পুঁজিবাজারে বিদেশিদের লেনদেন বেড়েছে চার গুণ
- অর্থ ও বাণিজ্য
পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ছে। বাজারের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, কম্পানির আর্থিক হিসাব-নিকাশ ও গবেষণার মাধ্যমে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে বিদেশিরা। বর্তমান বাজারে তারা কম দামে শেয়ার কিনছে। গত চার বছরে বিদেশিদের শেয়ার লেনদেন বেড়েছে চার গুণ। ২০১২ সালে বিদেশিদের শেয়ার লেনদেনের পরিমাণ ছিল এক হাজার ৯০৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা। চার বছর পর ২০১৬ সাল শেষে এই লেনদেনের পরিমাণ ৪ গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৭৭৩ কোটি ৩ লাখ টাকা। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
২০১০ সালে ধসের পর তলানিতে নেমে যাওয়া পুঁজিবাজার ছয় বছর পর আবারও ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। ওই সময় বাজারে ধসের কারণে কম্পানির শেয়ারের দাম ক্রমাগতভাবে কমতে কমতে তলানিতে নামে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারিয়ে কিংবা ক্ষতি হলেও কম দামে শেয়ার বিক্রি করে বাজার ছেড়েছে। আর তলানিতে থাকা কম্পানির শেয়ার দামের সুযোগে বাজারে প্রবেশ করেছে বিদেশি বিনিয়োগকারী। বাজারের গতিবিধি ও কম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন পর্যবেক্ষণ করে ক্রমাগতভাবেই বাড়াচ্ছে বিনিয়োগ। বর্তমান বাজারের ঊর্ধ্বগতির বিষয়ে বিদেশি বিনিয়োগের প্রভাবের কথা বলছেন পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্টরা।
তাঁরা বলছেন, ২০১০ সালে ধসের পর দেশীয় ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে দূরে ছিল। ধসের পর বাজারে আইনকানুন ও নানামুখী সংস্কারের ফলেই আবারও পুঁজিবাজারমুখী হয়েছে বিনিয়োগকারীরা। ক্ষতিতে থাকা পুরনো বিনিয়োগকারীরাও পোর্টফোলিওতে জমে থাকা শেয়ার নিয়ে সক্রিয় হয়েছেন। দেশের পুঁজিবাজারের সম্ভাবনা বিবেচনায় সক্রিয় হয়েছে বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও। লেনদেনে এসেছে গতিশীলতা ও ঊর্ধ্বমুখিতা, অব্যাহত রয়েছে পুঁজিবাজারে।
ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম মাজেদুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বেশি সক্রিয়। অন্যান্য পুঁজিবাজারের তুলনায় এখানকার শেয়ারের দাম অনেক নিচে থাকায় বিদেশিদের আগ্রহ বেশি। ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে বিদেশিদের লেনদেন দুই হাজার কোটি টাকার ঘরেই ছিল। তবে এই লেনদেন আট হাজার ৭০০ কোটি টাকারও বেশি হয়েছে। ’
সম্প্রতি পুঁজিবাজারের লেনদেন ও মূল্যসূচকে ব্যাপক উল্লম্ফন ঘটে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মূল্যসূচক অতীতের রেকর্ড ভেঙে ইতিহাস সৃষ্টি হয়। ক্রমাগতভাবেই লেনদেন বাড়তে বাড়তে দুই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। তবে একটানা উত্থান নিয়ে অনেকের মনেই শঙ্কার সৃষ্টি হয়। কারণ ২০১০ সালে বাজারে ধসের সময়ও ধারাবাহিকভাবেই লেনদেন ও সূচক বেড়েছিল। বাজার মূলধনও ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পায়। অতিরিক্ত লাভের আশায় সেই সময়ে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী জমিজমা বন্ধক কিংবা ঋণ করেও বাজারে বিনিয়োগ করে। পরবর্তী সময় বাজারে ধস নামায় কমতে থাকে লেনদেন ও সূচক। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারিয়ে বাজার ছেড়ে চলে যায়।
ওই সময়ের পর থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি পুঁজিবাজার। তবে নানামুখী সংস্কারের পর সম্প্রতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাজার। তলানিতে থাকা কম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ার সঙ্গে লাভ বেশি হওয়ায় পুরনো বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় হয়েছে। তবে বাজার একটানা ঊর্ধ্বমুখী হওয়া নিয়ে কারসাজির শঙ্কা করছে অনেকেই। অতীতে বাজার ধসে জড়িত থাকা ব্যক্তিরা নতুন করে সক্রিয় হয়ে আবারও বাজারকে প্রভাবিত করছে এমন অভিযোগও উঠেছে। তবে ডিএসই কর্তৃপক্ষ এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, বাজার অতিমূল্যায়িত হয়নি। পিছিয়ে পুঁজিবাজার সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গৃহীত পদক্ষেপের ফলেই এগিয়েছে। বাজার নিয়ে ভয়ের কোনো কারণ নেই। সতর্কতার সঙ্গে বিনিয়োগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, ২০১৬ সালে বিদেশি বিনিয়োগকারীর লেনদেন বেড়েছে ব্যাপকহারেই। ২০১৫ সালের বিদেশি বিনিয়োগকারীর শেয়ার লেনদেন থেকে এই বছর (২০১৬) লেনদেন বেড়েছে এক হাজার ৩০৮ কোটি টাকা। ২০১৫ সালে এই লেনদেন ছিল সাত হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা। চলতি বছরের শুরুতে লেনদেন অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেড়েছে বলে ডিএসই সূত্র জানায়। তবে লেনদেনের হিসাব মাসিক ভিত্তিতে করা হয় বলে সর্বশেষ লেনদেনের পরিমাণ জানা সম্ভব হয়নি।
গত বছরের লেনদেনের তথ্য বিশ্লেষণে জানা যায়, ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে বিদেশি বিনিয়োগের লেনদেন ছিল সাত হাজার ১৩৩ কোটি ৫৮ লাখ তিন হাজার ৩৪৯ টাকা। বছর শেষে এই লেনদেন দাঁড়িয়েছে আট হাজার ৭৭৩ কোটি তিন হাজার টাকা। বছরের প্রথম ১০ মাসে বিদেশিদের মাসিক শেয়ার লেনদেনের গড় পরিমাণ ছিল প্রায় ছয় শ থেকে সাত শ কোটি টাকার ঘরেই। কোনো মাসে লেনদেন কিছুটা বেশিও হয়। তবে শেষ দুই মাসে (নভেম্বর-ডিসেম্বর) মাসিক লেনদেন বেড়ে দাঁড়ায় হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি। একই সময়ে ২০১৫ সালে এই লেনদেন ছিল ছয় হাজার ১৩০ কোটি ৫৪ লাখ ৯২ হাজার টাকা। আগের বছরের তুলনায় ১০ মাসে বিদেশি বিনিয়োগকারীর লেনদেন বেড়েছে প্রায় ১০০০ কোটি টাকা অর্থাৎ ১৬.৩৬ শতাংশ লেনদেন বেড়েছে। এই সময়ে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রির চেয়ে কিনেছেন অনেক বেশি। ১০ মাসে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আগের বছরের চেয়ে ২৭.৬৮ শতাংশ বেশি শেয়ার কিনেছে আর বিক্রি করেছে মাত্র ৪.৭৩ শতাংশ।