শাহরুখ-কাজলের দিলওয়ালে রিভিউ
পরিচলিক: রোহিত শেট্রি
অভিনয়: শাহরুখ, কাজল, বরুণ, কৃতি প্রমুখ
পাঁচবছর পর শাহরুখ-কাজল একসঙ্গে বড় পর্দায়, পরিচালনায় রোহিত শেট্টি। শাহরুখ-কাজলের অনস্ক্রিন জুটিকে লেজেন্ডের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার পিছনে আদিত্য চোপড়া কিংবা করন জোহরের অবদান অনস্বীকার্য। তুলনা তাই আসতে বাধ্য। রোহিত শেট্টি কি পূর্বসূরীদের মতোই নিংড়ে বের করতে পেরেছেন শাহরুখ-কাজলের অনস্ক্রিন ম্যাজিক?
সিনেমাটি কেমন, সে প্রসঙ্গে আসার আগে গল্পটা একটু বলে নেওয়া যাক। একে অন্যের শত্রু দুই গ্যাংস্টারের ভূমিকায় সিনামাতে রয়েছেন বিনোদ খন্না ও কবীর বেদী। বিনোদের দুই ছেলে শাহরুখ, বরুণ। কবীরের দুই মেয়ে কাজল ও কৃতী। পনেরো বছর আগে-পরে শাহরুখ-কাজল ও বরুণ-কৃতী প্রেমে পড়েন। কিন্তু পনেরো বছর আগে শাহরুখ-কাজলের মধ্যে বিশ্বাসঘাতকতা, ভুল বোঝাবুঝির জেরে দু’জন দু’জনের জীবন থেকে সরে যান নিজের-নিজের মতো জগত তৈরি করে। পনেরো বছর পর এর ভাই আর ওর বোন একে অন্যের প্রেমে পড়লে দু’জন আবার মুখোমুখি হন, শুরু হয় ঘৃণা আর হিংসার দৃশ্য। তারপর অবধারিতভাবেই (রোহিত শেট্টির ছবির ‘হ্যাপি এন্ডিং’-এর প্রথা মেনেই) সিনেমার শেষে এসে সব হিংসা-মারামারি একপাশে সরিয়ে রেখে শাহরুখ-কাজল এবং বরুণ-কৃতীর আটহাত এক হয়ে যায়। হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন সিনেমার পার্শ্বচরিত্ররা।
পরিচালক হিসেবে রোহিত ঠিক যেরকম সিনেমা বানান, ‘দিলওয়ালে’ ঠিক সেরকমই একখানা সিনেমা হয়েছে, এতে কোনও দ্বিমত নেই। ‘গোলমাল সিরিজ’, ‘সিংহম’, ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ রোহিতের কোন সিনেমায় অসহ্য উত্তেজনায় হাতের নখ খেয়ে ফেলার মতো গল্প ছিল বলুন দেখি! এই সিনোমর গল্পও সেই নিয়ম মেনেই মুখ্য নয়। বুলগেরিয়ার মনোরম সব লোকেশন, রোহিতের ছবির সিগনেচার লোকেশন গোয়ার রংবেরংয়ের সব সেট, প্রীতমের সুরে ‘গেরুয়া’ আর ‘জনম জনম’-এ শাহরুখ-কাজলের চমৎকার রোম্যান্স আর কী চাই !
সিনেমাতে শাহরুখ-কাজলকে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারলেন কি রোহিত? বোমান ইরানি, জনি লিভার, বরুণ শর্মা তো বটেই, কেউ-কেউ এও বলছেন যে বরুণ আর কৃতীকেও পর্দায় এতোবেশি প্রেজেন্ট দেওয়ার কোনও মানেই হয়নি। শাহরুখ-কাজল জুটির ভক্তরা সে কথা আরো বেশি করে বলছেন। এই অভিযোগ অস্বীকার করার সত্যিই কোনো উপায় নেই হয়তো। কিন্তু এই যদি তাদের চরিত্রগুলো ছোট করে দেওয়া হত, তাহলেও কিন্তু প্রশ্ন উঠত, শাহরুখ-কাজল বড় তারকা বলেই কি ছোটদের স্ক্রিন প্রেজেন্ট কমে গেল?
পনেরো বছর আগে-পরে শাহরুখ খান তার দুই বয়সের দুই গল্পে চমৎকার অভিনয় করেছেন, এ নিয়ে কারো মনে কোনো সন্দেহ থাকতে পারে না। কাজলও শেষ কবে (বা আদৌ কোনওদিন) এমন একাধিক শেডের চরিত্র করেছেন, জানা নেই। বরাবরের মতো এবারেও তিনি দারুণ অভিনয় করেছেন। বরুণ আর কৃতীও যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন। জনি লিভারও নিজ দায়িত্ব পালন করেছেন প্রশংসনীয় ঢংয়ে। দুঃখ হয়েছে শুধু বোমান ইরানির জন্য। তার মতো শক্তিশালী অভিনেতা এমন তুচ্ছ চরিত্রে অভিনয় করছেন দেখলে কষ্ট হতে বাধ্য। শাহরুখের শেষ সিনেমা ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ দেখার পর এই সিনেমার ভাগ্য নিয়ে ভক্তরা টেনশনে ছিলেন। তা, ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ পরবর্তী তাঁর ভক্তদের হা-হুতাশ এই সিনেমাতে কাজলকে সঙ্গে নিয়ে তুড়ি মেরে ভুলিয়ে দিয়েছেন বাদশাহ।
মন থেকে দেখে এলে কিন্তু সত্যিই মন্দ লাগবে না ছবিটা।