রপ্তানি হচ্ছে মাছের হরমোন
- অর্থ ও বাণিজ্য
রেণু পোনা উৎপাদনে প্রাকৃতিক হরমোন হিসেবে পিটুইটারি গ্লান্ড (পিজি) ব্যবহৃত হয়। মাছের মাথা থেকে এই পিজি সংগ্রহ ও বৈজ্ঞানিকভাবে প্রক্রিয়াজাত করে বিশ্বের ২১টি দেশে রপ্তানি করছে যশোরের ইউনাইটেড এগ্রো ফিশারিজ। অবশ্য এই রপ্তানি অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে, মানে কুরিয়ারের মাধ্যমে পাঠাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
হ্যাচারির পুকুরে প্রজননের সময় মা ও পুরুষ মাছের দেহে নির্দিষ্ট মাত্রায় পিজি সিরিঞ্জের মাধ্যমে পুশ করা হয়। এতে মাছের দেহে উত্তেজনা আসে। এ সময় মাছের প্রজনন হয়। প্রাকৃতিক এ হরমোন ব্যবহারে মাছের জীবনচক্রে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না। এমনটাই জানালেন যশোর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শেখ শফিকুর রহমান।
মাছের মাথা কেটে পিজি সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য বাংলাদেশে একমাত্র অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান হচ্ছে যশোরের ইউনাইটেড এগ্রো ফিশারিজ। যশোরের দুটি প্রতিষ্ঠান মাথাবিহীন মাছ রপ্তানি করে। তাদের কাছ থেকে মাথা সংগ্রহ করে পিজি বের করে সংরক্ষণ করে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া জেলার বিভিন্ন বাজার থেকে একইভাবে প্রাকৃতিক এই হরমোন সংগ্রহ করে তারা। রপ্তানির পাশাপাশি ময়মনসিংহ, ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলার হ্যাচারিতে এ হরমোনের পিজি পাঠায় ইউনাইটেড এগ্রো।
ইউনাইটেড এগ্রো ফিশারিজের স্বত্বাধিকারী লিয়াকত আলী বলেন, ‘গত দুই বছরে প্রায় চার কোটি টাকা মূল্যের পিজি নমুনা হিসেবে রপ্তানি করেছি আমরা। প্রতি গ্রাম পিজি বর্তমানে ৮০ মার্কিন ডলারে রপ্তানি হয়।’ তিনি বলেন, বড় আকারে পিজি রপ্তানির জন্য ইরাকসহ কয়েকটি দেশের সঙ্গে কথা হচ্ছে।
লিয়াকত আলী বলেন, সারা দেশে নিবন্ধিত হ্যাচারির সংখ্যা ৯৬৪টি। এসব হ্যাচারিতে বছরে রেণু উৎপাদিত হচ্ছে ৫৪ লাখ ৭৫ হাজার ৪৯ মেট্রিক টন। সেই হিসাবে পিজির চাহিদা রয়েছে বছরে ৪০ থেকে ৫০ কেজি। চলতি বছর দেশের বিভিন্ন জেলায় ৪ কেজি ২০০ গ্রাম শুকনা পিজি পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া রাশিয়া, ইরাক, ব্রাজিল, জার্মানি, চীনসহ বিভিন্ন দেশে ১ কেজি পিজি রপ্তানি করা হয়েছে।
সম্প্রতি শহরের বড় বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, মাছের আঁশ ছাড়িয়ে মাছ সাইজ করে কেটে দেওয়ার জন্য বঁটি নিয়ে বাজারে বসেছেন কয়েকজন ব্যক্তি। ক্রেতারা খুচরা মাছ কিনে তাঁদের কাছে দিলে তাঁরা আঁশ ছাড়িয়ে সাইজ করে কেটে দিচ্ছেন। প্রত্যেকের বঁটির পাশে রসায়ন ভর্তি ছোট ছোট দু-একটি কাচের বোতল রাখা আছে। মাছ কাটার সময় কার্পজাতীয় মাছ যেমন, রুই, কাতলা, সিলভার, মৃগেলসহ বিভিন্ন মাছের মাথার ভেতর থেকে ছোট একটি দানা (পিজি) সংগ্রহ করে বোতলে সংরক্ষণ করছেন তাঁরা।
জানতে চাইলে খান জাহান আলী নামের একজন বলেন, ‘যশোরের বড় মাছবাজারে আমরা ১৮ জন মাছ কাটার কাজ করি। এর মধ্যে ১২ জন মাছের মাথার ভেতর থেকে পিজি সংগ্রহ করেন। সবার পিজি এক জায়গায় করে কোম্পানির কাছে দিয়ে আসি। প্রতিটি পিজি ২ থেকে ৩ টাকা দাম পাওয়া যায়।’ বাজার থেকে প্রতিদিন গড়ে ৫০০টির মতো পিজি সংগ্রহ হয় বলে জানান তিনি।
দেশের বেশির ভাগ হ্যাচারিতে এখনো সংগৃহীত পিজি রোদে শুকিয়ে মাছের দেহে ব্যবহার করা হয়। এতে গুণগত মান ঠিক থাকে না। মাছের উৎপাদন ব্যাহত হয়। যে কারণে ২০১৩ সাল থেকে বৈজ্ঞানিক উপায়ে পিজি প্রক্রিয়াজাত করার কাজ শুরু করে ইউনাইটেড এগ্রো।
এমন তথ্য দিয়ে লিয়াকত আলী বলেন, প্রাকৃতিক হরমোন ব্যবহারের পাশাপাশি চীন থেকে কৃত্রিম হরমোন আমদানি করে হ্যাচারিতে ব্যবহার করা হয়। তবে এতে মাছের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়। মা মাছ মারা যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। কিন্তু প্রাকৃতিক পিজি ব্যবহারে সে ঝুঁকি থাকে না।
যশোর জেলা মৎস্য হ্যাচারি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহিদ গোলদার বলেন, দেশে মাছের রেণু পোনা উৎপাদনের একটি বড় অংশ জোগান দেওয়া হয় যশোর থেকে। রেণু উৎপাদনের জন্য যশোর জেলার ৬০টি হ্যাচারিতে প্রতিবছর ২ থেকে ৩ কেজি পিজি লাগে।