শঙ্কামুক্ত জাফর ইকবাল, কিন্তু…
- কাওসার হামিদ
অন্ধ বিদ্বেষের ধারালো চাকুর আঘাত থেকে আপাতত প্রাণে বেঁচে গেছেন দেশবরেণ্য সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। সর্বশেষ খবর, তিনি হাসছেন। চিকিৎসকরা বলছেন, তিনি শঙ্কামুক্ত। উল্লেখ্য, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে গত শনিবার বিকেলে এক অনুষ্ঠানে দর্শকসারিতে থাকা জাফর ইকবালের পেছন থেকে তাঁর ওপর ফয়জুর রহমান নামের এক যুবক ছুরি দিয়ে হামলা চালায়। হামলার পর রক্তাক্ত অবস্থায় জাফর ইকবালকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর শরীরে ছয়টি আঘাত আছে। তবে তিনি শঙ্কামুক্ত।
মুহম্মদ জাফর ইকবাল এখন হেসে হেসে কথা বলছেন। কিন্তু হাসতে কি পারবে বাংলাদেশ? হত্যাকারীদের পছন্দের তালিকা যে আরো লম্বা!
এই মুহূর্তে ভীতিকর বৃহত্তর বদ্বীপের প্রতি ইঞ্চি মাটি। প্রশ্ন হচ্ছে, টার্গেট লিস্ট ধরে কি এগিয়ে যাবে আমার দেশ? নাকি শান্তি, সহনশীলতা ও উন্নয়নের সুত্র ধরে এগিয়ে যাবে? প্রশ্ন পরিচিত, কিন্তু উত্তর নয়!
ঘৃণার যে ক্ষত সমাজে সৃষ্টি হচ্ছে তা অতি সত্বর নিরাময়ের ব্যাবস্থাপত্র না দিলে সে ক্ষত তীব্র হয়ে একসময় মহামারী আকারে ছড়িয়ে যাবে। এই ভূখণ্ডের অগ্রযাত্রাকে পেছন থেকে টেনে ধরার রীতি এর জন্মলগ্ন থেকেই হয়ে আসছে। মুক্তচিন্তা, মুক্তবুদ্ধির ধারক বাহক কিংবা এর চর্চা থামিয়ে দিতে পারলেই খুব সহজে থমকে দেয়া যায় একটি জাতির দ্রুত বিকাশমান প্রক্রিয়া। তাই যে তরতাজা যুবক দেশের মানচিত্রকে গর্বিত করার জন্য কাজ করবার কথা, সে রক্ত ঝরাতে নিখুঁত পরিকল্পনায় ব্যাস্ত! এমনকি বেঁচে থাকাও তার কাছে তুচ্ছ! যুবক মননে এরকম অন্ধকার ভাবনা পুরো জাতিকেই না একসময় অন্ধকারে ঢেকে দেয়, সেটাই ভয়ে কুঁকড়ে যাওয়ার মতো বিষয়।
এটি কোনো স্বল্প দৈর্ঘ্য গৃহযুদ্ধ নয়, কিংবা নয় কোনো বিদ্রোহী গোষ্ঠীর বিচ্ছিন্ন ঘটনা, যা বল প্রয়োগ করে সমাধান করবার সুযোগ থাকে। এটি একটি আদর্শিক লড়াই। অন্ধকারের সঙ্গে আলোর লড়াই। আংশিক সত্যের সঙ্গে পূর্ণ সত্যের লড়াই। যারা ভ্রান্ত বিশ্বাসে বিশ্বাসী হয়ে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিতে পিছপা হয়না তাদের বন্দুকের গুলির ভয় দেখিয়ে কি লাভ! সঠিক তথ্য, পরিপূর্ণ জ্ঞান, ও সুস্থ সামাজিক আন্দোলনই হতে পারে মোক্ষম প্রতিষেধক। সেই সামাজিক আন্দোলনে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মন্দির, মসজিদ, গির্জা সব প্রতিষ্ঠানের প্রবল সম্পৃক্ততা জরুরী।
আধো আলো আধো অন্ধকারে থাকা মানুষগুলোকে পূর্ণ আলোর দিশা দিতে পারলেই হয়ত এই চোরাবালিতে বিলীন হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। আর এ অশুভ শক্তির করাল গ্রাস থেকে মুক্ত হতে না পারলে শুধু একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ড আক্ষরিক অর্থেই স্বাধীন থাকবে, এর বাস্তব কোনো ভিত্তি থাকবেনা।
তাই অল্প সংখ্যক বিপথগামী মানুষের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড সামাজিক বিদ্রোহ না করা গেলে স্বাধীনতা শব্দটি শুধুমাত্র পুস্তকে লেখা কিংবা সভা সেমিনারে উচ্চারিত শব্দ হয়েই থেকে যাবে। আমাদের শক্তি, সম্ভাবনা আমাদেরকেই জিইয়ে রাখতে হবে।