আইপিওতে ব্যাপক চাহিদা বিনিয়োগকারীদের
- অর্থ ও বাণিজ্য ডেস্ক
পুঁজিবাজারে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে শেয়ার পাওয়ার চাহিদা অনেক বেড়েছে। তাই প্রাথমিক বাজারে বেড়েছে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ। চলতি বছর ছয়টি কোম্পানি ১৭২ কোটি ৭০ লাখ টাকার মূলধন সংগ্রহে আইপিও চাঁদা জমা দেওয়ার আহ্বান করেছিল। তাতে সাড়া দিয়ে শেয়ার কিনতে বিনিয়োগকারীরা জমা দেন ৪ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা। অর্থাত্ শেয়ার ক্রয়ের আবেদন জমা পড়েছে প্রকৃত শেয়ারের প্রায় ২৭ গুণ বেশি। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখনই সময় ভালো কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করার। এতে বাজারের দিকে বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ বাড়বে। ইতিবাচক হবে পুঁজিবাজার।
এদিকে চাহিদা অনেক বেশি থাকলেও আইপিওর মাধ্যমে বাজারে কোম্পানি আসার হার সে রকম বাড়েনি। তাই বেশি বেশি কোম্পানি বাজারে আসা দরকার বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তবে বেশি কোম্পানি আনতে গিয়ে দুর্বল ও খারাপ কোম্পানিগুলো যেন আসতে না পারে সে ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবে বলে মনে করেন তারা।
চলতি বছর আইপিও আসার পরিমাণ কম হওয়ার কারণ সম্পর্কে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ও স্টক এক্সচেঞ্জ কর্মকর্তারা জানান, গত ৩১ ডিসেম্বর আইপিও বিধিমালা সংশোধনের ফলে মূলধন উত্তোলনের অপেক্ষমাণ কোম্পানিগুলোকে নতুন করে আইপিও আবেদন করতে হচ্ছে। নতুন আইনের সব ধারার বাধ্যবাধকতা সম্পন্ন করে সব কোম্পানি পুনরায় আবেদনও করতে পারেনি। এ কারণে এ বছরের আইপিও কম এসেছে। আবার প্রিমিয়াম চাওয়া কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে বুকবিল্ডিং পদ্ধতি অনুসরণের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে আইনে। ফলে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আবেদন জমা দেওয়ার সময়ও বেড়েছে। তবে আগামী বছর আইপিওর সংখ্যা বাড়বে বলে মনে করেন তারা।
আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টস্-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, পুঁজিবাজারের প্রতি মানুষের অংশগ্রহণ বাড়ানোর একটি ভালো মাধ্যম হলো ভালো কোম্পানি তালিকভুক্ত করা। এর বড় উদাহরণ হলো গ্রামীণফোন। এখনও যদি মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানিগুলোকে বাজারে তালিকাভুক্ত করা যায়, বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়বে। তিনি বলেন, বাজারে অনেক কোম্পানি আসে যাদের মুনাফার প্রবৃদ্ধি তালিকাভুক্তির আগে থাকে একরকম, আর পরে আরেক রকম। এ ধরনের কোম্পানিগুলোর কারণে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে যায়। তাই মৌলভিত্তি দেখে কোম্পানি নিয়ে আসতে হবে।
এসব প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ড. খায়রুল হোসেন বলেন, বাজারে অনেক দুর্বল কোম্পানি তালিকাভুক্ত হচ্ছে। তালিকাভুক্তির পরই এ কোম্পানিগুলো আর লভ্যাংশ দিতে পারে না। যা বাজারের জন্য ইতিবাচক নয়। তাই বাজারে কোম্পানি আনার সময়ই কোম্পানি দুর্বল কী না সে ব্যাপারে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে সাবধান হতে হবে। কারণ বর্তমানে ডিসক্লোজার ভিত্তিক তালিকাভুক্তি হচ্ছে। তাই বিএসইসির দায়িত্ব হলো কোম্পানি তার সব তথ্য প্রকাশ করছে কী না এবং প্রকাশিত তথ্য সত্য কী না তা খতিয়ে দেখা। তিনি আরও বলেন, আগামীতে সরকার ৫ লাখ কোটি টাকার বাজেট করতে চাইছে। এ বাজেট বাস্তবায়নে পুঁজিবাজার থেকে টাকা নেওয়া যায়। বিভিন্ন অবকাঠামোগত প্রকল্পে টাকা তুলে সরকার বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারে। এতে পুঁজিবাজারের পরিসরও বাড়বে। এ ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করেন বিএসইসি চেয়ারম্যান।
এদিকে বাংলাদেশে অনেক বহুজাতিক কোম্পানি ও বড় মূলধনী কোম্পানি রয়েছে। এ কোম্পানিগুলোকে বাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার ব্যাপারে নানা সুবিধা দেওয়া হলেও তারা তালিকাভুক্ত হচ্ছে না। এর কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে বেসরকারি একটি মার্চেন্ট ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে হলে কোম্পানিগুলোকে দীর্ঘদিন ধরে ঘুরতে হয়। বিশেষ করে বিএসইসিতে দীর্ঘ সময় ধরে এর প্রক্রিয়া চলে। তাই কোম্পানিগুলো বাজারে আসতে চায় না। তা ছাড়া কিছু কোম্পানির উদ্যোক্তা কোম্পানির মালিকানা ছাড়তে চান না বলেও তালিকাভুক্তিতে তাদের আগ্রহ কম বলে জানান তিনি। তারা মনে করেন, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলে কোম্পানির সিদ্ধান্ত গ্রহণসহ নানা ইস্যুতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অনুমোদন নিতে হয়। এ বিষয়গুলোকে তারা এড়িয়ে চলতে চান। অথচ তালিকাভুক্তির ফলে কোম্পানি কর প্রদানের ক্ষেত্রে সুবিধা পান। এ ছাড়া কোম্পানির স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতাসহ নানা ক্ষেত্রে সামাজিক অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পায়।