পিপিপি প্রকল্প বাস্তবায়নে রয়েছে ২১ প্রতিবন্ধকতা
- অর্থ ও বাণিজ্য
পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় বিনিয়োগ প্রকল্প বাস্তবায়নে অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ বা প্রতিবন্ধকতা হলো অর্থায়ন জটিলতা। এ প্রক্রিয়া সহজতর হলে অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের খরা কাটানো সম্ভব হবে। আর অর্থায়ন প্রতিবন্ধকতা ছাড়াও মোট ২১ ধরনের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে পিপিপি প্রকল্প বাস্তবায়নে। গতকাল এ-সংক্রান্ত এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব তথ্য উপস্থাপন করেন।
রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে গতকাল ‘কারেন্ট কন্ট্রিবিউশন অ্যান্ড ফিউচার প্রসপেক্টাস অব পিপিপি ফর ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পিপিপি কর্তৃপক্ষ আয়োজিত এ বৈঠক সঞ্চালনা করেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিপিপি কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সৈয়দ আফসার এইচ উদ্দিন। এতে পিপিপি প্রকল্প বাস্তবায়নে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার বিষয় তুলে ধরা হয়।
মূল প্রবন্ধে সৈয়দ আফসার এইচ উদ্দিন অর্থনৈতিক উন্নয়নে পিপিপি কর্তৃপক্ষের আওতায় বর্তমান ও ভবিষ্যত্ সম্ভাবনার বিষয়ে আলোকপাত করেন। এ সময় তিনি সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনে করণীয় নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি জানান, সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্য অর্জনে প্রয়োজন হবে ৪০ হাজার কোটি ডলারের বিনিয়োগ। এর ৭৭ দশমিক ৩ শতাংশ আসবে বেসরকারি খাত থেকে। অবকাঠামো খাতে বার্ষিক বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে ১ হাজার ২৫০ কোটি ডলার।
তিনি জানান, ২০১২ সালে পিপিপি কর্তৃপক্ষের নীতিগত অনুমোদন পাওয়া প্রকল্প ছিল সাতটি। ২০১৬ সালের মে পর্যন্ত এমন প্রকল্পের সংখ্যা ৪৪টিতে দাঁড়িয়েছে। এসব প্রকল্পে অনুমোদিত বিনিয়োগের পরিমাণ ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। এর মধ্যে আটটি প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে, যেখানে রয়েছে ১৫০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ।
সৈয়দ আফসার বলেন, পিপিপির আওতায় কর্মসূচি বাস্তবায়নে অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জ পাওয়া যাবে। বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বেই পিপিপি প্রকল্পগুলোকে এ ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মোট ২১টি চ্যালেঞ্জ উপস্থাপনায় তুলে ধরা হয়েছে। শুরুতেই রয়েছে আইন ও নীতিনির্ধারণী কাঠামো, সেবা ও বিশেষজ্ঞ কেন্দ্র, বিস্তারিত সম্ভাব্যতা যাচাই, সম্পদ সামর্থ্য নিশ্চিতকরণ, দীর্ঘমেয়াদি বেসরকারি খাতভিত্তিক অর্থায়ন সামর্থ্য, সমন্বিত মাস্টারপ্ল্যান, অংশীদার নির্বাচন, ব্যয় নির্ধারণ, সময়সীমা, সংযোগ প্রকল্প, বহুপক্ষীয় অনুমোদন, প্রকল্প ব্যবস্থাপনা, সহায়তা কাঠামো, আর্থিক পণ্য, বিদেশী মুদ্রাঝুঁকি, মার্কেট এক্সপোজার, পিপিপি সম্পর্কে ধারণা, ঝুঁকি বণ্টন, সম্পদ ব্যবহার ও দক্ষতা ধরে রাখা।
বৈঠকে বক্তারা পিপিপি প্রকল্পের বিভিন্ন বিষয়ে মত ব্যক্ত করেন। এর মধ্যে গুরুত্ব প্রকল্প অর্থায়ন, গ্যাস নির্ভরতা কমানো, বীমা ও স্বাস্থ্য খাতে পিপিপি প্রকল্প গ্রহণ, পাবলিক-প্রাইভেট সমন্বয়, পিপিপিতে অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত এমন খাত, বন্দর ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, প্রকল্পের সঠিক অংশীদার নির্বাচন, অর্থায়নের উত্স হিসেবে পুঁজি বাজারের উপযোগিতা, প্রকল্প বাস্তবায়ন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তবে পিপিপির মতো বড় ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পের জন্য দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের উত্স সৃষ্টির বিষয়ে সবাই অভিন্ন মত পোষণ করেন।
বিদ্যুত্, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মাহবুব-উল-আলম বলেন, বিদ্যুত্ বিভাগ পিপিপি প্রকল্পের জন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। বিদ্যুতের মতো সেবামূলক বড় খাতগুলো পিপিপির আওতায় হওয়া প্রয়োজন।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি হোসেন খালেদ বলেন, পিপিপির আওতায় চুক্তিগুলো কার্যকর করা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া সার্বিক ব্যবস্থাপনাসহ পিপিপির নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ মুদ্রানীতির ওপরও গুরুত্ব দেন তিনি।
বৈঠকে সব আলোচনার সারসংক্ষেপ উপস্থাপনকালে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী সঠিক ও সামর্থ্যবান অর্থায়ন উেসর মাধ্যমে পিপিপি প্রকল্প বাস্তবায়ন করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। এছাড়া পরিবর্তিত প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে সব কার্যক্রম রূপান্তরের বিষয়েও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
এছাড়া ইউনাইটেড ন্যাশনস ক্যাপিটাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের চিফ টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজর সুরেশ বালাকৃষ্ণাণ, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিকাল ইউনিটের মহাপরিচালক ফারুক হাসান, এডিবির সিনিয়র ফিন্যান্সিয়াল সেক্টর স্পেশালিস্ট বিদ্যুত্ কুমার সাহা, ইউনাইটেড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মইনুদ্দিন হাসান রশিদ, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের হেড অব করপোরেট ব্যাংকিং নাসের ইজাজ, ইডকলের ডিরেক্টর ও হেড অব অ্যাডভাইজরি নাজমুল হক, সিটি ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মারুফ, ব্র্যাক ইপিএলের সিইও দিদারুল হক খান প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন।