নান্দনিক আয়োজনে প্রযুক্তির পসরা

নান্দনিক আয়োজনে প্রযুক্তির পসরা

  • অর্থ ও বাণিজ্য 

রাজধানীর বসুন্ধরা ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটিতে ঢুকতেই অভ্যর্থনা কর্মীদের ফুড এক্সপোর রঙিন লিফলেট দিয়ে সম্ভাষণ। মেলায় অংশ নেয়া দেশী-বিদেশী কোম্পানির স্টল, আয়োজনের খুঁটিনাটিসহ বিস্তারিত তথ্য এতে তুলে ধরা হয়েছে। গেট পার হয়ে ডান দিকে চীনা কোম্পানি বিয়ন্ডের সুসজ্জিত স্টল। স্টলের সামনে দাঁড়াতেই বিনয়ী শুভেচ্ছা জানান কোম্পানির ইন্টারন্যাশনাল সেলস ম্যানেজার মেরি লিয়্যু। আন্তরিক হেসে বর্ণনা করেন বিয়ন্ডের ফ্রুট প্রসেসিংয়ের নানা যন্ত্রপাতির। স্টলের ভেতরে প্রজেক্টরে আনারস ও আম থেকে জুস, আচার, জেলিসহ শুকনো খাবার তৈরির প্রক্রিয়াও দেখিয়ে দিচ্ছেন সঙ্গে সঙ্গে।

লিয়্যু জানালেন, কোম্পানিটি দ্বিতীয়বারের মতো এ মেলায় অংশ নিচ্ছে। মেলায় অংশগ্রহণের জন্যই তার চীন থেকে উড়ে আসা। বাংলাদেশী মানুষের সরল আচার-ব্যবহার এবং ইতিবাচক ব্যবসায়িক মনোভাব তার ভালো লেগেছে। অনেকেই ফ্রুট প্রসেসিং যন্ত্র তাদের কোম্পানি থেকে আমদানির ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছেন। সাজানো-গোছানো এ আয়োজনে বেশ সন্তুষ্ট বিয়ন্ডের ব্যবস্থাপনা পরিষদ। bapa-18

আন্তর্জাতিক ও দেশীয় প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং এগ্রো সেক্টরে আধুনিক প্রযুক্তির পরিচিতি তুলে ধরার লক্ষ্যে এ আয়োজন। গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া ‘চতুর্থ বাপা ফুডপো ইন্টারন্যাশনাল এক্সপো-২০১৬’ শেষ হবে আজ শনিবার সন্ধ্যা ৭টায়। এক্সপোর আয়োজক বাংলাদেশ এগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশন (বাপা) ও এক্সট্রিম এক্সিবিশন অ্যান্ড ইভেন্ট সলিউশন।

এক্সপো সম্পর্কে মত তুলে ধরেন বাপার সভাপতি এএফএম ফখরুল ইসলাম মুন্সি। তিনি বলেন, সময়ের সঙ্গে বাংলাদেশের খাদ্য প্রক্রিয়াজাত সেক্টরের সমৃদ্ধি বাড়ছে। এতে যুক্ত হচ্ছে বৈচিত্র্যতা। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের খাদ্য সেক্টরকে তুলে ধরতে এ ধরনের আয়োজন সহায়ক। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ সৃষ্টি হবে। মেলায় বিদেশী কোম্পানির উপস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যেকোনো আয়োজনের পূর্ণতা পেতে কয়েক বছর সময় লাগে। আমাদের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাইরের দেশ ও প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতি বাড়ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

ফুডপ্রো এক্সপোর সঙ্গে এবার যুক্ত হয়েছে ‘ষষ্ঠ এগ্রো বাংলাদেশ এক্সপো-২০১৬’ ও ‘রাইস অ্যান্ড গ্রেইনটেক এক্সপো-২০১৬’ নামের আরো দুটি প্রদর্শনী। এগ্রো বাংলাদেশ এক্সপো মূলত কৃষিপ্রযুক্তি ও কৃষিযন্ত্রের প্রদর্শনী। আর রাইস অ্যান্ড গ্রেইনটেক এক্সপো হলো চাল উত্পাদন ও প্রক্রিয়াজাতের যন্ত্রপাতির প্রদর্শনী। মেলায় রয়েছে কারিগরি সেশনও। এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সেক্টরের বিশেষজ্ঞরা তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন এবং নানা স্তরের উদ্যোক্তাদের প্রশ্নের উত্তর দেন। এছাড়া অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের বিজনেস ম্যাচিং সেশনের ব্যবস্থা আয়োজনকে করেছে আরো বর্ণাঢ্য।

প্রদর্শনীতে বাংলাদেশসহ ভারত, থাইল্যান্ড, কোরিয়া, তাইওয়ান, চীন, জার্মানি, সিঙ্গাপুর, জাপান, নেদারল্যান্ডস, স্পেন, তুরস্ক, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া— ১৩টি দেশের শতাধিক প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। বাপার সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান জানান, বাপার ৪৭৯ জন সদস্য দেশের ফুড প্রসেসিংয়ের সঙ্গে যুক্ত। বর্তমানে কেবল বাপার সদস্যরাই প্রক্রিয়াজাত খাদ্য ১৪০টি দেশে রফতানি করছেন। গত অর্থবছরে এ সদস্যদের আয় ২০০ মিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালের মধ্যে এ আয়ের পরিমাণ ১ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।  bapa-38

প্রদর্শনীতে দেশে কৃষিজাত পণ্য ও কৃষিভিত্তিক শিল্পের বিশাল এ প্রদর্শনীতে তুলে ধরা হচ্ছে মেশিনারিজ, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভরসহ নানা ধরনের শিল্পপণ্য। আধুনিক মেশিনারিজ দিয়ে কীভাবে পণ্য তৈরি করা যায়, তার প্রযুক্তিগত ধারণা পাওয়া যাচ্ছে প্রদর্শনীর বিভিন্ন স্টল থেকে। এখানে ভোক্তা থেকে শুরু করে সারা দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের উদ্যোক্তারাও এসেছেন। তারা ঘুরে ঘুরে দেখছেন ও নানা বিষয়ে প্রশ্ন করে জেনে নিচ্ছেন নিজের কাঙ্ক্ষিত উত্তর।

আয়োজক এক্সট্রিম এক্সিবিশন অ্যান্ড ইভেন্ট সলিউশনের ম্যানেজিং ডিরেক্টর চাঁন মোহন সাহা জানান, শুধু উদ্যোক্তারা নন, সাধারণ গ্রাহকদের কাছে পণ্যের মান কীভাবে রক্ষা করা হয়, কীভাবে পণ্য প্যাকেটজাত করা হয় এবং কীভাবে দেশে পরিবেশবান্ধব শিল্প গড়ে তোলা যায়, সেসব বিষয়ের প্রক্রিয়াগত পদ্ধতি ভিডিওর মাধ্যমে উপস্থাপন করা হচ্ছে। মেলায় বিভিন্ন স্টল থেকে ক্ষুদ্র থেকে শুরু করে বড় উদ্যোক্তারা যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে পছন্দের যন্ত্রপাতি ক্রয় করতে পারেন।

প্রদর্শনীতে উদ্যোক্তাদের লক্ষণীয় ভিড় দেখা যায়। তবে সাধারণ দর্শনার্থীদের উপস্থিতি ছিল কম। একই সঙ্গে এগ্রো বিজনেসের সবচেয়ে বড় প্রদর্শনী হলেও এর প্রচারণা কম ছিল বলেও উল্লেখ করেন দর্শনার্থীরা। তাদের বক্তব্য, গণমাধ্যম, আমাদের দেশে অবস্থিত বিভিন্ন দেশের দূতাবাস, আন্তর্জাতিক নানা ব্যবসায়ী ফোরামের মাধ্যমে এর প্রচারণা বাড়ানো যেত। তাহলে হয়তো আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর মতো আরো দেশ ও প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ বাড়ত।

ধানমন্ডি থেকে ছেলেমেয়েকে সঙ্গে করে মেলায় ঘুরতে এসেছিলেন একটি বহুজাতিক কোম্পানির কর্মকর্তা শায়লা মেহজাবিন। তিনি জানান, প্রদর্শনীর আয়োজনে ত্রুটি নেই। তবে প্রদর্শনী কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত ছিল। রাজধানীর একটি প্রান্তে প্রদর্শনীর আয়োজন হওয়ায় সর্বস্তরের দর্শনার্থীরা আসতে পারছেন না।  favicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment