উৎপাদনশীল খাতকে দমিয়ে রাখছে অবকাঠামো ও জ্বালানি সংকট
- অর্থ ও বাণিজ্য
অবকাঠামো ঘাটতি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ সমস্যা দেশের উৎপাদনশীল খাতের কর্মদক্ষতাকে দমিয়ে রাখছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনায় এমন মত জানিয়েছে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই)।
গতকাল জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর সময়ের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনার সমাপনী পর্যবেক্ষণে এমসিসিআই উল্লেখ করেছে, জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে কৃষি, উৎপাদন এবং সেবা খাত ভালো করেছে। কিন্তু খাতগুলোর প্রবৃদ্ধি টেকসই করতে বিভিন্ন ধরনের সরকারি সহায়তা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। অবকাঠামো ঘাটতি, গ্যাস এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ সমস্যা সব উৎপাদনশীল খাতের কর্মদক্ষতাকে দমিয়ে রেখেছে। সরকারের উচিত, এসব সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা। পাশাপাশি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও ধরে রাখতে হবে। পর্যালোচনায় বলা হয়, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে উন্নতি দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ইতিবাচক ইঙ্গিত দিচ্ছে। সম্ভাবনার চেয়ে অগ্রগতি কম হলেও গত প্রান্তিকে দেশে স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি হয়েছে, মূল্যস্ফীতি ছিল নিয়ন্ত্রণের মধ্যে, মুদ্রা বিনিময় হারও ছিল স্থিতিশীল এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সহনীয় মাত্রায় বেড়েছে।
এমসিসিআই তাদের পর্যালোচনায় গত প্রান্তিকে দেশের কৃষি, শিল্প, নির্মাণ, বিদ্যুৎ, সেবা, পুঁজিবাজার, সরকারি অর্থায়ন, রফতানি ও আমদানি, রেমিট্যান্স, বিদেশী অনুদান, বিদেশী বিনিয়োগ, ব্যালান্স অব পেমেন্ট, মুদ্রা বিনিময় হার এবং রিজার্ভ, মূল্যস্ফীতি এ-সংক্রান্ত তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করেছে।
বিদ্যুৎ খাত প্রসঙ্গে এমসিসিআইয়ের পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়লেও বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেশব্যাপী বেড়েছে। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে ভুগেছে ব্যবসার বিভিন্ন ক্ষেত্রগুলো, যা শিল্পের উৎপাদন ব্যাহত করেছে। আবাসিক খাতেও বিদ্যুৎ সমস্যা ভুগিয়েছে। অক্টোবরে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ১২ হাজার ৭৮০ মেগাওয়াট। এ সক্ষমতা বাড়লেও গ্যাস সংকট উৎপাদনকে কমিয়েছে।
কৃষি খাত নিয়ে পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, দেশের মোট জনশক্তির ৪৭ দশমিক ৫ শতাংশের কর্মসংস্থান হয় এ খাতে, যা জিডিপির প্রায় ১৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ। কৃষি খাতের ঋণ প্রসঙ্গে এমসিসিআইয়ের পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, আলোচ্য প্রান্তিকে কৃষি খাতে ঋণ এবং নন-ফার্ম ব্যাংক ঋণ বেড়েছে ১৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ, যার পরিমাণ ৪৪৩ কোটি টাকা।
প্রথম প্রান্তিকে রফতানি আয় বেড়েছে ৪ দশমিক ১২ শতাংশ। আয় হয়েছে ৮০৭ কোটি ডলার। পোশাক খাতের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতি এবং দেশের শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রভাবে রফতানি প্রবৃদ্ধি অব্যাহত ছিল।
প্রথম প্রান্তিকে রেমিট্যান্স কমেছে ১৭ দশমিক ৮২ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কমে রেমিট্যান্সের পরিমাণ হয়েছে ৩ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দরপতনে মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের প্রবাসী জনগোষ্ঠীর আয় ও সঞ্চয়ে প্রভাব ফেলেছে। আর এর প্রভাবেই রেমিট্যান্স কমেছে বলে মনে করছে এমসিসিআই।
বিদেশী বিনিয়োগের নিট প্রবাহ জুলাই-আগস্ট সময়ে বেড়েছে ৯ দশমিক ৩ শতাংশ। এ হারে বেড়ে নিট প্রবাহ পরিমাণ ছিল ৪৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এমসিসিআই জানিয়েছে, শিল্প-সংশ্লিষ্টদের মতে দেশের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনের তুলনায় বিনিয়োগের পরিমাণ যথেষ্ট নয়।
ব্যালান্স অব পেমেন্ট প্রসঙ্গে পর্যালোচনায় এমসিসিআই জানিয়েছে, বাণিজ্য ঘাটতি ৫ শতাংশ বেড়েছে। অর্থবছরেরর প্রথম দুই মাসে রফতানি আয় কমে যাওয়ার পাশাপাশি আমদানি বৃদ্ধিই ঘাটতি বেড়ে যাওয়ার কারণ। আগস্ট শেষে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৫২ কোটি ৫০ লাখ ডলার। ২০১৫ সালের আগস্ট শেষে এর পরিমাণ ছিল ৫০ কোটি ডলার।