চার হাজার কোটি ডলার ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনা
- অর্থ ও বাণিজ্য
ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে বাংলাদেশ ৪ হাজার কোটি ডলার ঋণ পেতে পারে চীনের কাছ থেকে। দেশটির প্রেসিডেন্টের সফরে এ চুক্তি হতে পারে বলে আভাস মিলেছে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ঋণ সহায়তার হবে। টাকার অঙ্কে তা চলতি অর্থবছরের বাজেটের সমান।
জানা যায়, যোগাযোগ, বিদ্যুত-জ্বালানি, তথ্যপ্রযুক্তি, শিল্প এবং জীবনমান উন্নয়নে এ অর্থ দিতে চায় চীন। তবে এখনও ঋণের শর্ত ও সুদহার নির্ধারণ করা হয়নি। বিশাল অঙ্কের এ ঋণে আপত্তি না থাকলেও শর্ত যেন কঠিন না হয়, সেদিকে দৃষ্টি রাখার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘এখনই আমাদের বেশি ঋণ নেয়ার সময়। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে এখন থেকেই বড় ধরনের অবকাঠামো নিশ্চিত করতে হবে। তাই এখন বড় ঋণ দেশের জন্য আকাক্সিক্ষত। তবে কোনভাবেই যেন কঠিন শর্তের ঋণ না হয়, সেদিকে সরকারকে খেয়াল রাখতে হবে।
টাকার অঙ্ক খোলাসা না করলেও অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, ‘চীনা প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরের সময় রেকর্ড পরিমাণ ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশের সম্ভাবনা দেখেই চীন ঋণ দিতে আগ্রহী। প্রধানমন্ত্রীর যোগ্য নেতৃত্বের কারণেই চীনসহ সারাবিশ্বের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের কাছে উন্নয়ন বিস্ময়।’
জানা যায়, গত ৪ অক্টোবর ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত মা মিং জিয়ানের মাধ্যমে দেশটি বাংলাদেশের জন্য প্রাথমিকভাবে ২৫টি প্রকল্প বাছাই করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। বড় ধরনের কোন নীতি পরিবর্তন না হলে এ তালিকাই চূড়ান্ত বলে জানিয়েছে চীন। এ ২৫টি প্রকল্পের মধ্যে রেল খাতের চারটি, সড়ক পরিবহনের চারটি, বিদ্যুতের চারটি, জীবনমান উন্নয়নে পাঁচটি, জ্বালানি ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের একটি করে এবং শিল্প খাতের দুটি প্রকল্প রয়েছে। এর মধ্যে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের জন্য ২৫৭ কোটি ৫৭ লাখ ডলার, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল প্রকল্পে ৩০৩ কোটি ডলার, জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী সেকশনের (ডাবল লাইন ডুয়েল গেজ) উন্নয়ন প্রকল্পে ৭৫ কোটি ২৮ লাখ ডলার দিতে পারে চীন।
চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীতে টানেল নির্মাণ প্রকল্পে ৭০ কোটি ৫৮ লাখ ডলার, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে ১৩৯ কোটি ৩৯ লাখ ডলার আসতে পারে। সীতাকুন্ড-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ এক্সপ্রেসওয়ে ও কোস্টাল সুরক্ষা প্রকল্পে ২৮৫ কোটি ৬৫ লাখ ডলার এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের জন্য ১৬০ কোটি ৩৩ লাখ ডলার দিতে পারে চীন। চীনের সহায়তা পাওয়া যেতে পারে ২০৩ কোটি ডলারের ‘এক্সপানশন এ্যান্ড স্ট্রেংদেনিং অব পাওয়ার সিস্টেম নেটওয়ার্ক আন্ডার ডিপিডিসি এরিয়া’ প্রকল্পে। ‘সিস্টেম লস রিডাকশন বাই রিপ্লেসিং পঞ্চাশ লাখ ইলেক্ট্রো মেকানিক্যাল এনার্জি মিটার উইথ ইলেক্ট্রনিক এনার্জি মিটার’ প্রকল্পে ১৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার দিতে পারে চীন। এছাড়া ‘পাওয়ার গ্রিড নেটওয়ার্ক স্ট্রেংদেনিং প্রজেক্ট আন্ডার পিজিসিবি’তে ১৩২ কোটি ১৮ লাখ ডলার আসতে পারে। ‘গজারিয়ায় ৩৫০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক থার্মাল বিদ্যুত কেন্দ্রে’ দিতে পারে ৪৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার।
‘ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন’ প্রকল্পে ৫০ কোটি ডলার, ‘রাজশাহী সার্ফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট’ প্রকল্পে ৫০ কোটি ডলার, বিটিভির পাঁচটি টিভি স্টেশন স্থাপন প্রকল্পে ১২ কোটি ৭৮ লাখ ডলার দিতে পারে চীন।
বিজেএমসির আওতায় ‘সরকারী পাটকল আধুনিকায়ন পুনর্বাসন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পে’ ২৮ কোটি ডলার এবং ‘এস্টাব্লিশিং ডিজিটাল কানেক্টিভিটি’ প্রকল্পে আসতে পারে ১০০ কোটি ডলার। এছাড়া পাঁচ প্রকল্পে অর্থের অঙ্ক উল্লেখ করা হয়নি। সেগুলো হচ্ছেÑ ‘চায়না অর্থনৈতিক ও শিল্প জোন চট্টগ্রামের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প’, ‘বাংলাদেশ গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক’, ‘চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলওয়ে প্রজেক্ট’, ‘ড্রেনেজে এ্যান্ড সলিড ওয়াস্ট ম্যানেজমেন্ট ফর স্মল সাইজ পৌরসভা’, ‘রিপ্লেস অব ওভারলোডেড ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফরমার ফর প্রোভাইডিং রিলায়েবল ইলেক্ট্রিসিটি ইন আরই সিস্টেম।’
চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের রেকর্ড যে ঋণচুক্তি হতে যাচ্ছে তাতে সরকারকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা। সিপিডির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘সরকারের উচিত হবে এ প্রকল্পগুলো নিয়ে সমঝোতার সময় সুদের হারটি যেন যথাসম্ভব নিচু পর্যায়ে রাখা যায়। সবচেয়ে ভাল হয় ১ শতাংশের নিচে রাখা যায়, দুই বা তিন না করে দশ বছরের মতো গ্রেস পিরিয়ড এবং রি-পেমেন্ট পিরিয়ড যদি ৩০-৪০ বছর করা যায় তাহলে দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ পরিশোধের চাপ সহনীয় হবে।’
বিশ্বজুড়ে বাড়ছে চীনের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক প্রভাব। বাংলাদেশের মোট বাণিজ্যের ২৬.৫০ শতাংশ চীনের সঙ্গে হলেও এর ৮৫ শতাংশই দেশটির অনুকূলে।