দশ হাজার বেকার পাবে বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
আগামী তিন বছরে ১০ হাজার ২০০ জনকে বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। আবাসিক প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া প্রশিক্ষণার্থীরা বিনা মূল্যে থাকা-খাওয়া ও ভাতা সুবিধা পাবেন। কোর্স শেষে চাকরি পাবেন কমপক্ষে ৭০ শতাংশ প্রশিক্ষণার্থী।
দেশের যুবদের দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য প্রশিক্ষণ দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। স্কিলস ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (সেপ) প্রকল্পের আওতায় এ প্রশিক্ষণ দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগ। আইসিটি, গার্মেন্টস, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, অটোমোবাইল ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইলেকট্রিক্যাল মেইনটেন্যান্সসহ পাঁচটি সেক্টরে মোট ১২টি ট্রেডে এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রথম দফায় আগামী তিন বছরে সারা দেশে প্রশিক্ষণ পাবে ১০ হাজার ২০০ জন। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে তিন হাজার ৯০০ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে এক হাজার ৭০০, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, বগুড়ায় ৭৭৫ জন করে, সিলেট ও বরিশাল বিভাগে ৭৫০ জন করে প্রশিক্ষণ পাবে। সারা দেশে আবাসিক ও অনাবাসিক প্রশিক্ষণ কোর্স পরিচালনা করবে কারিতাসের সহায়তায় পরিচালিত মটস, ইউসেপ বাংলাদেশ, টিএমএসএস, ক্রিয়েটিভ আইটি, বিআইআইটি ইঞ্জিনিয়ার্স, অ্যাসোসিয়েশন অব গ্রাসরুটস উইমেন এন্টারপ্রেনার্স বাংলাদেশ, উদ্দীপন ও পিস অ্যান্ড রাইটস ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি।
প্রশিক্ষণের বিষয়
বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস ডিপার্টমেন্টের ডেপুটি ডিরেক্টর এবং সেপ প্রজেক্টের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর মো. কামরুল ইসলাম জানান, প্রশিক্ষণ কর্মসূচিকে দুই ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে—স্কিল ট্রেনিং এবং আপস্কিলিং। স্কিল ট্রেনিং ক্যাটাগরিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে ১০টি ট্রেডে। এর মধ্যে ড্রেস মেকিং অ্যান্ড টেইলারিং, কোয়ালিটি কন্ট্রোল ম্যানেজমেন্ট ইন আরএমজি, লেদ মেশিন অপারেশন ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইলেকট্রিক্যাল মেইনটেন্যান্স বিষয়ে তিন মাস-মেয়াদি প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ছয় মাস-মেয়াদি প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে ওয়েবসাইট ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, প্রফেশনাল ফ্রিল্যান্সিং, গ্রাফিকস ডিজাইন, আইটি মেইনটেন্যান্স অ্যান্ড সার্ভিসিং (আইটি সাপোর্ট সার্ভিস), সোয়েটার, নিটওয়্যার অ্যান্ড ওভেন মার্চেন্ডাইজিং এবং অটোমোবাইল মেকানিক কোর্সে। আপস্কিল ক্যাটাগরিতে দুটি ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রফেশনাল ফ্রিল্যান্সিং এবং গ্রাফিকস ডিজাইন কোর্স দুটিতে প্রশিক্ষণের মেয়াদ তিন মাস।
আবেদনের যোগ্যতা ও বাছাই প্রক্রিয়া
লেদ মেশিন অপারেশন ও অটোমোবাইল মেকানিক কোর্সে অংশগ্রহণের জন্য অষ্টম শ্রেণি পাস হতে হবে। এসএসসি উত্তীর্ণরা প্রশিক্ষণ নিতে পারবে ড্রেস মেকিং অ্যান্ড টেইলারিং, কোয়ালিটি কন্ট্রোল ম্যানেজমেন্ট ইন আরএমজি এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইলেকট্রিক্যাল মেইনটেন্যান্স কোর্সে। ওয়েবসাইট ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, প্রফেশনাল ফ্রিল্যান্সিং, গ্রাফিকস ডিজাইন, আইটি মেইনটেন্যান্স অ্যান্ড সার্ভিসিং, অটোমোবাইল মেকানিক, প্রফেশনাল ফ্রিল্যান্সিং ও গ্রাফিকস ডিজাইন কোর্সে অংশ নিতে পারবে এইচএসসি বা সিএসইতে ডিপ্লোমা উত্তীর্ণরা। স্নাতক উত্তীর্ণরা অংশ নিতে পারবে সোয়েটার, নিটওয়্যার অ্যান্ড ওভেন মার্চেন্ডাইজিং কোর্সে। প্রফেশনাল ফ্রিল্যান্সিং ও গ্রাফিকস ডিজাইন কোর্সে অংশগ্রহণের জন্য বয়স কমপক্ষে ২০ বছর হতে হবে। সোয়েটার, নিটওয়্যার অ্যান্ড ওভেন মার্চেন্ডাইজিং কোর্সে বয়সসীমা ২১ থেকে ৪৫ বছর। অন্য সব কোর্সে ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সীরা অংশ নিতে পারবেন। প্রত্যেক কোর্সের প্রতি ব্যাচে ২৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন। কোর্স শুরুর আগে আবেদনের নিয়ম জানিয়ে পত্রিকা ও অন্যান্য মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। আবেদন করতে হবে বিজ্ঞপ্তিতে দেওয়া নিয়মানুযায়ী। আবেদন বেশি জমা পড়লে যোগ্য প্রশিক্ষণার্থী নির্বাচন করার জন্য লিখিত বা মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হতে পারে। ১৫ শতাংশ আসন বরাদ্দ থাকবে নারী, প্রতিবন্ধী ও অনগ্রসর এলাকার মানুষের জন্য।
প্রশিক্ষণের ধরন
মো. কামরুল ইসলাম জানান, আবাসিক ও অনাবাসিক দুই ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। সিটি করপোরেশনের বাইরে আয়োজন করা হবে আবাসিক প্রশিক্ষণ। প্রত্যেক কোর্সের জন্য সিলেবাস তৈরি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক নির্ধারিত সিলেবাস অনুযায়ী প্রশিক্ষণ দেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান।
প্রত্যেক ট্রেডে ৮০ ভাগ প্রশিক্ষণ হবে ব্যবহারিক। থাকবে ২০ শতাংশ তত্ত্বীয় ক্লাস। প্রফেশনাল ফ্রিল্যান্সিং কোর্সে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন মার্কেটিং, মোবাইল অ্যাপ, ওয়ার্ডপ্রেস কাস্টমাইজেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, স্নাইডার এনিমেশন ডেভেলপমেন্ট, ওয়েব হোস্টিং অ্যান্ড সিএসএস শেখানো হবে।
গ্রাফিকস ডিজাইন কোর্সে শেখানো হবে স্পেশাল ইফেক্ট, এনিমেশন, মাল্টিমিডিয়া প্রোগ্রামিং, ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর, লোগো ডিজাইন ও ব্যানার ডিজাইন। পাশাপাশি প্রত্যেক কোর্সেই দেওয়া হবে এসএমই খাতে নতুন উদ্যোক্তা তৈরির প্রশিক্ষণ। ট্রেড কোর্স শেষে দুটি মডিউউলের মাধ্যমে উদ্যোক্তা উন্নয়নসংক্রান্ত প্রশিক্ষণ পাবেন অংশগ্রহণকারীরা।
প্রশিক্ষণ শেষে ভাতা ও চাকরি
আবাসিক প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া প্রশিক্ষণার্থীরা বিনা মূল্যে থাকা-খাওয়া ও অন্যান্য সুবিধা পাবেন। প্রশিক্ষণ শেষে মিলবে তিন হাজার টাকা ভাতা। ভাতা দেওয়া হবে প্রশিক্ষণার্থীর ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে। প্রকল্পের শর্তানুযায়ী কোর্স শেষে কমপক্ষে ৭০ শতাংশ প্রশিক্ষণার্থীর কাজের ব্যবস্থা হবে। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে প্রশিক্ষণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।