বিশ্ববাজারে যশোরের সবজি
- অর্থ ও বাণিজ্য ডেস্ক
দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এখন বিশ্ববাজারেও যাচ্ছে যশোরের সবজি। প্রথমবারের মতো গত ডিসেম্বরে দুই দফায় ২৩ লাখ টাকা মূল্যের বাঁধাকপি ও ফুলকপি মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে রপ্তানি হয়েছে। আগামী তিন মাসে যশোর থেকে আরও ৩০ লাখ মার্কিন ডলার বা ২৪ কোটি টাকার সবজি রপ্তানি হবে। এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে ঢাকার রাইসা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সই করেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ জেলায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ হচ্ছে। বছরে দুই মৌসুমে মোট ছয় লাখ টন সবজি উৎপাদিত হয়। জেলার মানুষের চাহিদা বছরে এক লাখ মেট্রিক টন। বাকি পাঁচ লাখ মেট্রিক টন ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যায়। এখন থেকে বিদেশেও যাবে।
রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান রাইসা এন্টারপ্রাইজের নির্বাহী পরিচালক শেখ আসাদুজ্জামান বলেন, ‘যশোর সদর উপজেলার ৭৪ জন কৃষক রপ্তানির উপযোগী বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন ও সরবরাহ করছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতায় দ্বিতীয় শস্য বহুমুখীকরণ প্রকল্পের (এসসিডিপি) মাধ্যমে ওই কৃষকদের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে।’
চুক্তিবদ্ধ ওই কৃষকেরা ৫০ বিঘা জমিতে বাঁধাকপি, ফুলকপি, শিম, বেগুন, গাজর, মিষ্টিকুমড়া ও গোল আলু উৎপাদন করছেন। এসব পণ্য মোড়কীকরণের জন্য এসসিডিপি প্রকল্পের অধীনে সদর উপজেলার বড় হৈবতপুর ও আবদুলপুর গ্রামে কৃষিপণ্য সংগ্রহ ও বিপণনকেন্দ্র নামে দুটি প্রতিষ্ঠান হয়েছে। এ দুটি কেন্দ্রে পণ্য পৌঁছে দিয়ে তার দাম নিয়ে যান কৃষকেরা।
জানতে চাইলে এসসিডিপির আঞ্চলিক প্রকল্প ব্যবস্থাপক সুনীল কুমার রায় বলেন, ‘প্রকল্পের প্রথম উদ্দেশ্য ছিল উচ্চমূল্যের ফসলের উৎপাদন ও আবাদি এলাকা বাড়ানো। দ্বিতীয় ও তৃতীয় উদ্দেশ্য হচ্ছে উৎপাদিত পণ্য সুষ্ঠু বাজারজাত ও কৃষিপণ্যের বাণিজ্যিকীকরণ। সে অনুযায়ী আমরা পর্যাপ্ত ফসল উৎপাদন করেছি। এখন সুষ্ঠু বাজারজাতের জন্য কৃষি বিভাগের মাধ্যমে সবজি রপ্তানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
সম্প্রতি বড় হৈবতপুর গ্রামের কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে রপ্তানিকারী প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকেরা সবজি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে কাগজে মুড়ে চটের বস্তায় ভরে রপ্তানির উপযোগী করছেন।
হাফানিয়া গ্রামের কৃষক শফিয়ার রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিটি বাঁধাকপি সাড়ে সাত টাকা দরে সরবরাহের জন্য কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। বাজারে দাম যা-ই থাকুক, প্রতিটি কপি সাড়ে সাত টাকা দরেই আমরা পাব। অন্য সবজির ক্ষেত্রে বাজারদর অনুযায়ী দাম দেওয়া হবে।’
আরেক কৃষক বসির আহম্মেদ বলেন, ‘আগে সবজি হাটে নিয়ে বিপাকে পড়তে হতো। বাজারে সবজির সরবরাহ বেশি হলে দাম কমে যেত। তখন অনেক সময় লোকসানে সবজি বিক্রি করতে হতো। এখন চুক্তিবদ্ধ হওয়ায় সবজি বিক্রির আর কোনো সমস্যা থাকল না। বাঁধাকপি ৮০ দিনের ফসল। এক বিঘা জমিতে ছয় হাজার কপির আবাদ হয়েছে। প্রতিটি কপি সাড়ে সাত টাকা দরে বিক্রি করে খরচ বাদে অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা লাভ থাকবে বলে আশা করছি।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হাসান আকতার বলেন, রাইসা এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ কৃষকদের খেতের মাটি পরীক্ষা থেকে শুরু করে ফসল তোলা পর্যন্ত কৃষি বিভাগের নিবিড় তত্ত্বাবধানে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন নিশ্চিত করা হচ্ছে। বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনের বিষয়ে কৃষকদের সময়ে সময়ে প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে।