চাহিদা কমায় নিম্নমুখী পাম অয়েলের দাম
- অর্থ ও বাণিজ্য
বিশ্ববাজারে পাম অয়েলের বুকিং দর রয়েছে বাড়তির দিকে। এর পরও দেশে পণ্যটির দাম এখন নিম্নমুখী। চাহিদা কমায় কয়েক দিনের ব্যবধানে ভোজ্যতেলটির দাম কমেছে মণে ৮০ টাকা। এদিকে চাহিদা বাড়ায় ঊর্ধ্বমুখী আছে সয়াবিন তেলের দাম।
দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন ট্রেডিং ও পাইকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল প্রতি মণ পাম অয়েল লেনদেন হয় ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৫৪০ টাকায়। কয়েক সপ্তাহ আগেও এ পরিমাণ পাম অয়েল লেনদেন হয়েছিল সর্বোচ্চ ২ হাজার ৫৮০ টাকায়। শীতে পাম অয়েলের চাহিদা কমায় পাইকারিতে নিম্নমুখী রয়েছে এর দাম। সামনের দিনগুলোয় এর দাম আরো কমবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে খাতুনগঞ্জে গতকাল সয়াবিন তেল বিক্রি হয় প্রতি মণ সর্বোচ্চ ৩ হাজার ১২০ টাকায়। মান ও কোম্পানিভেদে সয়াবিন ও পাম অয়েলের দামে পার্থক্য রয়েছে। পাইকারি বাজারে সিটি গ্রুপের সয়াবিন ও পাম অয়েলের দাম তুলনামূলক বেশি থাকে বলে বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে।
জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জের ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী আবদুর রাজ্জাক বণিক বার্তাকে বলেন, শীতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাম অয়েলের ক্রয়াদেশ কমে যায়। ফলে মিলগেট থেকেও সরবরাহ কমিয়ে দেয়া হয়। পাইকারি বাজারে পাম অয়েলের লেনদেন কমে যাওয়ায় দামও কমতে থাকে। তবে বিশ্ববাজারে পাম অয়েলের বুকিং দর ঊর্ধ্বমুখী থাকায় পাম অয়েলের বাজার আশানুরূপ কমেনি বলে জানিয়েছেন তিনি।
ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি বছর শীতের আগে সয়াবিন তেলের চাহিদা বেড়ে যায়। ওই সময়ে ট্রেডিং প্রতিষ্ঠানগুলো পাম অয়েলের পরিবর্তে সয়াবিন তেল লেনদেনে বেশি আগ্রহী থাকে। মজুদ প্রবণতার কারণেও অনেক সময় সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে যায়। তবে এখন শুধু চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে কমছে পাম অয়েলের দাম। শীতের প্রকোপ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে একদিকে পাম অয়েলের চাহিদা কমবে, অন্যদিকে সয়াবিন তেলের বাজার চাঙ্গা হবে।
সূত্রমতে, চট্টগ্রামভিত্তিক ভোগ্যপণ্য ব্যবসায়ীরা দেশে সবচেয়ে বেশি ভোজ্যতেল আমদানি ও পরিশোধন করে থাকেন। একসময় এস আলম, নূরজাহান গ্রুপ, মোস্তফা গ্রুপ ভোজ্যতেলের বাজার প্রথম সারিতে থাকলেও বর্তমানে টিকে গ্রুপ, এস এ গ্রুপও এ তালিকায় আছে। এস আলম, নূরজাহান ও মোস্তফা গ্রুপ সীমিত পরিসরে আমদানি করলেও ঢাকার মেঘনা ও সিটি গ্রুপ দেশের ভোজ্যতেলের বাজারে শীর্ষ স্থানে রয়েছে। তবে বর্তমানে সয়াবিন তেলের বাজারে একক আধিপত্য ধরে রেখেছে সিটি ও টিকে গ্রুপ।
উল্লেখ্য, প্রতি বছর দেশে রোজার আগে ভোজ্যতেলের চাহিদা বেড়ে যায়। সারা বছর প্রায় ১৫ লাখ টন ভোজ্যতেলের (পাম ও সয়াবিন) চাহিদা থাকলেও ওই সময় চাহিদা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। দেশীয় মিল মালিকরা মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে অপরিশোধিত পাম অয়েল আমদানি করলেও আর্জেন্টিনা থেকে সয়াবিন তেল আমদানি করে থাকেন। আমদানিকৃত পাম ও সয়াবিন মিলে পরিশোধনের পর বাজারে বিক্রি করা হয়। কারসাজি রোধে সরকার ২০১১ সালে ভোজ্যতেল, চিনি ও গম বিক্রিতে সরবরাহ আদেশ বা ডিও প্রথা বাতিল করলেও বর্তমানে ভিন্ন নাম দিয়ে একই পদ্ধতিতে পণ্য বিক্রি হচ্ছে। ফলে বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম স্থিতিশীল থাকলেও বিভিন্ন সময়ে বাজার কারসাজির সুযোগে নিত্য এসব পণ্যের দাম বেড়ে যায়।