তৃতীয় প্রান্তিকে ৫৫% সাধারণ বীমা কোম্পানির আয় কমেছে
- অর্থ ও বাণিজ্য
গেল প্রান্তিকে এক বছর আগের তুলনায় খারাপ সময় অতিক্রম করেছে সাধারণ বীমা খাত। হালনাগাদ তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, তৃতীয় প্রান্তিকে এ খাতের ৫৫ শতাংশ তালিকাভুক্ত কোম্পানির আয় কমেছে। তবে প্রথম তিন প্রান্তিকের চিত্রটি ঠিক উল্টো। জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর সময়ে ৫৫ শতাংশ কোম্পানির আয় বেড়েছে। বছরের প্রথমার্ধে ভালো করার সুবাদে নয় মাসে এগিয়েছে কিছু কোম্পানি।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দেয়া বীমা কোম্পানিগুলোর তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, তালিকাভুক্ত ৩৩টি বীমা কোম্পানির মধ্যে তৃতীয় (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রান্তিকে ১৮টি কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে। ইপিএস অপরিবর্তিত রয়েছে দুটির ও কমেছে ১৩টি কোম্পানির। তবে অর্ধবার্ষিক মুনাফায় এগিয়ে থাকায় তিন প্রান্তিক শেষে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেশি ইপিএস দেখাতে সক্ষম হয় ১৮টি কোম্পানি।
তৃতীয় প্রান্তিকে সংখ্যাগরিষ্ঠ কোম্পানির আয় কমে যাওয়া প্রসঙ্গে ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অরুণ কুমার সাহা বণিক বার্তাকে বলেন, এফডিআর থেকে আয় কমছে। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ থেকেও রিটার্ন যথেষ্ট না। সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর আয় কমার পেছনে এটিই বড় কারণ বলে মনে করছেন তিনি।
সর্বশেষ অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, তৃতীয় প্রান্তিকে সবচেয়ে খারাপ করেছে নর্দান ইন্স্যুরেন্স। আগের বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস ৮৩ পয়সা থাকলেও চলতি বছর তারা লোকসানে চলে এসেছে। তৃতীয় প্রান্তিকে নর্দান ইন্স্যুরেন্স শেয়ারপ্রতি লোকসান দেখিয়েছে ৩৪ পয়সা। তবে বছরের প্রথমার্ধে এগিয়ে থাকায় তিন প্রান্তিক শেষে এর ইপিএস হয়েছে ২৫ পয়সা। যদিও আগের বছর একই সময়ে তা ছিল ১ টাকা ৩১ পয়সায়। গেল প্রান্তিকে গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারপ্রতি লোকসান হয় ৫ পয়সা। যদিও আগের বছরের একই সময়ে এর ইপিএস ছিল ১১ পয়সা। জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি ৭ পয়সা লোকসান দেখানো আরেক কোম্পানি প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের আগের বছর একই সময় ইপিএস ছিল ৪ পয়সা। তিন প্রান্তিক মিলে এ কোম্পানির ইপিএস হয়েছে ৮৭ পয়সা, আগের বছর একই সময়ে যা ছিল ৯৪ পয়সা।
তৃতীয় প্রান্তিকে পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের ইপিএস হয়েছে ৩৪ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৬৪ পয়সা। জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন প্রান্তিকে এ কোম্পানির ইপিএস হয়েছে ১ টাকা ৯৭ পয়সা, যা এর আগের বছর একই সময়ে ছিল ২ টাকা ২০ পয়সা। তৃতীয় প্রান্তিকে ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্সের ইপিএস হয়েছে ৫৯ পয়সা, যা এর আগের বছর একই সময়ে ছিল ৭২ পয়সা। অন্যদিকে প্রথম তিন প্রান্তিকে কোম্পানিটির ইপিএস দাঁড়িয়েছে ২ টাকা ১৬ পয়সায়, আগের বছর একই সময়ে যা ছিল ২ টাকা ৭০ পয়সা।
বছরের প্রথম নয় মাসে প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সের ইপিএস দাঁড়িয়েছে ৬৩ পয়সায়, এক বছর আগে যা ছিল ৬৬ পয়সা। তবে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে কোম্পানিটির আয় অপরিবর্তিত রয়েছে।
তৃতীয় প্রান্তিকে অগ্রণী ইন্স্যুরেন্সের ইপিএস হয়েছে ৬৩ পয়সা, যা এর আগের বছর একই সময়ে ছিল ৭০ পয়সা। জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ কোম্পানির ইপিএস দাঁড়িয়েছে ১ টাকা ৮০ পয়সায়, যা এর আগের বছর একই সময়ে ছিল ১ টাকা ৫৫ পয়সা।
জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এশিয়া প্যাসিফিক ইন্স্যুরেন্সের ইপিএস হয়েছে ৫৯ পয়সা, যা এর আগের বছর একই সময়ে ছিল ৬২ পয়সা। অন্যদিকে ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ কোম্পানির ইপিএস দাঁড়িয়েছে ১ টাকা ৬৫ পয়সায়, যা এর আগের বছর একই সময়ে ছিল ১ টাকা ৭৭ পয়সা।
তৃতীয় প্রান্তিকে বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের ইপিএস হয়েছে ১৩ পয়সা, যা এর আগের বছর একই সময়ে ছিল ২৮ পয়সা। প্রথম তিন প্রান্তিকে কোম্পানিটির ইপিএস দাঁড়িয়েছে ১ টাকা ৩৬ পয়সায়, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ১ টাকা ৭৮ পয়সা।
তৃতীয় প্রান্তিকে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের ইপিএস দাঁড়িয়েছে ১৯ পয়সা, যা এর আগের বছর একই সময়ে ছিল ২৯ পয়সা। নয় মাসে এ কোম্পানির ইপিএস হয়েছে ১ টাকা ২৬ পয়সা, এক বছর আগে যা ছিল ১ টাকা ৬৫ পয়সা।
এদিকে তৃতীয় প্রান্তিকে ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্সের ইপিএস বাড়লেও প্রথম তিন প্রান্তিকে কমেছে। নয় মাসে তাদের ইপিএস হয়েছে ৭৪ পয়সা, যা এর আগের বছর একই সময়ে ছিল ১ টাকা ১৮ পয়সা।
৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে ফেডারেল ইন্স্যুরেন্সের ইপিএস হয়েছে ১২ পয়সা, যা এর আগের বছর একই সময়ে ছিল ১৬ পয়সা। নয় মাসে কোম্পানিটির ইপিএস দাঁড়িয়েছে ৩৫ পয়সা, এক বছর আগে যা ছিল ৫৫ পয়সা।
তৃতীয় প্রান্তিকে জনতা ইন্স্যুরেন্সের ইপিএস হয় ২ পয়সা, এক বছর আগেও তা একই ছিল। নয় মাসে কোম্পানিটির ইপিএস হয় ৩৭ পয়সা, যা এর আগের বছর একই সময়ে ছিল ৪০ পয়সা।
তিন মাসে প্রভাতি ইন্স্যুরেন্সের ইপিএস হয়েছে ৩৮ পয়সা, আগের বছর একই সময়ে যা ছিল ৫৮ পয়সা। প্রথম তিন প্রান্তিকে কোম্পানিটির ইপিএস দাঁড়িয়েছে ১ টাকা ৩৪ পয়সা, যা এর আগের বছর একই সময়ে ছিল ১ টাকা ৩১ পয়সা।
গেল প্রান্তিকে রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সের ইপিএস ৫ পয়সা কমে হয়েছে ৩৩ পয়সা। প্রথম তিন প্রান্তিকে ইপিএস দাঁড়িয়েছে ২ টাকা ৫৭ পয়সা, এর আগের বছর একই সময়ে ছিল ২ টাকা ৩৯ পয়সা।
এর বাইরেও আয় কমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে— গ্রীন ডেল্টা, নিটল ইন্স্যুরেন্স, পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, তাকাফুল ইন্স্যুরেন্স। অন্যদিকে তৃতীয় প্রান্তিকে ইপিএস বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে— এশিয়া ইন্স্যুরেন্স, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স, সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স, কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্স, মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স, পিপলস ইন্স্যুরেন্স, প্রগতি ইন্স্যুরেন্স, রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স, রূপালী ইন্স্যুরেন্স, সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স ও ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স।
জনতা ইন্স্যুরেন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলুল হক খান জানান, এলসি খোলা কমে যাওয়ার কারণেও অনেক সাধারণ বীমা কোম্পানির আয় কমেছে। তৃতীয় প্রান্তিকে তার প্রতিষ্ঠানের আয়ও কমেছে। তবে আগামী দিনগুলোয় আয় বৃদ্ধির ব্যাপারে আশাবাদী তিনি।