ফ্যাশন : বিশ্বের সপ্তম বৃহৎ অর্থনীতি
- অর্থনীতি ডেস্ক
‘ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি’ শিল্পকলার চেয়ে কি কোনো অংশে কম? দৈনন্দিন জীবনে আমরা বাঁচি ফ্যাশন নিয়েই, নতুন একটি ট্রেন্ড আলোড়ন তোলে বিশ্বব্যাপী ক্রেতাদের মাঝে। বর্তমানে বিশ্ব অর্থনীতিতে এই ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি প্রতিবছর ২ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলার (২ লাখ ৪০ হাজার কোটি) মূল্য সংযোজন করে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) পরিপ্রেক্ষিতে বিবেচনা করা হলে ফ্যাশনশিল্পকে বিশ্বের সপ্তম বৃহৎ অর্থনীতি বলা যায়। আর বিশ্বের এই ফ্যাশন জগতের কর্তৃত্ব করছে বিখ্যাত সব ব্র্যান্ড। যেমন: জারা, এইচ অ্যান্ড এম, টপশপ, ম্যাঙ্গো, গ্যাপ ইত্যাদি।
২০১৬ সালে বহুজাতিক পণ্য প্রতিষ্ঠান নাইকির ব্র্যান্ড ভ্যালুর পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৮০৪ কোটি ডলার। বিশ্বের খ্যাতনামা পোশাক বিপণনকারী কোম্পানি এইচ অ্যান্ড এমের (হেন্স অ্যান্ড মরিটজ) মূল্যমান ১ হাজার ৫৫১ কোটি ডলার। আরেক বিশ্বখ্যাত ফ্যাশন হাউস জারার ব্র্যান্ড ভ্যালু ১ হাজার কোটি ডলার। তালিকায় এরপরই আছে কার্টায়ার, হার্মেস, ইউনিক্লো, অ্যাডিডাস, রোলেক্স, ভিক্টোরিয়া’স সিক্রেট ও গুচি। কার্টায়ার ফ্রান্সের বিশ্বখ্যাত অলংকার নকশাকারী প্রতিষ্ঠান। হার্মেসও ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠান, বিলাসপণ্য তৈরি করে। জাপানের তৈরি পোশাক কোম্পানি ইউনিক্লো, বহুজাতিক পণ্য প্রতিষ্ঠান অ্যাডিডাস, ঘড়ি তৈরির বিশ্ববিখ্যাত প্রতিষ্ঠান রোলেক্স, মার্কিন প্রতিষ্ঠান ভিক্টোরিয়া’স সিক্রেট মূলত নারীদের জন্য বিভিন্ন পোশাক ও পণ্য প্রস্তুত করে। গুচি ইতালির বিলাসপণ্য প্রস্তুতকারক আরেক প্রতিষ্ঠান।
জারা ও পুল অ্যান্ড বিয়ার ব্র্যান্ডের মূল কোম্পানি ইন্ডিটেক্স। বৃহৎ স্প্যানিশ ফ্যাশন গ্রুপ। ইন্ডিটেক্স ফ্যাশন গ্রুপের সাফল্যের পেছনে আছেন স্প্যানিশ ধনকুবের ও বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী অ্যামানসিও ওর্তেগা। বর্তমানে বিশ্বের ছয়টি মহাদেশে ইন্ডিটেক্সের স্টোর আছে। প্রতিবছর প্রায় ২৪ কোটি ৮০ লাখ গার্মেন্টস পণ্য তৈরি করে ইন্ডিটেক্স। তৈরি হয় প্রায় ৫০ হাজার রকমের পণ্য, যা বিশ্বের ৮৮টি বাজারে সাড়ে ছয় হাজার শোরুমে যায়। স্পেনের এক সাধারণ রেলওয়ে কর্মকর্তার ঘরে জন্ম ওর্তেগার। নিজস্ব ব্যবসা শুরুর আগে তিনি কাজ করতেন একটি দোকানে ছোট কর্মচারী হিসেবে। এরপর ১০০ ডলারেরও কম অর্থ নিয়ে শুরু করেন নিজের ব্যবসা। প্রতিষ্ঠা করেন পোশাক কোম্পানি ‘ইন্ডিটেক্স’। পরবর্তী সময়ে সে কোম্পানি বিশ্বের সবচেয়ে বড় পোশাক প্রস্তুতকারক ও আনুষঙ্গিক খুচরা পণ্যবিক্রেতা হয়ে ওঠে।
দিন যায়, তার সঙ্গে সঙ্গে ট্রেন্ড, ফ্যাশন পরিবর্তন হয়। একসময় ব্র্যান্ডের বিপুল চাহিদা থাকে। আবার একসময় মানুষের ঝোঁক দেখা যায় সাধারণ পোশাকে। যেমনটা হয়েছিল ২০১৫ সালে চীনে, ব্যয়বহুল পণ্যের চাহিদা কমে অর্ধেকে নেমে গিয়েছিল। এর আগে চীনারা ছুটতেন ব্র্যান্ড আর লোগোর পেছনে।
সামগ্রিকভাবে বর্তমানে ফ্যাশন জগতের সব প্রতিষ্ঠানকে চাপে রেখেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খুব দ্রুত ফ্যাশন শেয়ার করা হয়। যার কারণে নতুন নতুন ফ্যাশন আনতে চাপে থাকে প্রতিষ্ঠানগুলো।