কক্সবাজার-চট্টগ্রাম উপকূলে লবণ চাষ
- অর্থ ও বাণিজ্য
কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলার সমুদ্র উপকূলীয় সাত উপজেলায় লবণ উৎপাদন শুরু হয়েছে। পরিবেশ অনুকূলে থাকায় নভেম্বরের প্রথম থেকে পণ্যটির উৎপাদন শুরু হলেও এখনো লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করতে পারেনি বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থা (বিসিক)। তবে চলতি মৌসুমে মহেশখালী ও টেকনাফে ভাঙা বেড়িবাঁধ সংস্কার না করায় এবং বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কারণে লবণ আবাদে জমির পরিমাণ কমতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, চলতি লবণ উৎপাদন মৌসুমে (নভেম্বর-মে) কক্সবাজার জেলার চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, কক্সবাজার সদর, টেকনাফ ও চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলার উপকূলীয় এলাকায় লবণ উৎপাদনকাজ শুরু হয়েছে। সাধারণত আবহাওয়া লবণ চাষের অনুকূলে থাকলে এবং উৎপাদন মৌসুমে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা গেলে চাষীরা দিনরাত খেটে লক্ষ্যমাত্রার অধিক লবণ উৎপাদন করে থাকেন। এরই মধ্যে কুতুবদিয়াসহ কয়েকটি এলাকায় লবণ উৎপাদন শুরু হয়েছে। তবে অধিকাংশ প্রান্তিক লবণচাষী সহায়-সম্বলহীন হওয়ায় মহাজনের টাকায় লবণ চাষের উদ্যোগ নিচ্ছেন বরাবরের মতো। তবে ভারত, মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশ থেকে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে লবণ আমদানির পাঁয়তারা নিয়ে তাদের মনে শঙ্কা কাজ করছে। প্রতি বছরই একশ্রেণীর লবণ মিল মালিক সরকারকে ভুল বুঝিয়ে এ কাজটি করে থাকেন। ফলে প্রায় প্রতি বছর উৎপাদনের মাঝপথে লবণ উৎপাদনে চাষীদের উত্সাহে ভাটা পড়ে।
বিসিক কক্সবাজারস্থ লবণ প্রকল্প অফিস জানায়, গেল মৌসুমে কক্সবাজারের চকরিয়া-পেকুয়াসহ সাত উপজেলার উপকূলীয় এলাকার প্রায় ৬০ হাজার একর এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার ৭ হাজার ২৫৬ একর জমিতে লবণ উৎপাদনে নামেন চাষীরা। সরকারিভাবে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৮ লাখ টন। কিন্তু আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। গত মৌসুমে উৎপাদন হয় ১৫ লাখ ৫৫ হাজার টন লবণ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উৎপাদন কমায় স্থানীয় চাহিদা পূরণে সরকার দেড় লাখ টন লবণ আমদানির অনুমতি দেয় মিল মালিকদের।
মহেশখালীর লবণ চাষী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি ছৈয়দুল কাদের বলেন, ‘গেল লবণ উৎপাদন মৌসুমের শেষ দিকে আবহাওয়া বৈরী থাকলেও সরকারের নির্ধারিত উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়। তার পরও কোরবানির ঈদের সময় পশুর চামড়া সংরক্ষণে বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহের কথা বলে কিছু লবণ আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সে সুযোগে কয়েক লাখ টন অতিরিক্ত লবণ আমদানি করা হয়। এতে একদিকে উৎপাদকরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে ভারত ও মিয়ানমার থেকে পণ্যটি আমদানি করতে হয়েছে।
এ ব্যাপারে কক্সবাজারের লবণ শিল্প উন্নয়ন কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আফসার উদ্দিন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘নভেম্বরের শুরু থেকে লবণ উৎপাদন শুরু হলেও এখনো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র ঠিক হয়নি, এর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে।’
বিসিকের তথ্যমতে, কক্সবাজার-চট্টগ্রাম উপকূলের অর্ধলক্ষাধিক চাষী লবণ আবাদ করেন। এসব চাষী আরো অর্ধলক্ষাধিক শ্রমিক লবণ চাষাবাদে নিয়োগ করে থাকেন। ফলে লক্ষাধিক উপকূলীয় বাসিন্দা এ লবণ চাষের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। এছাড়া লবণ পরিবহন, মিলিং ও বাজারজাতে চার থেকে পাঁচ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত হয়ে বছরের প্রায় ছয় মাস জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। আর এসব কর্মক্ষম লোকের আয়ের ওপর নির্ভরশীল ২০ থেকে ২৫ লাখ পোষ্যের পরম প্রত্যাশা লবণ চাষ থেকে তাদের জীবিকা নির্বাহ চলবে। তাদের এ প্রত্যাশার কথা ভেবে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর এ কাজে আরো বেশি মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।