অবশেষে তিনি ফিরলেন ‘মীরা’ হয়ে
ছোটবেলায় বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের পর কিছুটা একা হয়ে পড়েছিলেন তিনি। তাই যখনই নিঃসঙ্গতায় ভূগতেন তখনই চিৎকার করে গল্পের বই পড়তেন! এতে নাকি তার মন ভাল হয়ে যেত। এই অভ্যাসের জন্য স্কুলজীবন থেকেই তার উচ্চারণ, অভিব্যক্তি প্রকাশ, ভয়েস মডিউলেশন সবাইকে অবাক করে দিত। স্কুলের ড্রামা শিক্ষকের সবচেয়ে প্রিয় ছাত্রীও ছিলেন তিনি। সেই শিক্ষক তো বলেই দিয়েছিলেন এই মেয়ের প্রতিভা শুধু স্কুলের গন্ডিতে আটকে থাকবে না। এখন সেই শিক্ষক কোথায় আছেন তা জানা নেই তবে তার ভবিষ্যৎ বাণী যে বিফলে যায় নি তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কখনো ‘সিমরণ’, কখনো ‘অঞ্জলি’ হয়ে দর্শকের মনে ধরা দিয়েছেন আর জয় করে নিয়েছেন সে মন। দীর্ঘ বিরতির পর এবার আবার ফিরেছেন ‘মীরা’ হয়ে – এই ডিসেম্বরে, ‘দিলওয়ালে’-তে আবারো সেই শাহরুখের হাত ধরে। তিনি বলিউডের অন্যতম সেরা অভিনেত্রী কাজল। সম্প্রতি বলিউড লাইফকে দেওয়া তাঁর সাক্ষাৎকার দি প্রমিনেন্ট পাঠকের জন্য ভাষান্তর করেছেন রবিউল কমল।
- বক্স অফিস শাসন করতে করতেই সিনেমা থেকে বিরতি নিয়ে নিলেন। সাফল্যের চূড়ায় থেকে লাইমলাইট থেকে বের হতে চায় না! আপনি কেন বিরতিতে গেলন?
- কাজল: ক্যারিয়ার যেমন জীবনেরই একটি অংশ, তেমন পরিবারও জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। জীবন এই অংশগুলোকে জোড়া লাগিয়ে তৈরি হয়। তবে এগুলোর মধ্যে সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখার কাজটি আপনাকেই করতে হবে। আমি প্রচুর কাজ করেছি। এখন বছরে একটি বা দুইটি সিনেমা করে সন্তুষ্ট থাকতে চাই। খুব বেশি সিনেমাতে কাজ করলে দর্শক আমাকে দেখে হয়তো বিরক্ত হয়ে যাবেন। সিনেমায় কাজ না করার একমাত্র কারণ কিন্তু আমার সন্তানেরা। ওদের প্রতি মনোযোগ দেওয়া আমার কর্তব্য। আমি ওদের আমার চোখের সামনে বড় হয়ে উঠতে দেখতে চাই।
- মার্তৃত্বের জন্যই তাহলে সিনেমা পিছনের সারিতে চলে গিয়েছিল?
- কাজল: আমি জন্ম নিয়েছিলাম মা হওয়ার জন্য। মাতৃত্ব আমার জীবনের একটি এক্সক্লুসিভ অধ্যায় বলতে পারেন। আমার সন্তানরাই আমার সম্পদ। ওদের জন্য আমি সবকিছু ছেড়ে দিতে পারি। একবার একজন সাংবাদিকের সঙ্গে এ্যাপায়েন্টমেন্ট বাতিল করে দিয়েছিলাম বড়দিনে বাচ্চাদের নিয়ে রেস্তোরায় খেতে যাব বলে। রেস্তোরায় ওদের হাসিমুখগুলো আমার কাছে বড় প্রাপ্তি ছিল। শুধু সন্তানরাই নয়, স্বামী অজয়, মা বা বোন ডাকলেও আমি এভাবেই ছুটে যাই। যে কোনো নারীর জীবনে তার পরিবারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া উচিত, যাতে ওরা আপনার উপর নির্ভর করতে পারে। আমি যেমন এখনো আমার মায়ের উপর পুরোপুরি নির্ভর করতে পারি।
- মাতৃত্ব আপনাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে, সেব্যাপারে আমাদের সাথে শিছু শেয়ার করুন।
- কাজল: মাতৃত্ব একজন নারীর জীবনে সেরা অধ্যায়। আামার মাকে আমি এখন আরো বেশি শ্রদ্ধা করি। মাকে ধন্যবাদ – আমাকে খাওয়ানোর জন্য, অসুখ হলে সারা রাত জেগে বসে থাকার জন্য, মাঝরাতে উঠে আমাকে শান্ত করার জন্য। মা এগুলো করেছে কারো কোনো সাহায্য ছাড়াই আর আমি একজন মা হয়ে আশেপাশের সবার সাহায্য পেয়েও সবকিছু গুছিয়ে করতে পারি না।
- স্বামী হিসেবে অজয়ের ভাল আর খারাপ দিক কোনগুলো?
- কাজল: (হাসি) সবচেয়ে ভাল দিক হল অজয় আমাকে কথা বলতে দেয়। সত্যি বলতে আমি ওকে অনেক ভালবাসি, শ্রদ্ধা করি। ১৫-২০ বছর আগে যখন আমরা প্রেম করতাম তখন থেকে এখন পর্যন্ত ও একইরকম আছে। ওর মধ্যে যে পরিবর্তনগুলো হয়েছে সেগুলো আমাদের ভালোর জন্যই হয়েছে। অজয় খুব কথা বলে না তবে যা বলে তা কাজে করে দেখায়। ওর ডাকনাম বাবাজি, সবাই ওর কাছে পরামর্শ নিতে আসে। তবে এত বছরের বিবাহিত জীবনে দুজনের কিছু অপছন্দ থাকতেই পারে। ও অনেক কম কথা বলে, মাঝ মাঝে তো আমাদের মধ্যে কোনো কথাই হয় না- যা আমার পছন্দ না। অজয় খুব খুশি হত যদি ওর হাতে একটি রিমোট থাকতো এবং আমার উপর “মিউট” বাটন প্রেস করতে পারতো।
ক্যারিয়ার যেমন জীবনেরই একটি অংশ, তেমন পরিবারও জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। জীবন এই অংশগুলোকে জোড়া লাগিয়ে তৈরি হয়। তবে এগুলোর মধ্যে সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখার কাজটি আপনাকেই করতে হবে।
- এবার সিনেমা প্রসঙ্গে ফিরি। বলিউডে ফিরতে চলেছেন ‘দিলওয়ালে’ সিনেমার হাত ধরে, বিপরীতে সেই শাহরুখ খান। এই রসায়নটা কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
- কাজল : বরাবরই আমাদের কেমিস্ট্রি অনেক ভাল, শাহরুখ আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। আমরা এত বছর ধরে কাজ করেছি যে আমাদের দুজনের একটি আলাদা কমফোর্ট লেভেল আছে। শরিরী ভাষায় সেটা সবসময় প্রকাশ পায় না। কারো সাথে কমফোর্ট লেভেল না থাকলে আমি কাজ করতে পারি না। যে কাজগুলো করেছি তার সঙ্গে প্রচুর স্মৃতি জড়িয়ে আছে। যখন ঐ সিনেমাগুলো দেখি তখন মনে হয় একটির পর একটি ফ্লাশব্যাক ঘটছে।
- তারকাদের নামে তো অনেক গুজব রটে, এগুলো কি আপনার জীবনে প্রভাব ফেলেনি?
- কাজল : একেবারে না। আমি বা আমার মতামত কখনো গুজবের দ্বারা প্রভাবিত হয় নি।
- আপনার বয়স তো আরো কমে গেল মনে হচ্ছে, একদম স্লিম আছন। আপনার ফিটনেসের রহস্য কী?
- কাজল : ব্যস্ত জীবনে ফিটনেসের পেছনে নিয়মিত সময় দেওয়াটা খুব কঠিন। ভাল কিছু করা সবসময় কষ্টসাধ্য। খারাপ অভ্যাস গড়ে তোলা সহজ কিন্তু ভাল অভ্যাস গড়ে উঠতে সময় লাগে। ফিটনেসের জন্য আমি জিমে অনেক সময় কাটাই, প্রচুর কাজ করি। বলতে পারেন বাইরের কাজ করাটা আমার ফিটনেসের রহস্য।