শুভশ্রীকে হয়রানির অভিযোগ
বিনোদন ডেস্ক : একটি কলেজের বার্ষিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে গিয়ে হয়রানি হতে হলো টালিগঞ্জের নায়িকা শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়কে। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূলের ছাত্র সংসদের সদস্যরা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
শনিবার সন্ধ্যায় আলিপুরদুয়ারা জেলার ফালাকাট কলেজে সংঘটিত ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পার হলেও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
পশ্চিমবঙ্গের দৈনিক আনন্দবাজারকে জেলা পুলিশ বলেছে, শুভশ্রীর সঙ্গে এমন কাণ্ড ঘটতে পারে তা তারা ভাবতেও পারেননি। মঞ্চের কিছুটা দূরে অভিনেত্রীর গাড়ি যেখানে দাঁড় করানো হয়, সেখানে কোনো ব্যারিকেড ছিল না। ফলে অভিনেত্রীতে দেখতে ছুটে আসা মানুষের ভিড় সামাল দিতে পারেনি পুলিশ।
কিন্তু ঘটনার সময় তোলা ছবিতে দেখা গিয়েছে, কয়েক জন পুলিশ কর্মী দূরে চুপ করে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। আলিপুরদুয়ার পুলিশ সুপার আভারু রবীন্দ্রনাথ জানান, সব ঘটনাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ফালাকাটার বিধায়ক ও সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের (টিএমসিপি) ব্লক সভাপতি অনিল অধিকারী বলেন, ‘যা ঘটেছে তা নিন্দনীয়। তবে যা শুনেছি, তাতে মনে হচ্ছে শুভশ্রীর কিছুটা সংযত হওয়া উচিত ছিল। ভিড়ের মধ্যে দু’চার জন ছেলে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। আমাদের ছেলেরা পরে অভিনেত্রীকে গাড়িতে তুলে দেন।’
তবে এক্ষেত্রে শুভশ্রীর কিভাবে সংযত হওয়া উচিৎ ছিল তার ব্যাখ্যা দেননি তিনি। সিপিএম-এর প্রাক্তন সাংসদ মিনতি সেন বলেন, ‘খুবই নিন্দনীয় মন্তব্য করেছেন তৃণমূল নেতা। তৃণমূল নেতাদের উচিত তাদের দলের ছেলেদের সংযত করা।’
অনিল অধিকারীর সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করেন তৃণমূলের মহাসচিব ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘শুভশ্রী যে অভিযোগ করেছেন, তেমন ঘটনা ঘটে থাকলে তা দুর্ভাগ্যজনক। শুভশ্রী ফিরলে তার সঙ্গে কথা বলবো। আমাদের দলের কেউ এই ধরনের আচরণ করে থাকলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
পার্থ চট্টোপাধ্যায় আরও বলেন, ‘অনুষ্ঠানের আয়োজক ছাত্র সংসদ ছিল ঠিকই। কিন্তু দর্শকের মধ্যে অনেক বাইরের লোকও ছিল। দর্শকদের মধ্যে থেকে কেউ অসভ্যতা বা অভব্যতা করে থাকলে তার জন্য তৃণমূলকে দায়ী করা ঠিক নয়।’
একই সুরে কথা বলেছেন জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূলের সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘শুভশ্রী জনপ্রিয় অভিনেত্রী। ফালাকাটা কলেজে শুধু ছাত্ররা নন, উপস্থিত ছিলেন আশপাশের গ্রামের বহু মানুষ। অতি উৎসাহীরা ছবি তুলতে ও কথা বলতে তার কাছে গিয়েছিলেন। তবে ঘটনাটি দুঃখজনক।’
স্টুডেন্ট ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার (এসএফআই) জেলা সভাপতি মহানন্দ বিশ্বাস বলেন, ‘ফালাকাটা কলেজ টিএমসিপির দখলে। শাসক দলের ছাত্রনেতারা ঘটনার দায় এড়াতে পারেন না। এখন ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।’
শনিবার তৃণমূল ছাত্র পরিষদ পরিচালিত ফালাকাটা কলেজ সংসদের বাৎসরিক অনুষ্ঠানে এসে মঞ্চে ওঠার সময় ভিড়ের মধ্যে কিছু মানুষের অভব্য আচরণে ক্ষুব্ধ হন শুভশ্রী। ভিড়ের মধ্যে কাউকে হাত দিয়ে দুবার চড় মারতেও দেখা গেছে তাকে। কোনো রকমে মঞ্চে উঠে আঙুল দিয়ে একটা নির্দিষ্ট দিকের ছাত্রদের দেখিয়ে অভিযোগ করেন, ‘ওই ছাত্রেরা আমার সঙ্গে অভব্য ব্যবহার করেছে। এই ব্যবহার আমি কেন, কোনো মেয়ের সঙ্গেই করা উচিত নয়।’
এরপর ওই অবস্থায় অনুষ্ঠান করার মতো মানসিকতা নেই জানিয়ে যারা দীর্ঘক্ষণ তার জন্য অপেক্ষা করছিলেন, তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে মঞ্চ থেকে নেমে গাড়িতে উঠে চলে যান। ঘটনার পর ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি সঞ্জয় দাস মঞ্চে উঠে ক্ষমা চান। রোববার তিনি জানান, অভিযুক্তদের চিহ্নিত করতে তারা নিজেরাই তদন্ত শুরু করেছেন।
কিছু দিন আগে কোচবিহারে রাসমেলার অনুষ্ঠানের শেষে কটূক্তির অভিযোগ তুলেছিলেন সঙ্গীতশিল্পী আকৃতি কক্কর। সেবারও অভিযোগের আঙুল ছিল শাসক দলের সংগঠনের দিকে।