মাল্টা চাষে ভাগ্যবদল
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
মেহেরপুর জেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে মোনাখালী গ্রাম। এ গ্রাম পার হয়ে রশিকপুর সড়কের দিকে এগোলেই দেখা যায় মাল্টার বাগান। প্রতিটি গাছে থরে থরে সাজানো সবুজ রঙের মাল্টা। ১২ কাঠা জমিতে ৪৮টি মাল্টাগাছের সবটির অবস্থা একই রকম।
নতুন এ বাগান নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন ওই গ্রামের প্রবাসফেরত ইসমাইল হোসেন। পাঁচ বছর ধরেই তিনি এ বাগানটিকে পরিচর্যা করে যাচ্ছেন। অপর একটি স্থানে নতুন করে ১০ বিঘা জমিতে প্রায় ৭৫০টি মাল্টা চারা রোপণ করেন।
তিন বছর ধরে বাগান থেকে ফল বিক্রি করে ভালো আয় করেছেন। তাঁর এই মাল্টা চাষ দেখে এলাকার চাষিরা অন্যান্য চাষের পরিবর্তে মাল্টায় আগ্রহী হয়ে উঠছেন। স্থানীয় পর্যায়ে এরই মধ্যে প্রায় পাঁচটি মাল্টা বাগান গড়ে উঠেছে। প্রতিটি বাগানে ইসমাইল চারা সরবরাহ করছেন।
জানা গেছে, দেশে বারি-১ জাতের মাল্টার চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এটির স্বাদ এবং ফলন দুটিই ভালো। সাধারণত ফেব্রুয়ারি মাসে ফল ধরে এবং এটি পরিপক্ব হয়ে কমলা রং ধারণ করে সেপ্টেম্বর মাসের দিকে। তখন এটি বাজারজাত করা হয়। স্থানীয় বাজার ছাড়াও রাজধানীর বাদামতলী মার্কেটে মাল্টা বিক্রি করা হয়।
মেহেরপুরে মাল্টা চাষ নিয়ে ইসমাইল জানান, ভালো থাকার স্বপ্ন নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া গিয়েছিলাম। সেখানে সাড়ে ৫ বছরের প্রবাস জীবন আমাকে আকৃষ্ট করতে পারেনি। দেশে ফিরে এসে নতুন কিছু করার ভাবনা থেকে মাল্টা চাষ শুরু করেছি। খোঁজ নিয়ে জানলাম, মেহেরপুর জেলায় মাল্টা চাষ কেউ করেনি। অথচ অত্যন্ত লাভজনক একটি চাষ হলো মাল্টা। এই চাষে লোকসানের আশঙ্কা নেই। চাষ শুরু করার দুই বছর থেকে ফল আসা শুরু করে। চাষের প্রথম বছরেই এর মূল বিনিয়োগটা করা লাগে। এর পর থেকে মাঝেমধ্যে সার প্রয়োগ ও পরিচর্যা করলেই হয়।
তিনি জানান, দ্বিতীয় বছরে ১২ কাঠার বাগান থেকে যে পরিমাণ ফলে এসেছিল তা বিক্রি করে প্রায় ২০ হাজার টাকা, পরের বছর ৭০ হাজার এবং গত বছরে বিক্রি করেছেন এক লাখ ২০ হাজার টাকা। তাঁর এই বাগানটি তৈরি করতে প্রথম বছর খরচ হয়েছিল মাত্র ২০ হাজার টাকা। অন্য যে ১০ বিঘার বাগানটি করেছেন সেই বাগানে এ বছর ফল এলেও সেগুলো তিনি ফেলে দিয়েছেন। যাতে গাছগুলো সঠিক মাত্রায় বেড়ে উঠতে পারে। আগামী বছর থেকে ওই ১০ বিঘা বাগানের ফল বিক্রি করবেন।
ইসমাইলের মাল্টা চাষে উদ্বুদ্ধ হয়ে মোনাখালীসহ এলাকার বেশ কয়েকজন কৃষক মাল্টা চাষে ঝুঁকেছেন। এর মধ্যে মোনাখালী গ্রামের শফি উদ্দিন, মুকুল শেখ, হাবেল উদ্দিন, খাদেমুল ইসলাম, রাব্বি ও মজনু শেখ চাষ শুরু করেছেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘বাতাবি লেবু ও কমলা এই দুই ফলের সংকরায়নের মাধ্যমে মাল্টার উদ্ভাবন। বারি-১ জাতের মাল্টা স্বাদ এবং ফলন দুটিই ভালো। মেহেরপুরের মাটি মাল্টা চাষের জন্য উপযোগী। ইসমাইলকে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে।’