নিয়োগ পরীক্ষার ফি আদায় কিসের ভিত্তিতে?
- প্রতীক বর্ধন
সরকারি চাকরিসহ বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য প্রার্থীদের কাছ থেকে ফি নেওয়া হয়। অনেক দিন থেকেই এই রীতি চলে আসছে। কিন্তু সম্প্রতি এক বিপত্তি ঘটেছে। কারণ, কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, একদিনে একাধিক নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ফলে প্রার্থীরা টাকা দিয়েও অনেক পরীক্ষায় অংশ নিতে পারছেন না। এমনিতেই বেকারদের আয়-উপার্জন নেই বললেই চলে, তার ওপর চাকরির জন্য টাকা দিয়েও পরীক্ষা দিতে না পারাটা অত্যন্ত হতাশাজনক। ব্যাপারটা তাঁদের জন্য মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো।
এ নিয়ে প্রথম আলোতে একাধিকবার চিঠি ও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু তাতেও যেন কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে না। বোঝা যায়, আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্র নাগরিকের প্রতি কতটা সংবেদনশীল! নিয়োগ–প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা কি একবারও চিন্তা করেন না, এ অবস্থায় একজন বেকারের মনের অবস্থা কেমন হতে পারে। আমাদের সরকারি দপ্তরগুলোর মধ্যে যে সমন্বয় নেই, এটা তারই নজির। শুধু তা–ই নয়, নন-ক্যাডার সার্ভিসের জন্য যাঁরা মনোনীত হন, তাঁদেরও চাকরিতে ঢুকতে মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হয়।
মন্ত্রণালয়ে পদ শূন্য থাকলেও তারা পিএসসিতে চাহিদা পাঠায় না। কী কারণে এমনটা হয়, সেটা তারাই ভালো বলতে পারবে, কিন্তু এতে বেকারদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। এই মানুষেরা আদৌ নিয়োগ পাবে কি না, তা নিয়েও শঙ্কা সৃষ্টি হয়। সরকারি চাকরির আশায় এরা অন্য কোথাও চাকরির চেষ্টা করেন না। শেষমেশ নিয়োগ পেলেও তাঁদের আর প্রাণশক্তি থাকে না। তখন তাঁরা রাষ্ট্রকে কি সেবা দেবেন? উল্লেখ্য, ক্যাডার সার্ভিসের জন্য যাঁরা নিয়োগ পান, তাঁদেরও দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। তবে তাঁদের চাকরির নিশ্চয়তা থাকে। নন-ক্যাডারদের তা–ও থাকে না। দেশে এমনিতেই বেকার সমস্যা প্রকট। এ অবস্থায় চাকরিপ্রার্থীদের এভাবে অপেক্ষমাণ রাখাটা কাজের কথা হতে পারে না। এতে শুধু শক্তিক্ষয় হয়।
অন্যদিকে এই বেকারদের কাছ থেকে চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য ফি আদায় করা হয় কিসের ভিত্তিতে? এর কি কোনো আইন আছে? বাস্তবতা হলো, মেসবাসী বেকারদের সব সময়ই টানাটানির মধ্যে থাকতে হয়। এ সময় তাঁরা ভালোমতো খেতেও পারেন না। তো সেই বেকারদের কাছ থেকে প্রতিটি সরকারি পরীক্ষার জন্য ফি নেওয়া কি অমানবিক নয়? রাষ্ট্রযন্ত্র কি এই বেকারদের প্রতি এতটুকু সহানুভূতি দেখাতে পারে না? আমাদের বাজেট এখন তিন লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ব্যাংক থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা লোপাট হলে অর্থমন্ত্রী বলেন, এটা বড় অঙ্ক নয়! অথচ নিয়োগ পরীক্ষার জন্য সরকার বেকারদের কাছ থেকে টানা নেয়। এই টাকাটা না নিলে তার নিশ্চয়ই ক্ষতি হবে না।
ব্যাপারটা মহা জটিল কিছু নয়, যা সমাধান করতে সরকারের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক পরিপত্র জারি করে ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার ফি আদায় বন্ধ করেছে। সরকারও চাইলেই তা পারে। এর জন্য দরকার সংবেদনশীল মন ও সদিচ্ছা।