্ষের সাথে বাড়ছে এর ব্যবহার। বিশেষ করে ইন্টারনেটকে হাতের মুঠোয় এনে দিতে টেলিকম খাতের প্রসার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আর এজন্য এই খাতকে এগিয়ে নিতে প্রয়োজন পড়ছে দক্ষ কর্মীবাহিনী। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ক্যারিয়ার গড়তে এই খাতকেই বেছে নিচ্ছেন তরুণরা। এই খাতে ক্যারিয়ার গড়লে একজন কর্মী অনেক সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। বেতন ও কাজের পরিবেশও ভালো। টেলিকমিউনিকেশনে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে গ্র্যাজুয়েটসহ নেটওয়ার্কিং, ইলেকট্রিক্যাল, মেকানিক্যাল, কম্পিউটার ও টেলিকমিউনিকেশন বিষয়ে একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড থাকতে হবে। পাশাপাশি এ সেক্টরের জন্য নিজেকে গড়তে হবে স্মার্ট ও রুচিশীলভাবে। হতে হবে দক্ষ ও প্রগতিশীল। থাকতে হবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা। এখানে পুঁথিগত বিদ্যা আর নিজের ব্যক্তিগত দক্ষতার সমন্বয়ে যে কেউ গড়তে পারেন নিজের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ।
ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড আর্কিটেক্ট
পছন্দের পেশা হিসেবে ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়টির জনপ্রিয়তা নতুন কিছু নয়। সুদীর্ঘদিন ধরেই ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে আগ্রহী মানুষের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। এখনকার তরুণদের কাছেও ইঞ্জিনিয়ারিং বা প্রকৌশল একইরকম আকর্ষণীয় পেশা। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পাশাপাশি বর্তমানে স্থাপত্য বা আর্কিটেক্টও তরুণদের পছন্দের তালিকার শুরুর দিকেই স্থান করে নিয়েছে। ইঞ্জিনিয়ার এবং আর্কিটেক্টদের ক্যারিয়ারের স্থিতিশীলতা যেমন অন্য অনেক পেশা থেকে বেশি, তেমনি এসব পেশায় সামাজিক মান-মর্যাদাও ঈর্ষণীয়। সে কারণেই তরুণরা এখন এই দুইটি খাতের দিকে অনেক বেশি মনোযোগী। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রয়েছে ইঞ্জিনিয়ারিং এবং আর্কিটেকচার পড়ার সুযোগ। সেক্ষেত্রে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বেশকিছু ভাগ রয়েছে। এর মধ্যে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিং, নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ারিং, পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং উল্লেখযোগ্য। আর আর্কিটেকচারের মূল বিষয় একটি হলেও এই বিষয়ে পেশা গড়ারও বিভিন্ন খাত রয়েছে। কেউ কেবল বিল্ডিং ডিজাইনে, কেউ বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা ডিজাইনে, কেউ ইন্টেরিয়র ডিজাইনে নিজেদের ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। উভয় ক্ষেত্রেই ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে শুরুতেই এসব বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করতে হবে। পরে দরকারমতো এমবিএ, মাস্টার্স, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা করার সুযোগও রয়েছে।
সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং
এই সময়ের চ্যালেঞ্জিং অথচ সম্ভাবনাময় একটি খাত হলো সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং। যারা নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে পছন্দ করেন তাদের জন্য সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং উপযুক্ত স্থান। পণ্য বাজারজাত করতে প্রচুর সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং কর্মীর প্রয়োজন। যদিও এক সময় সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং একই ডিপার্টমেন্ট ছিল কিন্তু বর্তমানে সেলস ও মার্কেটিং আলাদা আলাদা ডিপার্টমেন্ট ধরা হয়। বিশ্বে যত ধরনের পণ্য রয়েছে, তার সবগুলোর জন্যই দরকার এই দুই বিভাগ। দেশীয় কোম্পানির পাশাপাশি বিদেশি অনেক কোম্পানিও বাংলাদেশে তাদের পণ্য বাজারজাত করছে। ফলে বাড়ছে এ ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান। তাই এসব বিভাগে প্রচুর দক্ষ লোকবল প্রয়োজন হচ্ছে। এ সেক্টরে চাকরি পাওয়ার জন্য সাধারণত বিবিএ, এমবিএ কিংবা মার্কেটিং, ফিন্যান্স ও হিসাববিজ্ঞানে স্নাতক হতে হয়।
মেডিকেল ও ফার্মাসিউটিক্যালস
উন্নতবিশ্বের বাজারে বাংলাদেশের ঔষধ নিজের জায়গা করে নিয়েছে। দেশের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে ঔষধ শিল্পের বিস্তার ঘটেছে। এই সেক্টরে কাজের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো মাসিক নির্দিষ্ট বেতনের পাশাপাশি টার্গেট পূরণের ওপর অতিরিক্ত টাকা দেওয়া হয়। বর্তমানে অনেকেই ডিগ্রি পাস করে এ সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়ে তুলছে। কাজের ক্ষেত্র অনেক বড় হওয়ায় এ সেক্টরে চাকরি পেতে তেমন কষ্ট পোহাতে হয় না। সেলসম্যান থেকে শুরু করে রিজিওন্যাল ম্যানেজার পর্যন্ত খুব সহজেই পাড়ি দেওয়া যায়। তবে তার জন্য থাকতে হবে অধ্যবসায় ও ইচ্ছা। পরিশ্রমীরা এ ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে যায়। মূলত বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদেরই নেওয়া হয় এই পেশায়। তবে ফার্মাসিউটিক্যালের টেকনিক্যাল কাজের জন্য ফার্মেসি বা মাইক্রোবায়োলজিতে ব্যাকগ্রাউন্ড থাকতে হবে। ফার্মাসিউটিক্যালসের সাথে সাথে মেডিকেল সায়েন্স বা সোজা কথায় ডাক্তার বরাবরই আকর্ষণীয় একটি পেশা। এমবিবিএস ডিগ্রি নেওয়ার পর বিশেষায়িত ডিগ্রি লাভ করলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হিসেবে পসার বাড়াতে বেগ পেতে হবে না।