লোকসানে রসুন আমদানিকারকরা
- অর্থ ও বাণিজ্য
দেশের বাজারে রসুনের দাম এখন কমতির দিকে। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক বাজার থেকে উচ্চমূল্যে পণ্যটি আমদানি করে কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে আমদানিকারকদের। ফলে প্রতি কেজি রসুনে তাদের ২০ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। অন্যদিকে দেশী রসুন বিক্রি করে লাভ করছেন কৃষক ও মজুদদাররা।
আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে চীনা রসুন বিক্রি হচ্ছে প্রতি টন ২ হাজার ১১০ থেকে ২ হাজার ১২০ ডলারে। প্রতি ডলারের মূল্য ৭৮ টাকা। সে হিসাবে প্রতি কেজি রসুনের মূল্য দাঁড়ায় ১৬৪ টাকা ৫৮ পয়সা থেকে ১৬৫ টাকা ৩৬ পয়সা। চট্টগ্রাম বন্দরে আসা পর্যন্ত এ খরচ পড়ছে। এর পর শুল্ক, গাড়ি ভাড়া, কুলি-মজুর, আড়তদারি খরচবাবদ কেজিপ্রতি রসুনের দাম পড়ে ১৮২-১৮৫ টাকা। অথচ বাজারে এখন আমদানিকৃত চীনা রসুন বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৬০-১৬২ টাকায়।
আন্তর্জাতিক বাজারে রসুনের দাম বেড়ে যাওয়ার সুফল পাচ্ছেন দেশের উৎপাদক ও মজুদদাররা। বর্তমানে পাইকারিতে দেশী রসুন বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১২০-১৩০ টাকায়। খুচরায় তা লেনদেন হচ্ছে ১৬০-১৬৫ টাকায়। যেখানে মৌসুমের শুরুতে রসুন প্রতি কেজি ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।
দেশের পাবনা, নাটোর ও ঈশ্বরদী এলাকার একশ্রেণীর মজুদদার উৎপাদন মৌসুমে কম টাকায় বিপুল পরিমাণ রসুন কিনে গুদামজাত করে রাখেন। পরে তারা সুবিধামতো দামে বিক্রি করেন। এছাড়া অবস্থাসম্পন্ন কৃষকরাও রসুন মজুদ রাখেন।
রাজধানীর পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের রসুন আমদানিকারক রাজবাড়ী ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী মো. আবদুল মাজেদ জানান, কৃষিপণ্য বিক্রি করে কখনো লোকসান আবার কখনো লাভ করা যায়। তবে লাভের চেয়ে এ বছর লোকসানের পরিমাণই বেশি। প্রতি কনটেইনার (২২ টনে এক কনটেইনার) রসুন আমদানি করে তাদের ৭-৮ লাখ টাকা লোকসান হচ্ছে। লোকসানের পরও কেন আমদানি করছেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এক মাস আগের কেনা ছিল। এছাড়া ধারণা করা হয়েছিল রসুনের দাম দেশেও বাড়বে। কিন্তু তা না বেড়ে উল্টো কমে যাওয়ায় কেজিপ্রতি ২০ টাকার ওপর লোকসান হচ্ছে। একই কথা জানালেন একই বাজারের মেসার্স সুরমা বাণিজ্যালয়ের স্বত্বাধিকারী ঝুটন চন্দ্র সাহা।
রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশনের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে বর্তমানে দেশী রসুন বিক্রি হচ্ছে মানভেদে প্রতি কেজি ১৪০-১৬০ টাকায়, যা এক বছর আগে বিক্রি হয়েছিল ৬০-৯০ টাকা। এখন আমদানিকৃত রসুন প্রতি কেজি ১৭০-১৯০ টাকায় বিক্রি হলেও গত বছরের একই সময় এর দাম ছিল ১০০-১২০ টাকা। এ সময়ের ব্যবধানে দেশী রসুনে দাম বেড়েছে শতকরা ১০০ এবং আমদানিকৃততে ৮৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
জানা গেছে, দেশে সবচেয়ে বেশি রসুন আবাদ হয় নাটোর জেলায়। এছাড়া রাজশাহী, পাবনা ও ফরিদপুর জেলায় ব্যাপকভাবে রসুন আবাদ হচ্ছে। রসুন আবাদ করে ভালো মুনাফা পাওয়ায় কৃষকরা দিন দিন এতে উত্সাহী হয়ে উঠছেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশীয় রসুন স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয়। তবে দানা বড় হওয়ায় চীনা রসুন অনেকের কাছে বেশ পছন্দের।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দ্রব্যমূল্য পূর্বাভাস সেল থেকে প্রাপ্য তথ্যে জানা গেছে, ২০১০ সালে পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী দেশে বছরে মোট রসুনের চাহিদা রয়েছে পাঁচ লাখ টন। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রসুন উৎপাদন হয়েছে ৪ লাখ ৩০ হাজার টন। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪ লাখ ৬৫ হাজার টনে। চাহিদার বাকি রসুন চীন থেকে আমদানি করা হয়।