উৎপাদন লক্ষ্য বাড়াতে চা বোর্ডের অনীহা
- অর্থ ও বাণিজ্য
২০১৪ সালে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ২০ লাখ কেজি চা বেশি উৎপাদিত হয়। ২০১৫ সালে উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে চলতি বছরও (২০১৬) রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদনের পথে বাংলাদেশ। দেশে রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদিত হলেও খাতটি তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত বাংলাদেশ চা বোর্ড হাঁটছে উল্টোপথে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে প্রতি বছর লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো জরুরি। তবে চা বোর্ড বলছে, লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হলেও পণ্যটির উৎপাদন বাড়বে না। দেশে কয়েক বছর ধরে পণ্যটি বেশি পরিমাণে উৎপাদিত হওয়ার কারণ হিসেবে বোর্ডের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে অনুকূল আবহাওয়ার কথা।
চা বোর্ডের সর্বশেষ উৎপাদন প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৪ সালে ৬ কোটি ২০ লাখ কেজি লক্ষ্যের বিপরীতে উৎপাদন হয় ৬ কোটি ৩৮ লাখ ৭৫ হাজার কেজি। ২০১৫ সালে পণ্যটির উৎপাদন লক্ষ্য ৬ কোটি ৪০ লাখ কেজিতে উন্নীত করে চা বোর্ড। সে বছর ৬ কোটি ৭৩ লাখ ৭৮ হাজার কেজি চা উৎপাদিত হয়। অন্যদিকে চলতি বছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৫০ হাজার কেজি বাড়ানো হলেও সর্বশেষ নয় মাসে উৎপাদন বেড়েছে প্রায় দেড় কোটি কেজি।
২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে চা উৎপাদন হয়েছিল ৪ কোটি ৪৫ লাখ ৮৩ হাজার কেজি। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে ৬ কোটি ৬ লাখ ৭৩ হাজার কেজি। অর্থাত্ চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ কোটি ৬০ লাখ ৯০ হাজার কেজি চা বেশি উৎপাদিত হয়েছে। ২০১৫ সালের সর্বশেষ তিন মাসে (অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর) চা উৎপাদিত হয়েছিল ২ কোটি ২৭ লাখ ৯৫ হাজার কেজি। এ হিসাবে চলতি বছর দেশে চা উৎপাদিত হবে ৮ কোটি ৩৪ হাজার ৬৮ কেজি। বছরের শেষদিকে চা উৎপাদনের অনুকূল আবহাওয়া বিরাজ করে। এ কারণে চলতি বছর চা উৎপাদন সাড়ে ৮ কোটি কেজি ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা প্রত্যাশা করছেন।
বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে কয়েকজন চা বাগান মালিক জানিয়েছেন, দেশীয় বাগান মালিকরা চা উৎপাদনে ভালো করছেন। চা বোর্ডের সহযোগিতার পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাগান মালিকরা উৎপাদন বাড়াতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছেন। উৎপাদনে ব্যবহার হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি।
বাগান মালিকরা বলছেন, বোর্ডের পক্ষ থেকে রুগ্ন ও বন্ধ চা বাগানগুলোর প্রতি মনোযোগ বাড়ানো উচিত। এছাড়া ব্যর্থ বাগান মালিকদের কাছ থেকে বাগান নিয়ে সফল ব্যবসায়ীদের হস্তান্তর করা হলে দেশে চায়ের উৎপাদন আরো বাড়বে। চা উৎপাদন ১০০ মিলিয়ন বা ১০ কোটি কেজি ছাড়িয়ে গেলে পণ্যটি রফতানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারবে বাংলাদেশ।
চা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কয়েক বছর ধরে দেশে চা উৎপাদন বাড়ছে। উৎপাদন বৃদ্ধিতে বোর্ডের গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচির পাশাপাশি পরিশ্রমী দেশীয় উদ্যোক্তারা ভূমিকা রাখছেন। আপাতত লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো না হলেও আগামীতে কর্মসূচির পাশাপাশি লক্ষ্যমাত্রা নিয়েও কাজ করবে চা বোর্ড। পাশাপাশি চা রফতানি ও দেশীয় বিপণন বাড়াতে বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।
ধারাবাহিকভাবে উৎপাদন বৃদ্ধি সত্ত্বেও লক্ষ্যমাত্রা বাড়াতে অনীহার বিষয়ে জানতে চাইলে চা বোর্ডের উপ-পরিচালক (পরিকল্পনা) মুনির আহমেদ বলেন, ‘অন্তত দশ বছরের তথ্য পর্যবেক্ষণ করে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ফলে কয়েক বছর উৎপাদন বাড়লেও আমরা লক্ষ্যমাত্রা ৫০ হাজার কেজি বাড়িয়ে থাকি। গত বছরের মতো এবারো রেকর্ড চা উৎপাদনের দিকে যাচ্ছে বাংলাদেশ।’ আগামী কয়েক বছর এ ধারায় উৎপাদন হতে থাকলে লক্ষ্যমাত্রায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে।