প্রথম চাকরির প্রস্তুতি
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
চাকরির বাজারে আজকাল চাকরিদাতারা শুরুতেই খোঁজেন অভিজ্ঞতা। কিন্তু হতেই পারে আপনি সদ্য স্নাতক করেছেন, জীবনের প্রথম চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অভিজ্ঞতার ঝুলিতে যদি তেমন কিছু না থাকে, কোথাও সিভি পাঠানোটা কখনো কখনো আপনার কাছে অর্থহীন মনে হতে পারে। আপনাকে পেয়ে বসতে পারে হতাশা। তবে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। সেই আশ্বাস দিচ্ছেন ফিঙ্গারপেইন্ট নামে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি মার্কেটিং কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা এড মিটজেন। সহস্রাধিক মানুষকে চাকরি দেওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে এড মিটজেন বিজনেস ইনসাইডারকে বলেছেন, নতুন চাকরিপ্রার্থীরা কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন।
১. সময় লাগুক, ঘাবড়ে যাবেন না
স্নাতক পেরোনোর এক মাস যেতে না যেতেই অনেকে একটা কাজের জন্য অস্থির হয়ে ওঠেন। হতাশ কিংবা অধৈর্য হওয়ার কিছু নেই। বরং বিশ্বাস রাখুন। লেগে থাকুন। চেষ্টা করে যান। একটু সময় লাগতে পারে, সেটা স্বাভাবিক।
২. প্রত্যাখ্যাত হওয়াটাও এ প্রক্রিয়ারই অংশ
সিভি দেবেন, ইন্টারভিউ দেবেন, কয়েকটা জায়গা থেকে প্রত্যাখ্যাতও হবেন—এটা ‘পার্ট অব দ্য গেম’। অন্য আরও অনেক কিছুর মতো চাকরির আবেদন করাও একটা চর্চার বিষয়। বারবার আবেদন করতে করতেই আপনি আপনার দুর্বলতা ও শক্তির জায়গাগুলো জানবেন। ভুলগুলো শোধরানোর সুযোগ পাবেন।
৩. কাজটা নয়, কাজের ক্ষেত্রটাই হোক লক্ষ্য
আপনি একটা প্রতিষ্ঠানের যে পদে কাজ করতে চান, শুরুতেই হয়তো আপনাকে কেউ সেই কাজটা দেবে না। আগে ঠিক করুন, কোন ক্ষেত্রটাতে আপনি ক্যারিয়ার গড়তে চান। শুরুটা না-হয় একটু ছোট পদ থেকেই হলো, তাতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আগে তো দরজায় পা রাখা হোক, ওপরে ওঠার সিঁড়িটা না-হয় তারপর তৈরি করে নেওয়া যাবে। কাজ শুরু করলে লোকজনের সঙ্গে আপনার পরিচয় হবে, নিজের দক্ষতা দেখানোর সুযোগ হবে। এই সুযোগ হারাবেন না।
৪. টাকা যেন আপনার ‘ফোকাস’ না হয়
পরিবারের দায়িত্ব নিতে হবে, ঋণ শোধ করতে হবে…এসব চাপ আপনাকে পীড়া দিতে পারে। কিন্তু শুরুতে শুধু উপার্জন করাই যেন আপনার লক্ষ্য না হয়। চাকরিদাতারা তো আপনার সামর্থ্য যাচাই করবেনই, আপনার নিজেকেও নিজের সামর্থ্য সম্পর্কে জানতে হবে। প্রথমে তাই অভিজ্ঞতার ঝুলিটা ভারী করার দিকে মনোযোগ দিন।
৫. ‘রিসার্চ’ করুন
স্নাতক শেষ করেই সিভি পাঠানো শুরু করবেন না। আগে বর্তমান বাজার আর আপনার লক্ষ্য মাথায় রেখে ‘রিসার্চ’ করুন। পড়ুন, জানুন। আপনি যেখানে কাজ করতে চান, সেই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ভালো করে জানুন। চাকরির ইন্টারভিউতেও আপনাকে এ-সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাব দিতে হতে পারে। একটা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ভালোভাবে না জেনে ইন্টারভিউতে হাজির হওয়াটা খুব বোকার মতো কাজ।
৬. বেতন, ছুটি, সুযোগ–সুবিধা সম্পর্কে খুব দ্রুতই জানতে চাইবেন না
প্রথম চাকরির ক্ষেত্রে আলাপের প্রারম্ভেই বেতন, ছুটি, সুযোগ-সুবিধা ইত্যাদি সম্পর্কে প্রশ্ন করা ঠিক হবে না। প্রথমে নিশ্চিত হোন চাকরিদাতা আপনার ব্যাপারে আগ্রহী কি না। যদি আপনি নির্বাচিত হোন, তারপর এসব নিয়ে প্রশ্ন করুন।
৭. আশাবাদী ও আত্মবিশ্বাসী হোন
চাকরিদাতারা প্রার্থীর চোখে আত্মবিশ্বাস খোঁজেন। আপনাকে দেখে যেন মনে না হয়—চাকরি খুঁজতে খুঁজতে আপনি ক্লান্ত, হতাশ; একটা চাকরি না হলে আপনার চলছেই না। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ‘হ্যান্ডশেক’ করুন। অন্যমনস্ক হবেন না। আপনার শরীরী ভাষাতেই যেন আপনার শক্তিটা টের পাওয়া যায়। আপনাকে দেখে যেন মনে হয়, আপনি সময়টা উপভোগ করছেন।
৮. আপনার অভিজ্ঞতা নেই, এটা সহজভাবে নিন
আপনার ইন্টারভিউ যিনি নেবেন, তিনিও একসময় অনভিজ্ঞ ছিলেন। কাজ করতে করতেই হয়তো অভিজ্ঞ হয়েছেন। আপনার কাজের অভিজ্ঞতা নেই, সেটা আপনার ‘অপরাধ’ নয়। অতএব, ব্যাপারটা সহজভাবে নিন। অন্য প্রার্থীরা কতখানি অভিজ্ঞ, সেসব নিয়ে ভাববেন না। ভাবুন, আপনি কীভাবে অবদান রাখতে পারেন? সিভিতে আপনার ছোটখাটো যোগ্যতাগুলোও লিখুন। হতে পারে আপনি জাদু দেখাতে পারেন বা আপনি ছবি আঁকতে পারেন। কাজের সঙ্গে এসবের সম্পর্ক না থাকুক, তবু আপনার সামর্থ্যের কথা লিখুন।
৯. সুপারিশের অপেক্ষায় থাকবেন না
প্রথম চাকরি কারও সুপারিশে না হওয়াই ভালো। প্রথম চাকরি হোক আপনার নিজের যোগ্যতায়। এতে আত্মবিশ্বাস পাবেন। আপনার পরিবার বা আত্মীয়স্বজনের কেউ হয়তো কোনো প্রতিষ্ঠানে বড় পদে আছেন। এই ‘সুযোগ’ কাজে না লাগানোই ভালো। হতে পারে অন্য প্রার্থীদের কেউ আপনার চেয়েও যোগ্য; কিন্তু সুপারিশের জোরে আপনি চাকরিটা পেয়ে গেলেন। এটা অনেকটা নকল করে পরীক্ষা দেওয়ার মতো।
১০. আগ্রহ প্রকাশ করুন
কাজটা করার জন্য যাঁরা আগ্রহী, যাঁদের মধ্যে ‘প্যাশন’ আছে; চাকরিদাতারা তাঁদেরই পছন্দ করেন। যে কাজের জন্য আপনি আবেদন করছেন, সেই কাজের ক্ষেত্রটির প্রতি আপনার আগ্রহটা চাকরিদাতাকে বুঝিয়ে দিন।