বছর দুয়েকের মধ্যে গতিশীল হবে পুঁজিবাজার – অর্থমন্ত্রী
- অর্থ ও বাণিজ্য
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আশা করছেন, বছর দুয়েকের মধ্যেই গতিশীল ও কার্যকর হবে দেশের পুঁজিবাজার। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) আয়োজিত ‘পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যত্’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এ আশা প্রকাশ করেন।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, পুঁজিবাজার আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছে। কারণ আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ১৯৯৬ ও ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে ধস নামে। তবে এখন বাজার স্থিতিশীল পর্যায়ে চলে এসেছে। সবচেয়ে ভালো দিক হলো, এখন নিয়ম ও আইন-কানুনের মধ্য দিয়ে বাজার চলছে। বাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে। আশা করছি, আগামী দুই বছরের মধ্যে অর্থাত্ ২০১৮ সালের মধ্যেই আমরা একটি গতিশীল ও কার্যকর পুঁজিবাজার পাব।
বিএমবিএ সভাপতি এম ছায়েদুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম খায়রুল হোসেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান।
অর্থমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সব সময়ই পুঁজিবাজারের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ই দুটি বড় ধস হয়। তবে এখন বাজার একটি সন্তুষ্টির জায়গায় এসেছে। বর্তমানে বাজারের পরিসর ছোট হলেও আমি দেখছি এর ভবিষ্যত্ উজ্জ্বল।
তিনি আরো বলেন, একটি কার্যকর ও গভীর পুঁজিবাজারের জন্য শেয়ারের পাশাপাশি বন্ডকেও জনপ্রিয় করতে হবে। ভালো ভালো বন্ড ইস্যু করে সেগুলো তালিকাভুক্ত করা হলে অনেক বিনিয়োগকারীই তাতে সাড়া দেবেন বলে মনে করছেন অর্থমন্ত্রী।
অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে গেলেও এর ভিত্তি আরো মজবুত করতে হবে। অর্থনীতিতে সুশাসন বজায় থাকলেই সেটি সম্ভব হবে।
বিএসইসি চেয়ারম্যান ড. খায়রুল হোসেন বলেন, বর্তমানে বাজারে স্থিতিশীলতা এসেছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাজারে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। এখনো যতটুকু আস্থার সংকট রয়েছে তা বিনিয়োগকারীদের জ্ঞানের অভাবের কারণেই। তাই আমরা দেশব্যাপী আর্থিক জ্ঞান বাড়াতে পদক্ষেপ নিয়েছি। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাজারে তালিকাভুক্ত করার জন্য অর্থমন্ত্রীর পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, কেন এ প্রতিষ্ঠানগুলো আসছে না সে বিষয়ে খোঁজ নেয়া দরকার। আর কর সুবিধা থাকার পরও বহুজাতিক কোম্পানিগুলো কেন বাজারে আসতে আগ্রহী হয় না, সেটিও খতিয়ে দেখা দরকার। ট্রান্সফার প্রাইসিংয়ের নামে তারা বিশেষ কোনো সুবিধা নিচ্ছে কিনা, সেটিও দেখা প্রয়োজন।
বিএসইসি চেয়ারম্যান আরো বলেন, বাজারে অনেক দুর্বল কোম্পানি তালিকাভুক্ত হচ্ছে। তালিকাভুক্তির পরই এ কোম্পানিগুলো আর লভ্যাংশ দিতে পারে না, যা বাজারের জন্য ইতিবাচক নয়। তাই বাজারে কোম্পানি আনার সময়ই সেটি দুর্বল কোম্পানি কিনা সে ব্যাপারে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে সাবধান থাকতে হবে। কারণ বর্তমানে ডিসক্লোজার-ভিত্তিক তালিকাভুক্তি হচ্ছে। মূল কাজটি ইস্যু ব্যবস্থাপক করলেও এক্ষেত্রে বিএসইসি দেখে কোম্পানি তার সব তথ্য প্রকাশ করছে কিনা এবং যা প্রকাশ করেছে তা সত্য কিনা।
কোনো বিনিয়োগকারী এক বছরের জন্য শেয়ার ধারণ করলে তার মুনাফার ওপর কর ধার্য না করার সুপারিশ করেন বিএসইসির চেয়ারম্যান। এছাড়া মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড অবসায়নের ক্ষেত্রে অভিহিত মূল্যের চেয়ে যত বেশি দামে অবসায়ন হচ্ছে তার ওপর কর ধার্য না করে বিনিয়োগকারীর মূলধনী মুনাফার ওপর কর ধার্য করারও সুপারিশ করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ড. খায়রুল হোসেন আরো বলেন, আগামীতে সরকার ৫ লাখ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করতে চাইছে। এ বাজেট বাস্তবায়নে সরকার পুঁজিবাজার থেকে অর্থ নিতে পারে। বিভিন্ন অবকাঠামো প্রকল্পে টাকা তুলে সরকার বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারে। এতে পুঁজিবাজারের পরিসরও বাড়বে।
বিএমবিএর সভাপতি সাইদুর রহমান বলেন, মার্জিন ঋণ বিষয়ে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো যে সংকটে রয়েছে, তা থেকে বের হয়ে আসার জন্য
আমরা সরকারের কাছে নীতি সহায়তা চেয়েছি। ঋণাত্মক ইকুইটি সমন্বয় করা না গেলে শেয়ারবাজার উন্নয়নে যে লক্ষ্য রয়েছে, তা অর্জন সহজ হবে না। এজন্য মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর জন্য স্বল্প সুদে ঋণ পাওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) এমডি সাইফুর রহমান মজুমদার বলেন, আমাদের বাজারে মানসম্মত কোম্পানির অভাব রয়েছে। দুর্বল কোম্পানি অনেক বেড়ে গেলে বাজারের গভীরতা কমে। তিনি আরো বলেন, শেয়ারবাজারকে শক্তিশালী করতে হলে এর তারল্য ও লেনদেন অনেক বাড়াতে হবে। বর্তমানের লেনদেন স্টক এক্সচেঞ্জ কিংবা সংশ্লিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্যই সন্তোষজনক নয়।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, বাজার উন্নয়নের জন্য নীতিগত সহায়তা দরকার। তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে অন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা সরকার যেন হঠাত্ করে বা বিএসইসির সঙ্গে আলোচনা ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত না নেয় সেটিও মনে রাখতে হবে। কারণ এতে বাজার প্রভাবিত হয়। তিনি আরো বলেন, অনেক কোম্পানিই মুনাফা করে রিজার্ভ বাড়াচ্ছে। আবার অনেকে বছরের পর বছর ধরে কোনো কারণ ছাড়াই বোনাস শেয়ার দিচ্ছে। তাই বোনাস শেয়ার দেয়ার বিষয়ে একটি নীতিমালা থাকা দরকার। নগদ লভ্যাংশের ভিত্তিতে কোম্পানিগুলোর ক্যাটাগরিতে পরিবর্তনেরও দাবি জানান তিনি।
আলোচক প্যানেলে প্রাইম ফিন্যান্স ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের এমডি ও সিইও মোশারফ হোসেন এবং বিএমবিএ মহাসচিব খায়রুল বাশার মোহাম্মদ আবু তাহেরও উপস্থিত ছিলেন।