এখন সময় ‘আন্তর্জাতিক পেশাজীবী’ হওয়ার
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
বর্তমান সময়ে তরুণদের কাছে আউটসোর্সিং ও ফ্রিল্যান্সিং শব্দ দুটি বেশ পরিচিত। তবে ভাসা ভাসা জানা থাকলেও এর সঠিক ব্যাখ্যা জানা নেই অনেকেরই। শব্দ দুটি সম্পর্কে জ্ঞান পেলে হয়তো আপনিও আগ্রহী হবেন ফ্রিল্যান্সর হতে। কারণ এই আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমেই ঘরে বসে বিদেশ থেকে টাকা আয় করার সুযোগ পাবেন। যা দেশের কর্পোরেট ফার্মের কাজের চেয়ে সব দিক থেকেই ভালো। তাহলে এবার আসুন ঘরে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে ইউরোপ-আমেরিকার চাকরির বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেই। ইন্টারনেটের এ যুগে বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়। বিশ্বায়নের ফলে এক দেশের আর্থিক সম্পর্ক হচ্ছে আরও পাকাপোক্ত। এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের প্রধান মাধ্যম হচ্ছে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা। ইন্টারনেটের কারণে এই যোগাযোগ ব্যবস্থা হয়ে উঠেছে আরও সহজতর। এই ইন্টারনেটকে কাজে লাগিই ইউরোপ-আমেরিকার বড় বড় কোম্পানিতে ঘরে বসেই চাকরি করে যাচ্ছেন অনেক তরুণ। তাহলে আসুন আগে জেনে নেই আউটসোর্সিংটা কী?
আউটসোর্সিং : সাধারণত দেশে বসে দেশের বাইরের কাজ করে টাকা আনাটাই হচ্ছে আউটসোর্সিং। এর বাইরে দেশের অসংখ্য মানুষ বিদেশে কাজ করে যে অর্থ পাঠান সেটিকে রেমিট্যান্স বলা হলেও সেটিও কিন্তু আউটসোর্সিং। তবে তরুণদের কাছে আউটসোর্সিং হিসেবে প্রথমটাই বেশি আলোচিত। মূলত এই আউটসোর্সিংটা অনলাইননির্ভর। তাই একে অনলাইন আউটসোর্সিং বলা হয়।
শুরুটা কীভাবে করবেন : একজন আউটসোর্সার হতে খুব বেশিকিছুর দরকার হয় না। এর প্রধান মূলধনই হচ্ছে দক্ষতা। এর বাইরে বাসায় একটি নেট সংবলিত কম্পিউটার থাকাও আবশ্যক। কারণ নেট বিশিষ্ট কম্পিউটার থাকলে বিশ্ব আপনার হাতের মুঠোয় এসে যাবে। তবে একজন মার্কেটিং এক্সপার্ট লোক এ ক্ষেত্রে ভালো করতে পারেন দ্রুত। চাইলে চাকরির পাশাপাশিও এটি করার সুবিধা রয়েছে।
বিদেশী চাকরি পেতে : কোনো না কোনো কারণে অনলাইনে থাকা হচ্ছে আপনার। তাই ফেসবুক বা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অহেতুক সময় ব্যয় না করে এখানে মার্কিন বড় বড় কোম্পানির খোঁজাখুঁজি করুন। খুঁজে বহুজাতিক কোনো প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং বিষয়ে কাজ খুঁজে পেলেন। তাদের কাছে আপনার সিভি পাঠান। কীভাবে আপনি তাদের কোম্পানির মার্কেটিং করবেন তার ওপর চমৎকার কিছু আইডিয়া দিন। যেহেতু আপনি সশরীরে সেখানে যেতে পারছেন না, তাই আপনার সব আইডিয়া হবে অনলাইনকেন্দ্রিক। যখন আপনার সিভি ওরা পাবে, আপনাকে নিয়ে ভাবতে বসবে। হয়তো স্কাইপি বা অন্য কোনো মাধ্যমে আপনার সঙ্গে ওরা কথাও বলার চেষ্টা করবে। এই পদ্ধতিতেই আমাদের দেশের অনেকেই কাজ খুঁজে এখন আমেরিকার বড় বড় কোম্পানিতে কাজ করছেন। মার্কেটিং করছেন। এতে করে তাদের সাপ্তাহিক বেতন পড়ছে ৫০০ থেকে আড়াই হাজার ডলার পর্যন্ত! এই কাজ খুঁজতে অনলাইন মার্কেট প্লেস ওডেস্ক ডু মারতে পারেন। এখানে যাদের জব দরকার হয়, তারা জব খোঁজেন এবং যাদের এমপ্লয়ি দরকার হয় তারা এমপ্লয়ি খোঁজেন। এ জন্য ওডেস্ক একটা ফি কেটে নেয়। নিয়মটা এমন- যার এমপ্লয়ি দরকার সে তার কাজের বিবরণ দিয়ে এখানে লেখা পোস্ট করবে। সঙ্গে এও জানাবে এই কাজের জন্য সে কত টাকা দিতে রাজি। আপনি যদি সে কাজটা করতে চান তবে অ্যাপ্লাই করবেন। এতে আপনার ডিমান্ডটাও তুলে ধরতে পারেন। এভাবে দু’জনে একটা চুক্তি করে নিতে হয়।
আরও যা যা করতে পারেন : অনলাইন এখন কাজের বিশাল ক্ষেত্র। ইচ্ছা করলেই এখানে বহুমাত্রিক কাজের সন্ধান পাবেন। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে এখন বেশি কাজ হচ্ছে ওয়েব ডেভেলমেন্ট, ওয়েব ডিজাইন এবং অনলাইন মার্কেটিংয়ে। তাই আপনি যদি দক্ষ ওয়েব ডেভেলপার হয়ে থাকেন তাহলে এ ধরনের কাজই এখানে খুঁজতে পারেন। ভালো করে খুঁজলে ঠিক সেই কাজ পেয়ে যাবেন।
টাকা যেভাবে আসবে : কিছুদিন আগেও আউটসোর্সিংয়ের টাকা দেশে আনা ব্যাপক জটিল একটি বিষয় ছিল। সেটি এখন আর নেই। আউটসোর্সাররা এখন ওডেস্কের টাকা সরাসরি আপনার বাংলাদেশের ব্যাংকে নিয়ে আসতে পারেন। এ ছাড়া পেওনিয়ার মাস্টারকার্ড নামে একটা সার্ভিস আছে। সেই মাস্টার কার্ড বিনামূল্যে গ্রহণ করেও টাকা উত্তোলন করে নিতে পারেন। এ ছাড়াও ওডেস্ক থেকে আপনার টাকা মাস্টারকার্ডে নিয়ে আসা যায়। পরে মাস্টারকার্ডে থাকা টাকা বাংলাদেশের এটিএম বুথ থেকে উত্তোলন করা যাবে।
হতাশ হওয়া যাবে না : সব কাজের শুরুটাই খুব বেশি সহায়ক হয় না। আউটসোর্সিংয়ের জন্যও না। তাই প্রথম দিকে আউটসোর্সে কাজ পেতে বেশি কষ্ট হয়। অনেক খোঁজা-খুঁজির পরও অনলাইনে খুঁজে কোনো কোম্পানি পাচ্ছেন না বা যাদের পাচ্ছেন তাদেরও কোনো এমপ্লয়ি দরকার হচ্ছে না। তাহলে হতাশ হওয়া যাবে না। আপনি হয়তো কাজ পাচ্ছেন না আবার অনেক কোম্পানি আছে, যাদের লোক দরকার, কিন্তু লোক খুঁজে পাচ্ছে না। তাই লেগে থাকতে হবে। হাল ছেড়ে দেয়া যাবে না। কারণ এখন অনলাইন মার্কেট প্লেসের মাধ্যমেই শ্রম কেনাবেচা হয়।
আরও কিছু কথা : মনে রাখবেন ফ্রিল্যান্সিং একটি স্বাধীন পেশা। এ পেশায় কেউ আপনাকে পেশার ক্রিয়েট করতে পারবে না। ওডেস্কে যখন ইচ্ছা কাজ করবেন। যখন ইচ্ছা কাজ ছেড়ে ঘুরতে চলে যাবেন। কেউ কোনো কথা বলার নেই। তাই এ পেশার প্রতি তরুণদের আগ্রহ একটু বেশি। আগামীতে এর চাহিদা বেড়ে যাবে আরও দ্বিগুণ।