‘পুঁজিবাজার নারী বিনিয়োগকারীদের জন্য উৎকৃষ্ট ক্ষেত্র’
- অর্থ ও বাণিজ্য ডেস্ক
খুজিস্তা নূর-ই-নাহরিন (মুন্নি) দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রথম নির্বাচিত নারী পরিচালক। এছাড়া তিনি মডার্ন সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করে ১৯৯৯ সালে মাত্র ৫০ হাজার টাকা নিয়ে পুঁজিবাজারে প্রবেশ করেন। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে সম্পৃক্ত আছেন পুঁজিবাজারের সঙ্গে।
: পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থাকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করছেন?
খুজিস্তা নূর–ই–নাহরিন : বর্তমান বাজারের অবস্থাকে ইতিবাচক বলা যায়। কারণ অনেক মৌল বৃত্তি সম্পূর্ণ কোম্পানির শেয়ারের দর যৌক্তিক দামের নিচে রয়েছে। তবে শেয়ারবাজার যেহেতু একটি স্পর্শকাতর বাজার তাই দেশের রাজনৈতি, অর্থনীতিতে কেনো আঘাত আসলে শেয়ারবাজারে তার প্রভাব পড়ে। সম্প্রতি বিদেশি নাগরিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বাজার কিছুটা থমকে গেছে।
এছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতা বিভিন্ন নতুন নিয়মনীতি আর পূর্বের শেয়ার কেলেঙ্কারির কারণে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা আস্থার সংকট রয়েছে। বড় বড় বিনিয়োগকারীরা বাজার পর্যবেক্ষণ করছেন। তবে সরকার এবং বাজার-সংশ্লিষ্টরা বাজারকে স্থায়ীভাবে স্থিতিশীলতায় ফেরাতে চেষ্টা করে যাচ্ছে। চলতি বাজেটেও পুঁজিবাজরের দিকে সর্বোচ্চ নজর দিয়েছে সরকার। আশা করি অচিরেই বাজার পরিস্থিতি স্থায়ীভাবে স্থিতিশীল হবে।
: প্রাথমিক বিনিয়োগকারীরা দুধের মাছি কেন ?
খুজিস্তা নূর–ই–নাহরিন : প্রাইমারি মার্কেটে আইপিওর মাধ্যমে পাওয়া শেয়ার সেকেন্ডারি মার্কেটে বিক্রি করে বিনিয়োগকারীরা লাভ নিয়ে চলে যাচ্ছে। তারা সেকেন্ডারি মার্কেটে আসছে না। তারা কোনো ঝুঁকি না নিয়ে সুসময়ের বন্ধুর মত শুধু লাভ নিয়ে চলে যাচ্ছে।
: এতে পুঁজিবাজারে কোনো ধরনের প্রভাব পড়ছে।
খুজিস্তা নূর–ই–নাহরিন : গত পাঁচ বছরে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে অনেক নতুন কোম্পানি দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। কিন্তু সেই হারে বাজারে বাড়েনি তারল্য প্রবাহ। সেকেন্ডারি মার্কেটে শেয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও বাড়েনি বিনিয়োগকারী। দেশের শেয়ারবাজারে ৩১ লাখের বেশি বিনিয়োগকারী থাকলেও সেকেন্ডারি মার্কেটে (যারা সব সময় বেচাকেনা করে) বিনিয়োগকারীর সংখ্যা মাত্র ১০ থেকে ১২ লাখ। তাই শেয়ারবাজারে বাড়েনি লেনদেন প্রবাহ। আর চাহিদার তুলনায় শেয়ার সরবারহ বেশি থাকায় বাজারে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
গত চার পাঁচ বছরের বাজারে কোম্পানির সংখ্যা বাড়লেও লেনদেন আগের মতই আছে। ২০১১-১২ সালে যেখানে লেনদেন ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি হত এখনো তাই হচ্ছে। আগের তুলনায় ব্রোকারেজ হাউসগুলোর ব্যয় বাড়লেও আয় বাড়েনি। তাই লোসানের মুখে পড়েছে হাউসগুলো। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে শাখা অফিস। অনেক ব্রোকারেজ হাউজও বন্ধের পথে।
অন্যদিকে বাজারে যেসব নতুন কোম্পানি আইপিওর মাধ্যমে এসেছে তা সব আবার ভালো কোম্পানি নয়। অনেক কোম্পানি বাজারে এসে কারসাজি করে অস্বাভাবিক দর বাড়িয়ে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি করেছে। ফলে নতুন কোম্পানির চাপে আগের মৌল বৃত্তি সম্পূর্ণ কোম্পানিগুলোর শেয়ারের মূল্য কমে যাচ্ছে। এতে বাজার ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
তাই প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) আসার আগে নিয়ন্ত্রক সংস্থার আরো যাচাই বাছাই করে অনুমোদন দেয় প্রয়োজন। বিশেষ করে শুধু ব্যাংক ঋণ পরিশোধে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে না দেওয়া। একইসঙ্গে নতুন কোম্পানি বা তালিকাভূক্ত কোম্পানির পরিচালকরা যদি পারিবারিক সদস্য হয়ে থাকেন, সে ক্ষেত্রেও নজরদারি বাড়ানো উচিত।
: একজন নারী বিনিয়োগকারী হিসেবে অন্যান্য নারীদের পুঁজিবাজার সম্পর্কে আপনার বার্তা কি?
খুজিস্তা নূর–ই–নাহরিন : বিনিয়োগের ক্ষেত্র হিসেবে পুঁজিবাজার নারী বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি উৎকৃষ্ট ক্ষেত্র। কারণ এখানে পেসি শক্তির দরকার হয় না। প্রয়োজন মেধা শক্তির। পুঁজিবাজারে মেধা কাজে লাগিয়ে বিনিয়োগ করলে লাভবান হওয়া যায়। আর প্রায় ১৭ থেকে ১৮ বছর যাবৎ আমি শেয়ার বাজারের সঙ্গে আছি। পুরুষের পাশাপাশি সমান তালে বিনিয়োগ করে যাচ্ছি। কোথাও বাধার সম্মুখীন হয়নি। বরং নারী হিসেবে সবার সহযোগিতা পেয়েছি।
: নারী বিনিয়োগকারীদের জন্য মডার্ন সিকিউরিটিজ কি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে?
খুজিস্তা নূর–ই–নাহরিন : পুঁজিবাজারে বেশি সংখ্যক নারী বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে সর্বোচ্চ নজর দিয়েছি। নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। তারা যেন স্বাচ্ছন্দ্যে লেনদেন করতে পারেন এজন্য মডার্ন সিকিউরিটিজে আলাদা বুথের ব্যবস্থা করেছি। যেখানে মহিলা ট্রেডারের মাধ্যমে নারী বিনিয়োগকারীদের লেনদেনে সহায়তা করা হয়। আপনি দেখবেন অনেক সিকিউরিটিজ হাউজে অল্প পুঁজির বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের সুযোগ পায় না। কিন্তু মডার্ন সিকিউরিটিজে অল্প পুঁজির বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। আমরা সর্বদাই বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষায় কাজ করে যাচ্ছি।
: বর্তমান অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের প্রতি আপনার পরামর্শ কি?
খুজিস্তা নূর–ই–নাহরিন : পুঁজিবাজারে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তাই হুজুগে গা ভাসাবেন না। বিনিয়োগ করার আগে শিখতে হবে এবং এ সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা থাকতে হবে। তারপর বাজারে আসতে হবে। অন্যথায় এ ব্যবসায় আসা উচিত নয়। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে মুনাফা করতে চাইলে বেয়ারিস মার্কেটে শেয়ার কিনতে হবে এবং বুলিস মার্কেটে বিক্রি করতে হবে। তবে কখনই লোন করে বা আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে ধার করে বিনিয়োগ করবেন না। নিজস্ব পুঁজির ১০ ভাগের ১ ভাগ দিয়ে শুরু করুন। কখনই একটা সেক্টরে বিনিয়োগ করা যাবে না। কোম্পানির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জেনে-শুনে বিনিয়োগ করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে বিভিন্ন সেক্টরে ভাগ ভাগ করে বিনিয়োগ করুন। সফলতা আসবেই।