আব্দুল্লাহ কেন উদ্যোক্তা হবে?
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
প্রতিটা সফলতার গল্পের পেছনে আরও অনেক ছোট ছোট গল্প। যে গল্পগুলো সাজানো হয় সম্পূর্ন স্রোতের বিপরীতে চলার সাহসীকতাকে নিয়ে। যেখানে ভাললাগার কাজটি একসময় পরিনত হয় স্থায়ী পেশায়। কখনো কখনো এই অসাধ্য সাধন করতে হাঁটতে হয় পরিবারের সকলের বিপরীতে। যেখানে পরিবারের চাওয়া আর নিজের চাওয়ার ভিন্নতা থাকে বিপরীত মুখী। তেমনই একজন খুলনার দিঘলিয়ার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ।
বাবা প্রবাসে থাকতেন। আভিজাত্যের মাঝেই বড় হয়েছেন। আর তার পথচলায় এই আভিজাত্যই এক সময় বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ছোটবেলা থেকেই দুরন্তপনার মাঝে বড় হয়েছেন। বন্ধুদের সাথে আড্ডাবাজিতে সারা দিন কাটত তার। সারাদিনের আড্ডাবাজির ফাঁকে মনে হত নিজেকে কিছু একটা করতে হবে। বাবা-মায়ের ইচ্ছে ছেলে হবে ইঞ্জিনিয়ার। আর তার ইচ্ছা সে হবে ব্যবসায়ী। দ্বন্দ্বটার শুরু সেখান থেকেই। পড়াশুনা করছেন সরকারী ব্রজলাল কলেজ এ পলেটিকাল সাইন্স নিয়ে।
আড্ডাবাজির জন্য একটা স্থান দরকার। আর তাই বাড়ির অদূরেই তিন রাস্তার মোড়ে একটা দোকান ভাড়া নেন। কিন্তু আড্ডাবাজির দোকান ভাড়া প্রথম কিছুদিন পকেট থেকে দিলেও হটাৎ কেন জানি মনে হল ভাড়া পকেট থেকে দেওয়া চলবে না। কি করা যায়? ঠিক তখনই মাথায় এলো দোকানে বসে মোবাইল রিচার্জ দেওয়ার কথা। সালটা ২০১০। নিজের জমানো কিছু টাকা আর বন্ধুদের থেকে সংগ্রহ করা কিছু টাকা নিয়ে শুরু হয় ব্যবসার। আশে পাশে মোবাইল রিচার্জের দোকান না থাকায় জনপ্রিয়তা পেতে সময় লাগলো না।
বাসা থেকে কেউ মেনে নিতে পারল না তার এ কর্মকান্ড। শুরু হল তার উপর নানাভাবে মানসিক অত্যাচার। একদিকে তার উপর নানাভাবে বাধা আসতে থাকে আর সে সেগুলো মোকাবেলা করে তার দোকানে নতুন নতুন পন্য সংযোজন করতে থাকে। পরিবার, পরিজন, আত্মীয়, প্রতিবেশী কেউ চায় না সে দোকানদার হোক। আর তার যেন এটাতেই ভাললাগা।
কেউ তাকে ব্যবসার জন্য ন্যূনতম সাহায্য করা তো দূরের কথা তার পাশে থেকে কেউ আশার বাণীও শোনায় না। অভিজাত পরিবারের ছেলে কেন হবে দোকানদার। তার কিসের অভাব? এভাবেই চলতে থাকল প্রতিটা দিন। ব্যবসাকে বড় করার জন্য নতুন স্বপ্ন দেখা আরম্ভ করলেন। কিভাবে শহরে আরও বড় একটা বাজারে তার ব্যবসা হবে সেটা নিয়ে চিন্তা শুরু করলেন। মাঝ পথে খুলনার যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে হাস মুরগী ও গবাদী পশু পালনের উপর এক মাসের একটি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করলেন। কিছু দিন পর সেখান থেকে সত্তর হাজার টাকা ঋণের ব্যবস্থাও করলেন।
শুরু হল এগিয়ে চলার গল্প। বাজারে দোকানের পাশাপাশি বেকারী পণ্যের ডিলারশিপ নিলেন। বুদ্ধিমত্তাকে পুজি করে শ্রমকে কাজে লাগিয়ে বাজারে তার বিক্রত পন্য দখল নিতে শুরু করল। একে একে প্রতিদিনই তার পণ্যের বাজার বিস্তৃত হতে লাগল। আর ভিন্ন ধরনের চিন্তাও তার ব্যবসার দুয়ার খুলতে চেষ্টা করল। পারিবারিক অব্যাহত চাপ থেকে বের হতে পারলেন না তখনও। লেখাপড়া তো তার চলছে। তবুও ব্যবসা বন্ধের জন্য অব্যাহত চাপ নানা ভাবে পরিবার থেকে।
থামলেন না। শুরু হল আরও ক্ষিপ্র গতিতে পথ চলা। এবার আর অন্যের কোম্পানীর বেকারী পণ্য বিক্রয় নয়। নিজেই ফ্যাক্টরী দিতে হবে। শুরু হল সেই লক্ষেই কাজ। গতানুগতিক প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে উন্নত প্রযুক্তির মেশিন দিয়ে যাত্রা শুরু করল তার ফ্যাক্টরী। একে একে খুলনার দিঘলিয়া, ফুলবাড়ীগেট, দৌলতপুর বেবীষ্টান্ড, বিএল কলেজ গেট এ তার কেএফসি ও হুগলী নামের বড় বড় বেকারী স্থান করে নিল। ভিন্নধর্মী স্বাদের স্বাস্থ্যসম্মত বেকারী পণ্য ভোক্তার হাতে পৌছে দিতেই তার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা।
বর্তমানে তার দোকান আর ফ্যাক্টরী মিলিয়ে আঠার জন কর্মচারী আছে। দিন দিন ব্যবসা সস্প্রসারিত হওয়ার পাশাপাশি আস্থার জায়গাতে পরিনত হয়েছে তার বেকারী। পারিবারিক অসহযোহীতা এখনও বর্তমান। এখনও তার পরিবার থেকে চায় না সে এই ব্যবসার সাথে জড়িত থাকুক। কিন্তু মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ তার ভাললাগার কাজ থেকে শতবাধায়ও অব্যাহতি দিতে চান না।
আগামীর উদ্যোক্তাদের পথ দেখাতে আব্দুল্লাহ বলেন যে কোন কাজের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ রেখে কাজ করে গেলে তা থেকে সাফল্য আসবে। ধৈর্য্য আর সততার সাথে ভাললাগার কাজ করতে পারার মধ্যে অন্যরকম প্রশান্তি। পারিবারিক অসহযোগীতা, বাধা কিছু নয়। সব কিছু মোকাবেলা করে সামনে এগিয়ে যাওয়াটা খুবই জরুরী। আর ছাত্রদের উচিৎ পড়াশুনার পাশাপাশি ব্যবসা শুরু করা। পড়াশুনা করে চাকরী করতে হবে এমন কোন কথা নেই। তাই চাকুরীর পিছনে না ঘুরে ব্যবসার চেষ্টা করা। অন্যকে নিজের প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ তৈরী করে দেওয়া।