কর্মসংস্থান বাড়ছে চামড়া শিল্পে
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
আসছে ঈদ। এই ঈদের সঙ্গে জড়িয়ে আছে চামড়া। আপনি নিশ্চয়ই জানেন, দেশে বর্তমানে সম্ভাবনাময় শিল্পের মধ্যে অন্যতম শিল্প হিসেবে সাড়া জাগিয়েছে চামড়া শিল্প। এর প্রয়োজনীয়তার কথা ভেবেই অনেকে চামড়া শিল্পে ক্যারিয়ার গড়ে নিচ্ছেন। বাংলাদেশে প্রস্তুত হওয়া চামড়ার মান ভালো হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারেও এর রয়েছে বেশ কদর। এ জন্য চামড়া ও চামড়া শিল্পজাত পণ্য উৎপাদনকারী অনেক প্রতিষ্ঠান রুটিন করে তাদের ব্যবসার সম্প্রসারণ করে যাচ্ছে। চামড়া শিল্প-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি দেশে প্রায় সাড়ে চার হাজার ছোট জুতা তৈরির কারখানা রয়েছে। প্রক্রিয়াজাত চামড়া ও জুতার পাশাপাশি নানা ধরনের চামড়াজাত পণ্য দেশে তৈরি হচ্ছে। এসব পণ্যের রফতানিও দ্রুত বাড়ছে। তাই ক্যারিয়ারটা এখানে গড়তেই পারেন অনায়াসে!
দেশি চামড়ার দাপট
আমাদের দেশি চামড়ার দাপট রয়েছে বিশ্বময়। সুনামের পাশাপাশি পুরনো দেশগুলোর সঙ্গে নতুন দেশের দৃষ্টিও প্রতিনিয়ত কেড়ে নিচ্ছে এ শিল্পটি। বিটিএ বা বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ চামড়া প্রস্তুত, চামড়াপণ্য ও পাদুকা রফতানিকারক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর দেশে ২২ কোটি বর্গফুট চামড়া উৎপাদিত হয়।
এসব চামড়ার ৫০ শতাংশই দেশের চামড়াজাত শিল্পে ব্যবহৃত হয়। বাকিটা প্রক্রিয়াজাত করে রফতানি করা হয়। চামড়া সবচেয়ে বেশি রফতানি হয় ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, চীন, হংকং ও তাইওয়ানে। এই চামড়া প্রক্রিয়াজাত হয় ট্যানারিতে।
সারাদেশে ট্যানারি আছে ২২০টি। এ খাতের সঙ্গে সরাসরি জড়িত আছে প্রায় ৭ লাখ ৪১ হাজার মানুষ। এই শিল্প কয়েক দশক ধরে দাপটের সঙ্গে এ দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে প্রভাব বিস্তার করে আছে। এতে কর্মসংস্থানও বাড়ছে দিন দিন। নতুন নতুন পদে লোকবল নিয়োগ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাই বাড়ছে এখানে প্রতিযোগিতাও।
চাকরি বাজার
এই শিল্পে শ্রমিকের বাইরেও একটি বড় অংশে কর্মচারী ও কর্মকর্তা পর্যায়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে। ট্যানারিতে যেমন এ সুযোগ আছে, তেমনি চামড়া শিল্পজাত পণ্য উৎপাদনকারী অনেক প্রতিষ্ঠানেও কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। এর বাইরে চামড়ার তৈরি পণ্য বিক্রয় ও বিপণনে যুক্ত আছেন অনেকে। আসলে পোশাক শিল্পের মতোই একটি সম্ভাবনাময় শিল্প হচ্ছে চামড়া শিল্প। এখানকার ট্যানারিগুলোয় শ্রমিকের পাশাপাশি কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যাও অনেক। ট্যানারিগুলোয় কর্মকর্তা পর্যায়ে কমার্শিয়াল টেকনিশিয়ান হিসেবে এখানে যারা যুক্ত, তাদের কাজ হচ্ছে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করা।
কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের কাজ হচ্ছে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার কাজে বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার ঘটানো। মেশিন ইঞ্জিনিয়ারদের কাজ মেকানিক্যাল ও ইলেকট্রিক্যাল সেক্টরে। চামড়া তৈরির মেশিন অপারেট করা ও এ-সংক্রান্ত সমস্যা দেখভাল করা। এসব পদের জন্য লেদার টেকনোলজির বিষয়ে বিশেষ পারদর্শীদের নিয়োগ করা হয়। এদের বেশিরভাগই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি থেকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করা। এ ছাড়া নিয়োগ করা হয় কমার্শিয়াল ম্যানেজার। তাদের কাজ, ট্যানারির তথ্য-উপাত্ত নথি তৈরি, সংরক্ষণ ও ব্যাংকের কাজ সামলানো। প্রতিটি ট্যানারিতে সুপারভাইজার নিয়োগ করা হয়। তাদের কাজ শ্রমিক তদারক করা।
দক্ষতায় মনোযোগ
ট্যানারির বাইরে চামড়া শিল্পজাত পণ্য উৎপাদনকারী অনেক প্রতিষ্ঠানও কাজের একটি বড় ক্ষেত্র। এখানে রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগেও নিয়োগ দেওয়া হয়। তাদের কাজ হচ্ছে গবেষণা ও ব্যবসা উন্নয়নে কাজ করা। বাজারের বর্তমান অবস্থা নির্ণয়, নতুন পণ্য বাজার প্রসারে কাজ করা, বহির্বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাংলাদেশি বাজারে পণ্য বিক্রি ও রফতানির জন্য কাজ করাসহ এ-সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজ করতে হয় এই বিভাগের লোকজনকে। এসব বিষয়ে দক্ষ ও ইংরেজিতে পারদর্শী লোকজনকে এখানে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। এ ছাড়া মান নিয়ন্ত্রণ, মার্চেন্ডাইজার, প্ল্যানিং, পার্চেজ, সেলস, মার্কেটিং কর্মকর্তার পদে এখানে লোক নেওয়া হয়। এই ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। এ ছাড়া প্রডাকশন ম্যানেজার ও সহকারী প্রডাকশন ম্যানেজার হিসেবেও এই খাতে লোক নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে কিছু কিছু পদে বিভিন্ন বিষয়ে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পাস করেও এই চাকরি পাওয়া সম্ভব।
বেতন-ভাতা
এ পেশায় যার যত অভিজ্ঞতা, তিনি ততই নিজেকে ওপরে নিয়ে যেতে পারবেন। আর বেতন-ভাতাটাও কিন্তু অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে ওঠানামা করে। তার মানে আপনার অভিজ্ঞতার ঝুলি বাড়লে বেতনও বাড়বে তরতর করে। তবে কর্মকর্তা পর্যায়ে ফ্রেশারদের বেতন শুরু হয় ২৫-২৭ হাজার টাকা থেকে। আর এর ওপরের চাকরির কোনো নির্দিষ্ট বেতন কাঠামো নেই। আপনি ৫০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকাও বেতন বের করে আনতে পারেন নিজের দক্ষতা দিয়ে।
প্রস্তুতি পর্ব
যে কোনো বিষয়ে পড়েই আপনি এখানে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। তবে ভালোভাবে থিতু হতে চাইলে একটু পাকাপোক্ত হয়ে আসাই ভালো। তার মানে এ বিষয়টায় পড়ে এলে আপনার ক্যারিয়ারটা সহজে ওপরে টেনে নিয়ে যেতে পারেন। এর জন্য আপনি পড়তে পারেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজিতে। এখানে তিনটি বিষয় পড়ানো হয়। লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং, ফুটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং ও লেদার প্রডাক্ট ইঞ্জিনিয়ারিং। খোঁজখবর নিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানেও পড়তে পারেন। পড়া শেষে নেমে পড়ূন কাজে।
বিদেশি বিনিয়োগ ও সহবিনিয়োগ ধীরে ধীরে বাড়ছে চামড়া শিল্পে। তাই নিশ্চিন্তে এই পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে পারেন।