ধর্ম দিয়ে নয় মানুষকে চিনতে হবে মানুষ হিসেবে : প্রিয়ঙ্কা চোপড়া
আজকাল দেশের বাইরে সময় কাটান প্রিয়ঙ্কা। দেশে এলেন মাত্র এক-দু’দিনের জন্য, তাও আবার ‘বাজিরাও মাস্তানির’ প্রমোশনের জন্য। তখনই এক প্রেস কনফারেন্সের ফাঁকে মুখোমুখি হয়েছিলেন বলিউড লাইফের। সেদিন কি বলেছিলেন বলিউড লাইফকে, আসুন আজ তা জেনে নেই। বলিউড লাইফ থেকে ভাষান্তর করেছেন রবিউল কমল।
- ‘কায়ান্টিকো’র সবচেয়ে ভাল ফিডব্যাক কী পেলেন ?
- প্রিয়ঙ্কা : খুব মজার ব্যাপার, আমাকে ওখানে আমেরিকানরা বারবার জিজ্ঞেস করেন আমি সত্যিই ভারতীয় কিনা। এটাই আমার কাছে বেস্ট কমপ্লিমেন্ট। আসলে ভারতীয়দের রক্তে পড়াশোনা আছে তো, তাই বিদেশে অভিনয় করতে গেলেই তাদের ডাক্তার বা বিজ্ঞানীর ভূমিকায় কাস্ট করা হয়। আমি যে চরিত্রটা করছি ভারতীয়রা একেবারেই ওরকম চরিত্র করে না।
- আমেরিকায় শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা কেমন?
- প্রিয়ঙ্কা : দেখুন, সিনেমায় একদিনে দু’টি দৃশ্যের শুট করা হয়। আর সিরিয়ালে একদিনে ১০টি শুট করতে হয়। এখানেই পার্থক্যটা তৈরি হয়ে যায়। আমি তো প্রযোজকদের বললাম, ‘আগে কেন বলোনি আমায় এতো খাটাবে?’ এপার্ট ভাষা ছাড়া বিশেষ কোনো পার্থক্য বুঝি না। হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির মতো এতো বড় একটি জায়গায় কাজ করি। ফলে পরিস্থিতি যা হোক মানিয়ে নিতে অসুবিধা হয় না।
- আর সঞ্জয়লীলা ভাংশালীর সাথে কাজের অভিজ্ঞতা ?
- প্রিয়ঙ্কা : ওনার সঙ্গে কাজ করার স্বপ্ন প্রত্যেক অভিনেত্রী দেখে। ‘রামলীলা’তে একটি নাচ করেছিলাম। ‘মেরি কম’-এ সজ্ঞয় স্যার ছিলেন প্রযোজক। এবার একটি পুরো ফিল্ম করলাম ওনার পরিচালনায়। স্যারের একটি ম্যাজিক আছে। সেই ম্যাজিকটাই টানে সবচেয়ে বেশি। ‘বাজিরাও মাস্তানি’তে সবার আগে আমার কাস্টিং হয়েছিল। রণবীর আর দীপিকার কাস্টিং করতে সময় লেগেছিল আরো ছয় মাস।
- আগেও মারাঠি চরিত্রে অভিনয় করেছেন, কাশীবাই কতটা আলাদা ?
- প্রিয়ঙ্কা : বাজিরাও আর মাস্তানির কথাতো সবাই জানেন। কিন্তু কাশীবাইয়ের কথা ক’জন জানেন? এই চরিত্রটা খবই চ্যালেঞ্জিং। পাঁচশো বছরের পুরনো ডায়ালগ রপ্ত করতে হয়েছে এই চরিত্রে অভিনয় করেতে গিয়ে। আমাকে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করেছিল এই চরিত্রের নমনীয়তা। আসলে ‘ঝিলমিল’ বা ‘কাশিবাই’র মতো কঠিন চারত্রগুলো করতে একটু অদ্ভুত ধরনের এনার্জি অনুভব করি।
- কাশিবাই আর মাস্তানির সম্পর্ক তো ভাল ছিল না কিন্তু…
- প্রিয়ঙ্কা : কিন্তু আমার আর দীপিকার সম্পর্ক খুবই ভাল। আমরা খুব ভাল বন্ধু। প্রফেশনের চাচে হয়তো সবসময় ‘হেই বাডি’ বলে পার্টি করতে যেতে পারি না। কিন্তু একে অন্যেও জন্য ভাবি। সঞ্জয় স্যারতো মাঝে-মধ্যে বিরক্তই হয়ে যেতেন। আমার দীপিকার বেশি দৃশ্য নেই, কিন্তু আমরা সবসময় একসঙ্গে কাজ করতাম, সেটে হাতে-হাত ধরে ঘুরে বেড়াতাম।
আমাদের পূর্বপুরুষরা গণতন্ত্রের জন্য অনেক লড়াই করেছেন। তাই আমাদের দেশে ফ্রিডম অব স্পিচকে আরো বেশি প্রাধান্য দেওয়া দরকার। আসলে ধর্ম দিয়ে নয়, মানুষকে চিনতে হবে মানুষ হিসেবে।
- আপনাদের দু’জনের মধ্যে করা ‘পিঙ্গ’ নিয়ে তো খুব সমালোচনা হচ্ছে!
- প্রিয়ঙ্কা : আমার শুধু এটুকুই বলার আছে যে, এই নাচ করতে গিয়ে আমার পায়ের তলার ছাল-চামড়া উঠে গিয়েছিল! আসলে এতো সমালোচনার কোনো কারণ নেই। নাচটার সিগনেচার স্টেপটা আমি আর দীপিকা শিখেছিলাম স্যারের মাসির কাছ খেকে। দেখুন যখন মিলকা সিং কিংবা মেরি কমকে নিয়ে বায়োপিক হয়, তাতেও অনেক ফিকশন ব্যবহার করতে হয়। আর এটা তো সঞ্জয় ভাংশালীর তৈরি একটি হিন্দি ফিচার ফিল্ম। ‘রাও’ নামে একটি বই এর অনুপ্রেরণা।
- অসহি নিয়ে সারা দেশ যখন উত্তাল, তখন আপনি কিছু বলবেন না ?
- প্রিয়ঙ্কা : দেখুন, আমি তো বিদেশে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করছি, অনেক দেশ ঘুরি…প্যারিস, সিরিয়, বাগদাদ, লেবানন… কেথাও অবস্থা খুব ভাল নেই। আমাদের পূর্বপুরুষরা গণতন্ত্রের জন্য অনেক লড়াই করেছেন। তাই আমাদের দেশে ফ্রিডম অব স্পিচকে আরো বেশি প্রাধান্য দেওয়া দরকার। আসলে ধর্ম দিয়ে নয়, মানুষকে চিনতে হবে মানুষ হিসেবে। কিছুদিন আগেই আমেরিকায় আমার একটি ইন্টারভিউয়ে আমার গায়ের রং নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। আমি বললাম আমি একজন ভারতীয় অভিনেত্রী। ব্রাইন, ব্লাক বা হোয়াইট দিয়ে আমায় বর্ণনা করা যায় না।