‘আমি সত্যজিতের ভীষণ ভক্ত’
বিনোদন ডেস্ক : ইমতিয়াজ আলি, বলিউডের একজন সফল পরিচালক। ঘাড় অব্দি লম্বা চুল আর স্বপ্নালু চোখের এই মানুষটির আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব মূহুর্তেই যে কোনো মানুষের নজর কাড়ে খুব সহজেই। তার পরিচালিত প্রথম ছবি সোচা না থা বক্স অফিসে সাড়া ফেলতে না পারলেও সিনেমাপ্রেমীদের অনেকের প্রশংসা কুড়িয়েছিল। তবে তিনি থেমে থাকেননি, দর্শকদের একের পর এক উপহার দিয়েছেন জাব উই মেট, হাইওয়ে, রকস্টার, লাভ আজ কাল-এর মতো ব্লকবাস্টার সিনেমা। সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে তার পরিচালিত সিনেমা তামাশা এবং তা চলছেও ভাল। তামাশা নিয়ে সম্প্রতি তিনি মুখোমুখি হয়েছিলেন বলিউড লাইফের। সেই সাক্ষাৎকারের নির্বাচিত অংশ ভাষান্তর করেছেন রবিউল কমল ।
- তামাশায় রণবীর আর দীপিকাকে চুক্তিবদ্ধ করার আইডিয়াটা কেন আপনার মাথায় এল?
- রণবীরকে আমি সবার আগে সিলেক্ট করেছি। দীপিকাকে সিলেক্ট করা হয়েছে পরে। দু’জনেই প্রতিভাবান এবং একে অপরের সঙ্গে কাজ করতে উপভোগ করে। শুধু জুটি হিসেবে ওদের তুলে ধরাই মূল উদ্দেশ্য নয়, আসলে চরিত্রগুলোর জন্য ওরাই উপযুক্ত ছিল।
- ওদের দুজনের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
- ওদের ভক্তদের মতো আমারও ওদের একসঙ্গে পর্দায় দেখতে ভালো লাগে। কারণ ওদের দুজনের বোঝাপোড়া খুব ভালো। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল ওরা একসময় রিলেশনশিপে থাকলেও সেসব এখন অতীত। আর তা কাজের ক্ষেত্রে কখনও প্রভাব ফেলেনি। বরং এখন তো একে অপরের সঙ্গে কাজ করতে বেশ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। তামাশার ওয়র্কশপের সময়ে আমি দেখেছি, কীভাবে ওরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা রিহার্স করছে। চরিত্রটা নিয়ে আলোচনা করছে। দুজনে চেষ্টা করেছে কীভাবে আরও ভাল কাজ করা যায়।
ছোটবেলায় ক্ল্যাসিকাল সঙ্গীত শিখতাম। তবে ক্লাসে যেতে লজ্জা করত, কারণ ওখানে যে দিদিরা গান শিখত তারা আমার গাল টিপত। তাছাড়া ক্ল্যাসের সময় মন পড়ে থাকত খেলার মাঠে। তাই বাড়ি থেকে গানের ক্লাসের জন্য বের হলেও পৌঁছে যেতাম খেলার মাঠেই
- রণবীরের সঙ্গে আপনার তো অনেকদিনের বন্ধুত্ব?
- রকস্টার-এর আগে ওকে চিনতাম কিন্তু সেরকম ঘনিষ্ঠতা ছিল না। কিন্তু রকস্টার-এ কাজ করতে আমরা অনেকটা সময় একসাথে কাটিয়েছি। সেই সময়ে দুজনেই উপলব্ধি করেছি আমরা একে অপরের সঙ্গে অনেক কিছু শেয়ার করতে পারি। এটা আমার বলতে দ্বিধা নেই যে, আমরা একে অপরকে খুব বিশ্বাস করি।
- ছোট থেকেই কি ছবি পরিচালনার ইচ্ছে ছিল?
- ছোটবেলায় আমি অনেক কিছু চিন্তা-ভাবনা করতাম। চোখের সামনে সেসব দেখতেও পেতাম। সব শিশুদের এমন কল্পনাশক্তি থাকে, আমারও ছিল। আসলে বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো আমরা একটু-একটু করে হারিয়ে ফেলি। আমার নানি ছোটবেলায় অনেক গল্প শোনাতেন। বিশেষ করে দুই পাখির গল্প, যাদের মধ্যে একজন বিদেশ চলে যেতে চায়। তারপর বড় হয়ে যখন ছবি আর থিয়েটার দেখতে শুরু করি তখন পছন্দ পাল্টায়। স্কুল জীবনে আলেকজান্ডার, বাবর, রোমিও জুলিয়েট খুব পড়তাম। গল্প শোনা আর পড়া আমার জীবনে প্রচণ্ড প্রভাব ফেলেছে।
- আপনার ছবিতে বরাবরই কমার্শিয়াল ধারার সঙ্গে ক্রিয়েটিভিটি থাকে। এই দুয়ের সংমিশ্রণ কীভাবে বজায় রাখেন?
- এখনও পর্যন্ত আমি ছয়টি ছবি পরিচালনা করেছি। কিন্তু সেই দিক থেকে দেখতে গেলে আমি খুবই ভাগ্যবান। কারণ আমার প্রথম ছবির প্রযোজক ছিলেন সানি দেওল। উনি আমাকে ছবি তৈরির ক্ষেত্রে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। তারপর থেকে এখনও পর্যন্ত কোনো প্রযোজকই আমার কাজে হস্তক্ষেপ করেননি।

- তামাশা রণবীর কাপূরের ক্যারিয়ারের দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর শেষ সিনেমা বম্বে ভেলভেট তো সেরকম নজর কাড়তে পারেনি। সেদিক থেকে আপনার উপর কোনো চাপ ছিল কি?
- বম্বে ভেলভেট রিলিজ় করার আগে তামাশার ৯০শতাংশ কাজ শেষ হয়ে গিয়েছিল। আমার মনে হয় এর আগে দিলীপ কুমার, অমিতাভ বচ্চন থেকে শাহরুখ, আমির, সালমান পর্যন্ত সব তারকার সিনেমা কম-বেশি ফ্লপ হয়েছে। এই ব্যর্থতা থেকেই আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি। তাই এ নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করার নেই। আর রণবীর একজন চমৎকার অভিনেতা। ওর এসব ভেবে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
- দীপিকাকে কেমন লাগল?
- দীপিকা তো সাম্প্রতিককালে খুবই উন্নতি করেছে। অনেকে হয়তো জানেন না যে, দীপিকা খুব লাজুক। আর এ জন্যই ওর প্রথমদিককার পারফরমেন্স ততটা ভালো হতো না। তবে ও এখন অনস্ক্রিন লজ্জা পায় না, তাই পারফরমেন্স আগের তুলনায় অনেক ভালো হচ্ছে।
- আপনার মেয়েও তো আপনার মতোই লেখে এখন…
- হ্যাঁ, ওর বয়স এখন ১৪। বাস্কেট বল খেলে। আর আমার মতো লেখেও। সবচেয়ে ভাল লাগে যে ও আমাকে আমাদের চারপাশে যা ঘটে তার আপডেট তথ্য দিয়ে থাকে। আসলে মেয়ে ছাড়া আমি এত আপডেটেড থাকতে পারতাম না।
- আপনার আর সঙ্গীতের একটা গভীর সম্পর্ক আছে…
- ছোটবেলায় ক্ল্যাসিকাল সঙ্গীত শিখতাম। তবে ক্লাসে যেতে লজ্জা করত, কারণ ওখানে যে দিদিরা গান শিখত তারা আমার গাল টিপত। তাছাড়া ক্ল্যাসের সময় মন পড়ে থাকত খেলার মাঠে। তাই বাড়ি থেকে গানের ক্লাসের জন্য বের হলেও পৌঁছে যেতাম খেলার মাঠেই। তবে আমার যে খুব গানের প্রতিভা ছিল তা নয়। আমার সৌভাগ্য আমি বড় মিউজিক কম্পোজারদের সঙ্গে কাজ করেছি।
- সম্প্রতি আপনি বাংলা ছবির সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন, তা নিয়ে কিছু বলুন?
- তিন কাহন ছবিটিকে আমি প্রেজেন্ট করেছি, আমার কাজ শুধু ওটাই ছিল। আমাকে খুব প্লেজেন্টলি সারপ্রাইজ করেছে ছবিটা। আমি বরাবরই ঋত্বিক ঘটক, সত্যজিত রায়ের ভীষণ ভক্ত। ঋতুপর্ণ ঘোষ চলে যাওয়ার পর বাংলা ছবিতে একটু মন্দা পড়েছিল। তবে সম্প্রতি তিন কাহন, রাজকাহিনি দেখে খুব ভালো লাগল।