অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ক্যারিয়ার

অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ক্যারিয়ার

  • ক্যারিয়ার ডেস্ক

আব্দুন নুর তুষার। নিজের জাত চিনিয়েছেন বিতর্ক, অনুষ্ঠান উপস্থাপনা, লেখালেখিসহ ক্রিয়েটিভ নানা অঙ্গনে। পড়াশোনা করেছেন ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল ও কলেজে এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজে। চাকরি সূত্রে যুক্ত হয়েছিলেন হাইপারটেনশন সেন্টার, ইউএসএইড-এর বেসিকস প্রকল্পসহ সরকারি-বেসরকারি বড় বড় প্রকল্প ও প্রজেক্টে। সরকারি চাকরিও করেছেন কিছুদিন। নিজের ক্রিয়েটিভ পরিচয়কে প্রাধান্য দিয়ে নাম কুড়িয়েছেন টেলিভিশন অনুষ্ঠান নির্মাণ ও উপস্থাপনার মাধ্যমে। বর্তমানে যুক্ত আছেন সম্প্রচারের অপেক্ষায় থাকা নাগরিক টেলিভিশনের চিফ অপারেটিং অফিসার, সিইও হিসেবে। উপস্থাপনার নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন দেশসেরা এ উপস্থাপক।


: এক সময়ের জনপ্রিয় বিতার্কিক ছিলেন আপনি, শিক্ষার্থী অবস্থা থেকেই এখনও নিজেকে যুক্ত রেখেছেন বিতর্কসহ ক্রিয়েটিভ নানা অঙ্গনে, উপস্থাপনা ক্যারিয়ারে আপনার এসব অভিজ্ঞতা কতটা কাজে দিয়েছে?

আব্দুন নুর তুষার : অবশ্যই, খুবই কাজে দিয়েছে। আজকের আব্দুন নুর তুষার ওই সময়ের সেরা ডিবেটরেরই একটা প্রতিকৃতি। ডিবেটে আমি ছিলাম চ্যাম্পিয়ন। ছাত্রজীবনে বিতর্ক চর্চা করতে করতে আমি বাংলাদেশ থেকে ওয়ার্ল্ড ডিবেটেও অংশগ্রহণ করি। যেটা আমাকে দেশ-বিশ্ব-সমাজ-সংস্কৃতি ও রাজনীতি সম্পর্কে জানতে, বুঝতে শিখিয়েছে। উপস্থাপনার মূল শিক্ষাটা তো ডিবেট থেকেই আসা।

: ডিবেটর নাকি প্রেজেন্টার; কোন পরিচয়ে আপনাকে মানুষ সবচেয়ে বেশি চিনতে পারে?

আব্দুন নুর তুষার : দু’টোতেই। কেননা আমি বিতর্ক করে যেমন সবার ভালোবাসা পেয়েছি; ঠিক তেমনি উপস্থাপনায়ও রেসপন্স পেয়েছি। এক কথায় দুটোতেই সবার কাছে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছি, এখনও পাচ্ছি। তাই আমার বিশ্বাস, আমি সব জায়গাতেই সমান জনপ্রিয় এবং পারদর্শী।

: উপস্থাপক হতে গেলে বিতার্কিক হওয়াটা কতটা দরকার বলে আপনি মনে করেন?

আব্দুন নুর তুষার : না, বিষয়টা এমন না যে, উপস্থাপক হতে গেলে তাকে বিতার্কিক হতেই হবে। বরং আমি মনে করি, কারও যদি জানাশোনা ভালো থাকে, সে যে কাজই করুক, সেখানেই ভালো করতে পারবে।

: একজন অনুষ্ঠান উপস্থাপকের কি কি গুণ থাকা অপরিহার্য বলে মনে করেন?

আবদুন নূর তুষার_989আব্দুন নুর তুষার : একজন উপস্থাপক অবশ্যই একজন ভালো মানুষ হবেন। তিনি অনুষ্ঠানের কনটেন্ট সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখবেন। অনুষ্ঠান নির্মাণসহ প্রযোজনার বিষয়গুলোতে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারলে ভালো হয়। সেটা সম্ভব না হলে, যে অনুষ্ঠান বা যে বিষয়ে অনুষ্ঠান করবেন, অবশ্যই সে বিষয়ে নিজের নলেজ লেভেলটাকে বাড়াতে হবে। আর শুদ্ধ, সঠিক উচ্চারণ ও ভাষা ব্যবহার তো রয়েছেই। আর সবসময় অকোকিউ বা স্ক্রিপ্ট ফলো না করে, নিজের থেকে কিছু বলার বা প্রেজেন্ট করার ক্ষমতাও থাকতে হবে।

: সংবাদ উপস্থাপকেরও কি ঠিক একই গুণ থাকা প্রয়োজন?

আব্দুন নুর তুষার : এসব গুণ থাকার পাশাপাশি একজন সংবাদ উপস্থাপককে অবশ্যই নিউজ মানে সংবাদবিষয়ক জ্ঞান এক কথায় সংবাদের খুঁটিনাটি এবং চারপাশে ঘটে যাওয়া বিষয়ে খোঁজখবর রাখতে হবে।

: সংবাদ বা প্রোগ্রাম উপস্থাপকের জন্য পোশাক-পরিচ্ছেদ কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

আব্দুন নুর তুষার : খুবই ভালো প্রশ্ন করেছেন আপনি। বর্তমানে অনেককেই দেখি, বাংলা কালচারাল বিশেষ করে আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে রিপ্রেজেন্ট করছে এমন অনুষ্ঠান- অথচ কেমন যেন তার পোশাক বা অ্যাপিয়ারেন্স ঠিক ওই বিষয়টির সঙ্গে যাচ্ছে না।

তাই আমি বলব, অবশ্যই একজন উপস্থাপক, সে নিউজ বা প্রোগ্রাম, যা-ই হোক না কেন, তাকে অবশ্যই পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রে খুবই সচেতন হতে হবে। নতুবা দর্শক কিন্তু আপনাকে নিতে পারবে না। আর সংবাদ উপস্থাপককেও এজন্য নিউজ পড়তে আসার আগে আজকের চলমান নিউজ বা ব্রেকিং ইস্যুগুলো দেখে ঘর থেকে বের হতে হবে; নতুবা কোনো বড় দুর্ঘটনা ঘটে গেলে বা আপনি আগে থেকে চকমকা ড্রেস পরে আসার অভিপ্রায় থাকলেও, সেটা পরিবর্তন করে শোকের পোশাক পরিধানের প্রস্তুতি নিয়ে অফিসে আসতে হবে। নতুবা বিষয়টি খাপছাড়া খাপছাড়া লাগবে।

: বাংলার সঙ্গে ইংরেজি বা ভাষার মিশেলে উপস্থাপনা নিয়ে আপনার ভাবনা-

আব্দুন নুর তুষার : এমন বাংলিশ উপস্থাপনা আমি একেবারেই নিতে পারি না। আমি মনে করি একজনের কেবল শব্দ ভাণ্ডারের অপর্যাপ্ততা এবং অবস্থা ও সময়ানুযায়ী শব্দ ব্যবহারের অদক্ষতাই এমন জগাখিচুরি টাইপের উপস্থাপনার জন্য দায়ী।

: দেশে এত এত চ্যানেল, অনুষ্ঠান, তারপরও ভালো মানের উপস্থাপক তৈরি হচ্ছে না কেন?

আব্দুন নুর তুষার : না, আমি বলব না যে দেশে ভালো মানের প্রেজেন্টার একেবারেই নাই। এখনও দেশে বহু ভালো মানের প্রেজেন্টার রয়েছে। তবে সামনের দিনগুলোতে ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড অর্জনে আমাদের আরও কাজ করতে হবে। সেজন্য এ পেশায় জড়িতদের আরও প্রফেশনাল হতে হবে। আসলাম আর অটোকিউ দেখে অনুষ্ঠান উপস্থাপন করে চলে গেলাম- এমনটা করে ভালো উপস্থাপক হওয়া সম্ভব না। প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে। যতটা সম্ভব জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে হবে। দেশ এবং বিশ্বসেরা প্রেজেন্টারদের ফলো করাও যেতে পারে।

: দেখা যায়, কিছুদিন ধরে গান, অভিনয় বা মিডিয়ায় কাজ করা শুরু করেছেন, এমন একজন হঠাৎ করে বনে যান উপস্থাপক, আবার তাকেই দেখা যায় বিচারকের ভূমিকায়ও, আবার কিছুদিন পর হারিয়েও যান; বিষয়টি নিয়ে আপনার ভাবনা-

আব্দুন নুর তুষার : হ্যাঁ, এটা ঠিক সেলিব্রেটি হয়ে গেলে তিনি তার লাইনের বা বিষয়বস্তুর সঙ্গে যায় এমন কিছুর সঙ্গে তিনি নানা রূপে স্ক্রিনে হাজির হতেই পারেন। যেমন আমরা অমিতাভ বচ্চনকে ‘কোন বনে গা ক্রোড়পতি’ অনুষ্ঠানের উপস্থাপক হিসেবে দেখতে পাই। তবে কথা হচ্ছে আমাদের দেশে সেটা কতটা যৌক্তিভাবে হচ্ছে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, তিনি তার সেক্টরেই এখনও ততটা সফলতা বা সার্থকতাই দেখাতে পারলেন না, অথচ অন্যসব নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরেন। যার দরুণ- তিনি নিজের লাইনেও যেমন মেলে ধরতে ব্যর্থ হন, ঠিক তেমনি মিডিয়ার অন্য লাইন বিশেষ করে উপস্থাপনায় এলেও কিছুদিন পর আর দেখা যায় না।

: প্রেজেন্টেশনের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ এককথায় জেন্ডার ইস্যু বা বয়সটাকে আপনি কীভাবে দেখেন?

আব্দুন নুর তুষার : আমার কাছে জেন্ডার এবং বয়স কোনো ম্যাটার করে না। আমি বলব, যাকেই অনুষ্ঠানের হটসিটে বসানো হোক, তার পুরো বিষয় যেন বিষয়বস্তুর সঙ্গে যায়। তাতে তাকে যেভাবে, যে বয়স বা জেন্ডারের দরকার, সেভাবেই নেয়া যেতে পারে। তবে অবশ্যই তাকে যোগ্য, দক্ষ ও ওই বিষয়টির সঙ্গে যুৎসই, এমন কাউকে বসানো উচিত। তা হতে পারে ছেলে, মেয়ে বা যে কোনো বয়সের। বিশেষ কোনো বয়স বা জেন্ডারের ওপর দুর্বলতা উপস্থাপনা শিল্পকে নষ্ট করবে বৈকি!

: সব মিলিয়ে উপস্থাপনা বিষয়টি নিয়ে আপনার অভিমত-

আব্দুন নুর তুষার : সময় এসেছে সামনে এগিয়ে যাওয়ার। দেশে এখন অনেক মিডিয়া। এ পেশায় এখন অনেক যোগ্য এবং শিক্ষিত লোক কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। তাই আমরা যারা উপস্থাপনা সংশ্লিষ্ট কাজে জড়িত হতে চাই, তারা যেন ভালোবেসে যেমন কাজটিতে এসেছি, ঠিক তেমনি যেন পেশাটিতে সফল হতে পরিশ্রম করতেও তৎপর থাকি। মনে রাখতে হবে, ব্যক্তি বিশেষের আলসেমিতে প্রেজেন্টেশন যে একটা আর্ট- সেটা যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়। তাহলেই একজন গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে আমি সবচেয়ে খুশি হব।

: আমাদের সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

আব্দুন নুর তুষার : আপনাকেও ধন্যবাদ।

সূত্র: যুগান্তরfavicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment