১ ট্রিলিয়ন ডলার বিদেশী বিনিয়োগ পাচ্ছে উদীয়মান বাজার
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
উদীয়মান অর্থনীতির বাজারে বিদেশী বিনিয়োগ ক্রমেই বাড়ছে। ধারণা করা হচ্ছে, চলতি বছর এ দেশগুলোয় বিদেশী বিনিয়োগকারীদের লগ্নিকৃত অর্থের পরিমাণ ৯৭ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছবে; গত বছরের সঙ্গে তুলনা করলে যা ৩৫ শতাংশ বেশি। ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্সের (আইআইএফ) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। খবর রয়টার্স।
চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে উদীয়মান অর্থনীতির বাজারে বিপুল পরিমাণ বিদেশী বিনিয়োগ এসেছে। ২০১৪ সালের পর এ সময়ই প্রথম বিদেশী বিনিয়োগের পরিমাণ এতটা বাড়ল। প্রথম প্রান্তিকের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে চলতি বছরের সার্বিক বিনিয়োগ নিয়ে আরো আশাবাদী হয়ে উঠেছে আইআইএফ। যার ধারাবাহিকতায় চার মাস আগে দেয়া পূর্বাভাস পরিবর্তন করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি। আগের পূর্বাভাস দেয়ার কিছুদিন আগেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দায়িত্ব গ্রহণের পর পরই যুক্তরাষ্ট্রকে ঘিরে সম্ভাব্য রক্ষণশীলতার আভাস পাওয়া যায়। বিশেষ করে উদীয়মান বাজারগুলোয় বিনিয়োগপ্রবাহ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা করা হয়েছিল সে সময়। এসব দিক বিবেচনায় রেখে সে সময় আইআইএফ জানিয়েছিল, ২০১৭ সালে উদীয়মান বাজারে ৬৮ হাজার কোটি ডলার বিদেশী বিনিয়োগ আসবে।
আইআইএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাং ত্রান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যবিবাদের আশঙ্কা অনেকটাই কেটে গেছে। তবে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড) শিগগিরই মুদ্রা নীতিমালা কঠোর করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসের দিকে তাকালে লক্ষ করা যায় নিকটতম সময়ে বাণিজ্যবিবাদ সৃষ্টি হওয়ার যে আশঙ্কা ছিল, তা অনেকটাই প্রশমিত হয়েছে। মুদ্রাবাজারে চীনের কারসাজি, শুল্ক বৃদ্ধি ও নর্থ আমেরিকান ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (নাফটা) বাতিলের মতো কোনো আশঙ্কাই শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে আইআইএফ আশা করছে, গত বছরের তুলনায় এবার উদীয়মান বাজারগুলোয় ২৫ হাজার ২০০ কোটি ডলার বেশি বিদেশী বিনিয়োগ আসবে।
উদীয়মান বাজারগুলোয় বিদেশী বিনিয়োগ ক্রমান্বয়ে আরো বাড়বে বলে প্রত্যাশা করছে আইআইএফ। আগামী বছর যা ১ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি হবে। ২০১৪ সালের পর এই প্রথম উদীয়মান বাজারগুলোয় বিদেশী অর্থ লগ্নি হার এতটা বাড়বে। ২০১৫ সালে উদীয়মান বাজারে বিদেশী বিনিয়োগের হার ১৫ বছরের সর্বনিম্নে নেমেছিল।
বিদেশী বিনিয়োগ বেশি হলেও উদীয়মান বাজার থেকে পুঁজির বহির্গমন বিপরীত অবস্থানে থাকবে। অবশ্য অন্য দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে চীনই সবচেয়ে এগিয়ে থাকবে। গত বছর শুধু চীন থেকেই ৭২ হাজার ৫০০ কোটি ডলার পুঁজির বহির্গমন হয়েছে। সংস্থাটি প্রত্যাশা করছে, চলতি বছর উদীয়মান বাজারগুলো থেকে অন্যান্য দেশে ৮৯ হাজার ২০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করা হবে; গত বছরের তুলনায় যা ১৪ হাজার ১০০ কোটি ডলার কম। পরবর্তী বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালে তা আরো কমে যাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে আইআইএফ।
আইআইএফের জ্যেষ্ঠ গবেষণা কর্মকর্তা স্কট ফার্নহাম এ প্রসঙ্গে জানান, পুঁজির বহির্গমন কমাতে চীন নিয়ন্ত্রণমূলক কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। উদীয়মান বাজার থেকে বিনিয়োগ কমে আসায় বোঝা যাচ্ছে চীনের উদ্যোগ অনেকটাই সফল।
উদীয়মান দেশগুলোর সার্বিকভাবে নিট পুঁজির বহিঃপ্রবাহ হবে ১৩ হাজার কোটি ডলার। সংশ্লিষ্ট বাজারের নাগরিক ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের লগ্নিকৃত অর্থের মাধ্যমে এ হিসাব করা হয়েছে। ২৫ উদীয়মান অর্থনীতির জোট থেকে চলতি বছর মোট ৪৯ হাজার কোটি ডলার অন্যত্র বিনিয়োগ করা হতে পারে বলে ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানিয়েছিল আইআইএফ।