বাংলাদেশি তরুণদের ভয়ংকর বিদেশ যাত্রা
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
পানামা-কলম্বিয়া সীমান্তের ‘ড্যারিয়েন গ্যাপ’ পাড়ি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বহু বাংলাদেশী তরুণ।স্বপ্নের দেশ যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার চেষ্টায় তারা বিশ্বের সবচেয়ে দুর্গম জঙ্গল পাড়ি দিচ্ছে। এ সময় প্রতারণা ও প্রাণহানির শিকারও হতে হচ্ছে তাদের।
অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম এসবিএসের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এসব চিত্র। ওই সংবাদের সূত্র ধরে শনিবার বেসরকারি যমুনা টেলিভিশন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।প্রতিবেদনে বলা হয়, ড্যারিয়েন গ্যাপ পাড়ি দেয়া অভিবাসন প্রত্যাশীদের বড় একটি অংশ বাংলাদেশী। তাদের দাবি, দালালের প্রতারণার শিকার হয়ে ভুগতে হচ্ছে তাদের।
জুয়েল নামে এক ভুক্তভোগীর ফ্যাকাসে চেহারা দেখানো হয়। ওই ফ্যাকাসে চেহারা দেখেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে কতটা ধকল গেছে তার ওপর দিয়ে। আমেরিকার উদ্দেশে দেশ ছাড়ার এক মাস পর জুয়েল এখন পানামার গহিন জঙ্গলে আছে। তার সঙ্গী আরও কয়েক বাংলাদেশী তরুণ। যাদের সবার বয়স আনুমানিক ২২ থেকে ৩০ বছর।
জুয়েল বলেন, খাওয়া নেই চার দিন আর ঘুম নেই ১১ দিন। অনেক কষ্টে আছি ভাই। চোখের পানি ছেড়ে করুণ কণ্ঠে জুয়েল আরও বলেন, মা-বাবা, ভাই-বোন ছেড়ে এসেছি। তাদের কথা খুব মনে পড়ে।
সড়কপথে যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকার লক্ষ্যে এসব তরুণ দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিল, বলিভিয়া, ইকুয়েডর, কলম্বিয়া হয়ে পানামায় পৌঁছেছেন। এখন পাড়ি দিতে হবে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর জঙ্গলের একটি ড্যারিয়ান গ্যাপ। দুর্গম পথে বিষাক্ত সাপ আর ভয়ংকর প্রাণী তো আছেই, সেই সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ী আর গেরিলাদের অভয়ারণ্য পানামা-কলম্বিয়া সীমান্তবর্তী এ বন।
ভয়ংকর পরিস্থিতিতে পড়া এসব বাংলাদেশীর দাবি প্রতারিত হয়েছেন তারা। যে কোনো মূল্যে আমেরিকা যাওয়ার স্বপ্ন থাকলেও জানতেন না এতটা কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে। প্রলোভন দেখিয়ে ড্যারিয়েন গ্যাপে নিয়ে যায় দালালরা। তারপর মারধর করে বিপুল অংকের টাকা আদায়ের অভিযোগ তো আছেই। মনির নামে এক বাংলাদেশী বলেন, কি কারণে এ বনবাসে এসেছি নিজেই জানি না।
আরেকজনকে দুর্বল চিত্তে ইয়া আল্লাহ ইয়া আল্লাহ বলতে শোনা যায়।
ওই ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, দুর্গম জঙ্গল, নদীনালার মধ্যে বাংলাদেশীরা জঙ্গল পাড়ি দিচ্ছেন। খাবারের অভাবে অনেকে ডোবার পানি পান করছেন। তাদের সঙ্গে সম্বল বলতে শুধু একটি ব্যাগ।
পানামার একটি এনজিওর হিসাবে গেল দুই বছরে যেসব অভিবাসী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ড্যারিয়েল গ্যাপ পাড়ি দেন তার মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে বাংলাদেশীরা। বিপদসংকুল রুটের নানা জায়গায়, অস্থায়ী আবাসগুলোতে দেখা মেলে বাংলা শব্দের আঁকঝোঁকা। অনিশ্চিত পথে নামার আগে নাম-পরিচয় লিখে যান এসব বাংলাদেশী।
শরিফ নামে এক বাংলাদেশী বলেন, আমার বিশ্বাস আল্লাহকে স্মরণ করলে সব বিপদ থেকে উদ্ধার মেলে। ধারণা করা হচ্ছে, প্রতি বছর ড্যারিয়ান গ্যাপ পাড়ি দিতে গিয়ে মৃত্যু হয় অন্তত ১০ হাজার মানুষের। দুর্গম সড়কের রাস্তায় রাস্তায় মানুষের খুলি আর হাড়গোড় পড়ে থাকতে দেখা গেছে। তারপরও এ কঠিন রুট বেছে নেন প্রতি বছর প্রায় ২৫ হাজার অভিবাসী।