সামাজিক বিজ্ঞানে উচ্চশিক্ষা
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
জাতিসংঘ ও এর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোয় চাকরির স্বপ্ন থাকে অনেক শিক্ষার্থীর। ইউনিসেফ, ইউএনডিপি, ইউএনএইচসিআর-এই নামগুলো কেবল স্বপ্নপূরণ নয়, সাথে দারুণ ক্যারিয়ারের আশ্বাসও দেয়। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রায় সব কাজই উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন সম্পর্কিত। নির্দিষ্ট দেশভিত্তিক উন্নয়নের সাথে সাথে এসব বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট এলাকাভিত্তিক উন্নয়নের দিকেও মনোযোগী। এসব প্রতিষ্ঠানে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে উন্নয়ন প্রকল্প এবং এর বাস্তবায়নে নিজেকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এ জন্য সামাজিক বিজ্ঞানে পড়ালেখা করা অনেকটাই এগিয়ে দিতে পারে আপনাকে।
সামাজিক বিজ্ঞানে ক্যারিয়ার
সামাজিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার মধ্যে অর্থনীতি, উন্নয়ন অধ্যয়ন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, সমাজবিজ্ঞান, নৃবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, জনসংখ্যা বিজ্ঞান, লোকপ্রশাসন, অপরাধ বিজ্ঞান উল্লেখযোগ্য। সব শাখাতেই বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সমাজ এবং এর বিভিন্ন সমস্যা অধ্যয়ন করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মোহাম্মদ তারেক হাসানের মতে, যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নের জন্য মানুষের আচরণগত পরিবর্তনের দিকে নজর দেওয়া দরকার। উন্নয়ন প্রকল্প এবং এর বাস্তবায়নের ওপর মানুষের আচরণগত পরিবর্তন বড় ভূমিকা রাখে। সামাজিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় বিভিন্নভাবে এই বিষয়টিকে যাচাই করা হয়। যেমন সমাজবিজ্ঞান নাগরিক সমাজ অধ্যয়ন করে, নৃবিজ্ঞান ছোট অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র আকারের সমাজ অধ্যয়ন করে, অর্থনীতি সমাজের অর্থনৈতিক কাঠামো অধ্যয়ন করে থাকে। একটি সমাজ বা সমাজগোষ্ঠীর সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য সামাজিক বিজ্ঞানের সব কটি শাখাকেই একত্রে কাজ করতে হয়। আর কেউ যদি সমাজের উন্নয়নে প্রত্যক্ষভাবে অবদান রাখতে চায়, তার জন্য সামাজিক বিজ্ঞানের কোনো একটি বিষয় হতে পারে প্রথম পছন্দ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে বর্তমানে নরওয়ের ইউনিভার্সিটি অব ট্রমসোতে ‘ইন্ডিজিনাস স্টাডিজ’ বিভাগে এমফিল পর্যায়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী তহুরা এনামের মতে, সামাজিক বিজ্ঞান অধ্যয়নে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় মানুষের সাথে সরাসরি কাজ করার সুযোগ। যারা মানব উন্নয়নে সরাসরি ভূমিকা রাখতে চান, সামাজিক বিজ্ঞান তাঁদের জন্য রেখেছে দারুণ সুযোগ।
কারা পড়বেন সমাজবিজ্ঞান
মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীতে বিজ্ঞান, মানবিক অথবা ব্যবসায় শিক্ষা যেকোনো বিভাগের শিক্ষার্থীরাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে ভর্তির মাধ্যমে সামাজিক বিজ্ঞানের যেকোনো শাখায় পড়ালেখা করার সুযোগ পেতে পারেন। সরকারিসহ এখন দেশের প্রায় সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও সামাজিক বিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়ালেখার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া এমফিল এবং পিএইচডির সুযোগও রয়েছে।
বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ
সামাজিক বিজ্ঞানে ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান প্রভৃতি দেশসহ অনেক উন্নত দেশে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ রয়েছে। প্রতিবছরই অনেক শিক্ষার্থী সামাজিক বিজ্ঞানে পড়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ অন্যান্য উন্নত দেশগুলোতে পাড়ি জমাচ্ছেন। এ বিষয়ে পড়ালেখার জন্য উন্নত দেশগুলো উন্নয়নশীল দেশগুলোর ছাত্রছাত্রীদের জন্য অনেক বৃত্তির সুযোগ দেয়। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ফুলব্রাইট বৃত্তি, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো ইরাসমাস মান্ডিস বৃত্তি, নরওয়েতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য কোটা বৃত্তি, যুক্তরাজ্যে কমনওয়েলথ বৃত্তি, অস্ট্রেলিয়ায় ইউএনএসডাব্লিউ বৃত্তি উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া উন্নত দেশগুলোর অধ্যাপকরা নিজেদের গবেষণা সহকারী হিসেবে কাজ করার জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে অনেক ছাত্রছাত্রীকে বৃত্তি দিয়ে থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার জন্য বাংলাদেশের আগ্রহী শিক্ষার্থীদের ঢাকার ধানমণ্ডিতে ই এম কে সেন্টার এবং বারিধারায় আমেরিকান সেন্টার প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি ব্রিটিশ কাউন্সিলের মাধ্যমে যুক্তরাজ্য সরকার এ দেশের যুক্তরাজ্যে উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী শিক্ষার্থীদের দরকারি পরামর্শ দিয়ে থাকে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন দূতাবাসের শিক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টার মাধ্যমেও সংশ্লিষ্ট দেশে উচ্চশিক্ষার প্রক্রিয়া বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যায়।