গ্রাফিন নিয়ে গবেষণা
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
থ্রিডি শুনলেই বোধ হয় আমাদের থ্রিডি বা ত্রিমাত্রিক চলচ্চিত্রের কথা মাথায় আসে। যাঁরা ত্রিমাত্রিক ছবি দেখেছেন, তাঁরা ইতিমধ্যে জানেন, টুডি ও থ্রিডির মধ্যে তফাতটা কোথায়। এটাও নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন, বাস্তবে দুনিয়ার সবকিছুই আসলে ‘থ্রিডি’ বা ত্রিমাত্রিক। টুডি বা টু ডাইমেনশনাল বস্তু পৃথিবীতে নেই বলেই আমরা জানতাম, যদি না ২০১০ সালে ডাচ্ পদার্থবিদ স্যার আন্দ্রে কনস্ট্যান্টিন গিইম ‘গ্রাফিন’ নামক যুগান্তকারী এক ‘টুডি’ বস্তুর আবিষ্কার না করতেন। বিজ্ঞানপ্রিয় মানুষেরা বুঝতেই পারছেন, যে সে আবিষ্কার ছিল না এটা। স্বাভাবিকভাবেই তাই সেবারের পদার্থবিজ্ঞানের নোবেলটা তাঁর পকেটেই গিয়েছিল। সেই যে গ্রাফিনের ধর্ম আর বৈশিষ্ট্য নিয়ে বিশ্বের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ও বিজ্ঞানীরা গবেষণা শুরু করলেন, এখনো তা চলছে। খুশির খবর হলো, তাঁদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের এক তরুণও গ্রাফিনের ওপর নতুন এক গবেষণার কাজ করে ফেলেছেন। বের করেছেন গ্রাফিনের নতুন ধর্ম। আর তার স্বীকৃতি মিলেছে বর্তমান বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জার্নাল ‘নেচার’-এর প্রতিবেদনে।
বাংলাদেশের এই তরুণ গবেষকের নাম আয়েদ আল সায়েম। পড়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগে। বিভাগের অধ্যাপক মো. সাইফুর রহমানের তত্ত্বাবধানে তাঁর এই গবেষণায় সহযোগিতা করেছেন একই বিভাগের মাসুদুর রহমান, মাহদী রাহমান চৌধুরী ও ইফাত জাহাঙ্গীর। বর্তমানে মাহদী ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরে আর ইফাত ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ক্যারোলাইনাতে পিএইচডি করছেন। সায়েম এই গবেষণার কাজটি করেছিলেন স্নাতক পর্যায়ে। এমআইটি, স্ট্যানফোর্ড কিংবা হার্ভার্ডের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের কাজ যেখানে ছাপা হয়, সেই নেচার সাময়িকীর ‘সায়েন্টিফিক রিপোর্টসে’ জায়গা পেয়েছে তাঁর গবেষণাপত্র। সায়েম বলেন, ‘বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণা, যেমন—তাপ প্রকৌশলবিদ্যা, অপটিক্যাল মাইক্রোস্কোপ, বায়োলজিক্যাল ইমেজিং কিংবা সুপার রিজোলিউশন ইমেজিং এর মতো ক্ষেত্রগুলোতে এটি নতুন গবেষণার দ্বার খুলে দেবে।’
‘নেচার’ সাময়িকী সম্পর্কে একটু বলে নেওয়া যাক। ‘বিশ্বের যুগান্তকারী গবেষণার খবর প্রকাশনার ক্ষেত্রে একদম প্রথম সারিতে থাকবে এই জার্নাল’—সিঙ্গাপুর থেকে ফেসবুকের ম্যাসেঞ্জারে জানালেন মাহদী রাহমান। বলছিলেন, ‘সাধারণত আমরা ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টর বিবেচনায় যেকোনো জার্নালের গুরুত্ব বুঝে থাকি। সেদিক থেকে নেচার সায়েন্টিফিক রিপোর্টসের ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর ৫ দশমিক ৫৮। এমন বিখ্যাত সাময়িকীতে আমাদের বাংলাদেশ থেকে, তাও আবার আন্ডারগ্র্যাজুয়েট থিসিসের কোনো প্রবন্ধ প্রকাশিত হওয়াটা সত্যিই গর্বের।’ প্রবন্ধের আর একজন লেখক মাসুদের সঙ্গে কথা হচ্ছিল ফোনে। বললেন, ‘ইউরোপ আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উন্নতমানের পরীক্ষাগার আছে, পর্যাপ্ত আর্থিক সহায়তাও তারা পায়। আর এই কাজগুলো সম্পন্ন হয় পিএইচডি ও পোস্ট ডক্টরেটদের দ্বারা। আমরা আমাদের স্বল্প পরিসরেই বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে যথাসাধ্য কাজ করে যাচ্ছি।’
ছাত্রের সাফল্যে ভীষণ খুশি বুয়েটের তড়িৎকৌশল বিভাগের সাবেক ডিন ও বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক সাইফুর রহমান। তিনি বলছিলেন বাংলাদেশের তরুণদের সম্ভাবনার কথা। ‘এই উদাহরণ আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের মেধার পরিধিটা নতুন করে জানান দেয়। সরকার গবেষণা খাতে বরাদ্দের পরিমাণ বাড়িয়ে যদি উন্নত মানের গবেষণাগারের ব্যবস্থা করতে পারে তাহলে অচিরেই এই ধরনের সাময়িকীতে আমাদের তরুণদের গবেষণা আরও বেশি প্রকাশ পাবে বলে আমার মনে হয়।’
সূত্র: প্রথম আলো