ব্যবসা সহজীকরণে দুই ধাপ এগোল বাংলাদেশ

ব্যবসা সহজীকরণে দুই ধাপ এগোল বাংলাদেশ

  • অর্থ ও বাণিজ্য ডেস্ক

ব্যবসা পরিস্থিতিতে গত এক বছরে কিছুটা উন্নতি ঘটেছে বাংলাদেশের। ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এমন দাবি করা হয়। গত মঙ্গলবার ‘ডুয়িং বিজনেস ২০১৭ : সবার জন্য সমান সুযোগ’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংক। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ সূচকে দুই ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৬তম। এর আগের বছর এই সূচকে অবস্থান ছিল ১৭৮তম।

প্রতিবেদনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করার আনুষঙ্গিক পরিবেশের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে। এতে ব্যবসা পরিবেশের ১১টি বৃহত্তর নির্দেশিকা মূল্যায়ন করা হয়েছে। তবে র্যাংকিং তৈরিতে এ বছর ১১টি নির্দেশিকার মধ্যে ১০টি ধরা হয়েছে, বাকি একটি ‘শ্রম বাজার নিয়ন্ত্রণ’ এ সূচকটির মূল্যায়ন হিসাব করা হয়নি।

উল্লিখিত ১০টি সূচক হলো : ব্যবসায় শুরু, অবকাঠামো নির্মাণের অনুমতি, বিদ্যুতের প্রাপ্যতা, সম্পত্তি নিবন্ধন, ঋণের প্রাপ্যতা, সংখ্যালঘুর বিনিয়োগ সুরক্ষা, কর পরিশোধ, বৈদেশিক বাণিজ্য, চুক্তির বাস্তবায়ন ও অসচ্ছলতা দূরীকরণ। এসব সূচকের সার্বিক স্কোর বা বাংলাদেশের ডিসটেন্স টু ফ্রন্টিয়ার (ডিটিএফ) ৪০.৮৪ পয়েন্ট, যা গত বছরের ৪০.৬৮ পয়েন্ট থেকে বেশি।

kalerkantho-28-10-2016-2প্রতিবেদনে বলা হয়, নতুন ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পরিস্থিতি তুলনামূলক ভালো। নতুন ব্যবসা শুরুতে ১০০ পয়েন্টের মধ্যে বাংলাদেশের অর্জন ৮১ দশমিক ৭৪ পয়েন্ট। নতুন ব্যবসা শুরু করতে এখানে ৯টি প্রক্রিয়া অতিক্রম করতে হয়। এতে সময় লাগে গড়ে সাড়ে ১৯ দিন। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বৈশ্বিক অবস্থান ১২২তম।

অবকাঠামো নির্মাণের অনুমতি নিতে এখানে ১৪টি ধাপ অতিক্রম করতে হয়। আর সময় লাগে ২৬৯ দিন। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রাপ্ত পয়েন্ট ৬১.৬০। তবে বিদ্যুতের নতুন সংযোগে বাংলাদেশের অবস্থান তলানিতেই রয়েছে বলে প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ১০০ স্কোরের মধ্যে বাংলাদেশের অর্জন মাত্র ১৬ দশমিক ১৭ পয়েন্ট। এ কাজে ৯টি ধাপ অতিক্রম করতে হয়। সময় লাগে ৪২৯ দিন।

বাংলাদেশে একজন উদ্যোক্তার সম্পত্তি নিবন্ধন করতে আটটি ধাপ সম্পন্ন করতে হয়। এতে সময় লাগে ২৪৪ দিন। অতিক্রম করতে হয় ৯টি প্রক্রিয়া। ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্কোর ২৫ পয়েন্ট। এতে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫৭তম। তবে সংখ্যালঘুর বিনিয়োগ সুরক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বেশ এগিয়ে ৭০তম অবস্থানে রয়েছে। প্রাপ্ত স্কোর ৫৬.৬৭ পয়েন্ট।

অন্যদিকে বাংলাদেশে কর খাতে সংস্কার ব্যবসার জন্য আরো কঠিন হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, বাংলাদেশে কর প্রদান কম্পানিগুলোর জন্য আরো জটিল করে দেওয়া হয়েছে ভ্যাট প্রস্তুত ও আয়কর রিটার্নের সময় বাড়িয়ে। এতে বাংলাদেশের প্রাপ্ত স্কোর ৫৫.৫৬। বৈশ্বিক অবস্থান ১৫১তম। বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ বেশ পিছিয়ে রয়েছে। প্রাপ্ত স্কোর ৩৪.৮৬ এবং বৈশ্বিক অবস্থান ১৭৩তম। চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সময় লাগে এক হাজার ৪৪২ দিন। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রাপ্ত স্কোর ২২.২১। বৈশ্বিক অবস্থান ১৮৯তম। এ ছাড়া অসচ্ছলতা দূরীকরণে বাংলাদেশের সময় লাগে চার বছর। এ ক্ষেত্রে অবস্থান ১৫১তম। প্রাপ্ত স্কোর ২৭.০২।

২০১৭ সালের এ প্রতিবেদনে সর্বোচ্চ স্কোর করে তালিকার শীর্ষে রয়েছে নিউজিল্যান্ড। দেশটির প্রাপ্ত স্কোর ৮৭.০১। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সিঙ্গাপুর, দেশটির স্কোর ৮৫.০৫। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ডেনমার্ক, দেশটির স্কোর ৮৪.৮৭। চতুর্থ স্থানে রয়েছে হংকং, দেশটির স্কোর ৮৪.২১। পঞ্চম স্থানে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া, দেশটির প্রাপ্ত স্কোর ৮৪.০৭। এ ছাড়া শীর্ষ দশে থাকা বাকি দেশগুলো হচ্ছে যথাক্রমে নরওয়ে, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সুইডেন ও মেসিডোনিয়া।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য সূচকের শীর্ষ স্থানে রয়েছে ভুটান। বৈশ্বিক তালিকায় ভুটানের অবস্থান ৭৩তম। তালিকায় ১০০তম অবস্থান পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়ার অন্য কোনো দেশের নাম নেই। ১০৭তম স্থানে থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় অবস্থানে আছে নেপাল। অন্যদিকে শ্রীলঙ্কা দক্ষিণ এশিয়ায় তৃতীয় এবং বিশ্বে ১১০তম স্থানে রয়েছে।

আঞ্চলিক বিবেচনায় সবচেয়ে পিছিয়ে আছে আফগানিস্তান। বৈশ্বিক সূচকে দেশটির অবস্থান ১৮৩তম। নিচের দিকে এর ওপরেই আছে বাংলাদেশের নাম। এর বাইরে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত ১৩০তম, মালদ্বীপ ১৩৫তম ও পাকিস্তান ১৪৪তম স্থানে রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত এক বছরে ১৩৭টি দেশ ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ সৃষ্টিতে ব্যাপক হারে সংস্কার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে। এর ফলে ছোট ও মাঝারি আকারের ব্যবসা খোলা এবং পরিচালনা করা বিশ্বে তুলনামূলক সহজ হয়েছে। সংস্কারের বিবেচনায় শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় রয়েছে  ব্রুনেই, কাজাখস্তান, কেনিয়া, বেলারুশ, ইন্দোনেশিয়া, সার্বিয়া, জর্জিয়া, পাকিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন।

সূত্র: কালের কণ্ঠfavicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment