ব্রেকিং ব্যাড ও কিছু মেথ
- মেহেরাবুল হক রাফি
শরতের নীল আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে বেল্ট-সহ একটা প্যান্ট। ধূ ধূ মরুভূমি। এসবের মাঝখানে এক অর্ধ-নগ্ন ব্যক্তি মুখে রেস্পিরেটর মাস্ক লাগিয়ে পাগলের মতন রিক্রিয়েশনাল ভেহিক্যাল ড্রাইভ করে যাচ্ছে। তারই পাশে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে এক যুবক এবং পেছনে দুইটা লাশ..
এক যুগ আগে ঠিক এভাবেই টিভি ইতিহাসের সর্বকালের অন্যতম সেরা সৃষ্টি ‘ব্রেকিং ব্যাড’ সিরিজের সাথে পরিচয় ঘটেছিলো সবার। এরপর একে একে কেটে গিয়েছে ছয়টা বছর, ব্রেকিং ব্যাডের আবেদন দিন দিন যেনো আরো বেড়েছে।
সিরিজ ক্রিয়েটর ভিন্স গিলিগ্যানের মাথায় প্লটের আইডিয়া আসে আরেক বিখ্যাত সিরিজ ‘দ্যা এক্স ফাইলস’ পরিচালনার সময়। তিনি চাচ্ছিলেন কিভাবে একজন সাধারণ মানুষ ধীরে ধীরে নৈতিকতার শেষ ধাপে পৌঁছে যায় সেই গল্পটা দর্শকদের সামনে তুলে ধরতে।
ব্রেকিং ব্যাডের মূল চরিত্র ওয়াল্টার হোয়াইট নিউ মেক্সিকোর আলবাকার্কি হাই স্কুলের একজন মধ্যবয়স্ক এবং ওভার-কোয়ালিফাইড কেমিস্ট্রি টিচার। সেরেব্রাল প্যালসিতে আক্রান্ত টিনেজার ছেলে ওয়াল্টার জুনিয়র ও অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী স্কাইলারকে নিয়ে তার সংসার। পরিচিতজনের মধ্যে বলতে গেলে শুধু আছে ওয়াল্টারের শ্যালিকা মেরি এবং ভায়রা ভাই হ্যাংক, যে কি-না পেশায় একজন ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট এজেন্সির এজেন্ট। সুস্থ-স্বাভাবিক ওয়াল্টার একদিন হটাত করেই জানতে পারে যে তার শরীরে মরণব্যাধি লাংস ক্যান্সার বাসা বেঁধেছে। চিকিৎসা এবং কেমোথেরাপির জন্য প্রয়োজন লাখখানেক ডলার। কিন্তু সামান্য স্কুল-শিক্ষকের পক্ষে এতো টাকা জোগাড় করা অসম্ভবপ্রায়। ভাগ্যের পরিক্রমায় ওয়াল্ট সিদ্ধান্ত নেয় যে সে তার কেমিস্ট্রির জ্ঞান কাজে লাগিয়ে ড্রাগ বানাবে। ড্রাগ ব্যবসায় প্রচুর টাকা। সেই লক্ষ্যেই নিজের একসময়কার ছাত্র জেসি পিংকম্যানের সাথে মেথ বানানোর বিজনেসে নেমে পড়ে এককালে নির্ঝঞ্জাটে জীবন কাটানো ওয়াল্টার হোয়াইট।
এরপরের গল্পটা কোনো রোলার-কোস্টার রাইডের চাইতে কম রোমাঞ্চকর না। জেসি এবং ওয়াল্টের এডভেঞ্চারের সঙ্গী হিসেবে থাকা সল গুডম্যান, গাস ফ্রিং, হ্যাংক শ্রেডার, মাইক, টড, ব্যাজার কিংবা স্কিনি পিট প্রত্যেকেই এখন টিভি জনরার আইকনিক সব ক্যারেক্টার।
ব্রেকিং ব্যাডের বিশেষত্বটা আসলে কি? কি কারণে এর এতো গগণচুম্বী জনপ্রিয়তা? এবারে আসা যাক সেই আলোচনাতেই। বলা হয়ে থাকে যে টিভি সিরিজের জগতে ব্রেকিং ব্যাডের চাইতে নিখুঁত কোনো শো আর কখনো আসেনি। শেষ পর্ব প্রচারিত হওয়ার প্রায় সাত বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো মানুষের মুখে মুখে ব্রেকিং ব্যাডের নাম। শক্তিশালী চিত্রনাট্য, অসাধারণ পরিচালনা সম্ভবত সিরিজটার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুই দিক। পাশাপাশি আছে সময়ের সাথে সাথে চরিত্রদের রূপান্তরকে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পর্দায় ফুটিয়ে তোলা। ব্রেকিং ব্যাডের বেশ কিছু সিগনেচার ক্যামেরা শট এবং ফোরশ্যাডোয়িং প্রসেস এখন অনেক টিভি সিরিজেই অহরহ ব্যবহৃত হয়। আরেক কাল্ট ক্লাসিক ‘দ্যা সোপ্রানোস’ এর পর ব্রেকিং ব্যাডই একমাত্র সিরিজ যেটি কিনা টিভি-জগতের অস্কার হিসেবে পরিচিত প্রাইমটাইম এ্যামিতে শুধুমাত্র এক্টিং ক্যাটাগরিতেই রেকর্ড সর্বোচ্চ নয়টা এওয়ার্ড জিতেছে। ওয়াল্টার হোয়াইট চরিত্রে ব্রায়ান ক্র্যানস্টনের পার্ফম্যান্স যেকোনো অভিনেতার জন্যই ঈর্ষার বিষয়। সবমিলিয়ে বলা যায় ক্রাইম কিংবা ড্রামা জনরার ক্ষেত্রে ব্রেকিং ব্যাড একটা কমপ্লিট প্যাকেজ। এজন্যই সাধারণ দর্শক থেকে শুরু করে হলিউডের নামকরা ক্রিটিক সকলের কাছেই সমানভাবে সমাদৃত হয়েছে সিরিজটি।
ব্রেকিং ব্যাড কোনো লাইফটাইম এক্সপেরিয়েন্সের চাইতে কম কিছু না। তাই না দেখে থাকলে আজই বসে পড়ুন মোবাইল অথবা পিসির সামনে। ব্লু মেথ এবং হাইজেনবার্গের দুনিয়ায় সকলকে স্বাগতম..