বিনিয়োগ করুন ৫ বিষয়ে
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
প্রত্যেক নতুন উদ্যোক্তা যাদের একটি ছোট ব্যবসা রয়েছে, কাজের প্রতি আগ্রহ রয়েছে আর রয়েছে অসীম চেষ্টা তারা সফল হয়েই থাকেন। কিন্তু শুধু কঠোর পরিশ্রম বা অর্থ বিনিয়োগে লেগে থাকলেই ব্যবসায় সাফল্য আসে না এবং লম্বা সময়ের জন্য ব্যবসা টিকেও যায় না। সেই কারণেই ব্যবসায় সব কিছুতে সামঞ্জস্যতা আনার চেষ্টা করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
সঠিক বিনিয়োগ কৌশলের মাধ্যমে আপনি আপনার কোম্পানির জন্য একটি ভালো আর্থিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে পারবেন এবং আপনার ব্যবসাটির প্রসারও ঘটবে অনেক। যদিও ব্যবসার শুরুতে আপনার কিছু বাড়তি খরচ হবে কিন্তু পরবর্তীতে এটি থেকেই আপনার অনেক লাভ হবে। আপনি নতুন বা প্রতিষ্ঠিত যেমন উদ্যোক্তাই হয়ে থাকুন না কেন নিম্নোক্ত ৫টি বিষয়ে বিনিয়োগ করার ব্যাপারে আপনাকে অবশ্যই ভাবা উচিত।
১. তুলনামূলক পর্যালোচনা
যেকোনো সফল কোম্পানিই একা একা সফল হতে পারে না। সাফল্য ধরে রাখতে হলে নিজের প্রতিযোগীদের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে হয়। তাদের শক্তি, তাদের দুর্বলতা, তাদের সুবিধা এবং অসুবিধা সবকিছুর প্রতিই খেয়াল রাখতে হয়। নিজ কোম্পানির সাথে সাথে প্রতিযোগী কোম্পানিগুলোর ব্যাপারেও যদি গভীর পর্যালোচনা করা যায় তবে এতে করে বিজ্ঞাপনের অনেক নতুন নতুন কৌশল আবিস্কার করা সম্ভব। তাছাড়াও বিভিন্ন পর্যালোচনা থেকে নিজের কোম্পানির প্রয়োজনীয় পরিবর্তন অথবা ভালো ব্যাপারগুলো খুঁজে বের করা যায়। অর্থাৎ নিজের প্রতিযোগীদের বুঝার মাধ্যমে আসলে নিজের কোম্পানির অবস্থান বুঝা যায়।
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক পর্যালোচনা এবং সাহায্যর জন্য সময় এবং অর্থ দুটিরই প্রয়োজন রয়েছে। তাই বিনিয়োগকারী সংস্থা অথবা বিজ্ঞাপনী সংস্থা ভাড়া করে নিজ কোম্পানির প্রচুর সময় বাঁচিয়ে দিতে পারেন কারণ বাইরের কিছু সংস্থা আপনার জন্য সব ধরণের তথ্য সংগ্রহ এবং গবেষণার কাজ করে দিবে। যদি সেটি খরচের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয় তবে আপনি নিজেই তথ্য সংগ্রহ করে গবেষণার কাজটি সেরে ফেলতে পারেন। সেই সাথে প্রতিযোগী কোম্পানিগুলোর বিজ্ঞাপনের ধরণ, তথ্য আদান প্রদানের পদ্ধতি এবং ব্র্যান্ডিং সম্পর্কেও ছোটখাটো গবেষণা করে ফেলতে পারেন।
একটি তুলনামূলক পর্যালোচনা থেকে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন আপনার কোম্পানির বর্তমান অবস্থান কোন জায়গায়, আপনার বর্তমান উদ্দেশ্য কি এবং ভবিষ্যতে আপনি কোন দিকে গেলে আরও উন্নতি করতে পারবেন। তুলনামূলক পর্যালোচনা করতে করতে আপনি আরও বুঝতে পারবেন আপনার গ্রাহকদের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে এবং আপনার ব্যবসায়ের অন্যান্য দিক গুছিয়ে নতুন নতুন লক্ষ্য বের করে সেদিকে এগিয়ে যেতে আপনার কি কি করণীয় ধাপ অনুসরণ করতে হবে সেগুলো সম্পর্কে।
২. সোশ্যাল মিডিয়া এবং প্রচার
গ্রাহকরা আপনার কাছে ছুটে আসবে না যদি তারা আপনার অস্তিত্ব সম্পর্কে জানতেই না পারে। সেই সাথে হাজার হাজার গায়েবী চিন্তা থেকে নতুন ব্যবসার সুযোগও তৈরি হবে না। ব্যবসার প্রচার ঘটানো মানেই হচ্ছে নিজেকে আরও দৃশ্যমান করে তোলা এবং সামাজিক মিডিয়াতে জায়গা করে নেয়ার পাশাপাশি গ্রাহকদের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য এটিই হচ্ছে সব চাইতে সহজ উপায়।
প্রথমেই আপনার ওয়েবসাইটটি আপডেট করে নিতে হবে। নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস ব্যবহার করে অথবা কোন স্বনামধন্য ওয়েব ডিজাইনারের সহায়তায় আপনার ওয়েবসাইটটি এমনভাবে তৈরি করুন যাতে সেটি সবাই মোবাইল থেকে ব্যবহার করতে পারে। আপনার ওয়েবসাইটের পেইজটি যাতে ইউজার ফ্রেন্ডলি হয় এবং সেখানে যাতে সহজেই সাইন আপ করা যায় সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়াও যারা আপনার ওয়েবসাইটটি ঘুরে দেখবেন তারা যাতে চাইলে অনলাইনেই আপনার কাছ থেকে প্রোডাক্ট কিনতে পারেন সেই সুব্যবস্থাটিও কিন্তু ওয়েবসাইটে থাকতে হবে।
পরবর্তী ধাপ হিসেবে ফেসবুক, টুইটার, লিংকড ইন এবং অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়াতে নিজের উপস্থিতি বাড়িয়ে তুলুন। সতর্কতার সাথে নিজের প্লাটফর্মটি বেছে নিন যাতে করে যেসব সাইটে গ্রাহকরা একটিভ থাকে সেসব সাইটকে টার্গেট করে বেশী করে পরিশ্রম করতে পারেন। একই সাথে যেসব সাইটের সাথে আপনার প্রোডাক্ট, সার্ভিস এবং ব্র্যান্ড একদমই মিলে না সেইসব সাইটে পোস্ট করে সময় নষ্ট করা থেকে দূরে থাকুন।
সোশ্যাল মিডিয়াতে টাকা খরচ করে নিজের প্রচার বাড়ান। গ্রাহকদেরকে আপনার প্রোডাক্টের গুণাগুণ এবং সার্ভিস সম্পর্কে জানান। একই সাথে চেষ্টা করুন কিছু বিশ্বস্ত গ্রাহক তৈরি করে প্রোডাক্টের ব্র্যান্ড ভ্যালু বাড়াতে। যেমন ফেসবুকে অ্যাড দিলে খুব সহজেই আপনার প্রোডাক্টটি জনপ্রিয় হয়ে যাবে এবং অল্প সময়ে মানুষের কাছে পরিচিতি লাভ করবে। এতে করে শুধু নতুন গ্রাহকরাই যে আপনার প্রোডাক্ট এবং কোম্পানি সম্পর্কে জানতে পারবে তা-ই নয়, একই সাথে পুরনো গ্রাহকরাও ফিরে আসার সুযোগ পাবে এবং নতুন করে আপনার ব্যবসায় যুক্ত হবার আগ্রহ খুঁজে পাবে।
৩. দক্ষ জনবল
সবচেয়ে ভালো এবং প্রতিভাবান লোকজনকে নিজের কোম্পানিতে রাখলে কাজের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি অল্প সময়ে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়। সঠিক কর্মচারী এবং সহযোগীরা আপনাকে আপনার কোম্পানির যেকোনো প্রজেক্টের প্রতিটি ধাপে সর্বোচ্চ মান বজায় রাখতে সাহায্য করবে এবং যেকোনো নতুন আইডিয়া তৈরি থেকে সেটিকে বাস্তবায়নে পূর্ণ সহায়তা দিয়ে যাবে। এটি ছাড়াও আপনার কোম্পানিকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে বৃহত্তর শিল্পে পরিণত করা এবং সুষ্ঠু কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করতেও এরা আপনাকে সাহায্য করবে।
নিজের টিমকে এমনভাবে গড়ে তুলবেন যেন এটি কোথাও আটকে না থাকে আর এটিই সাফল্যের মূলমন্ত্র। স্মার্ট কর্মকর্তা এবং ঠিকাদাররা আরও বেশী দক্ষ ও কর্মক্ষম হয়ে উঠবে যখন আপনি তাদের প্রফেশনাল স্কিল উন্নয়নের জন্য কাজ করবেন। তাই তাদেরকে বিভিন্ন অনলাইন ট্রেনিং এর পাশাপাশি বিভিন্ন সেমিনারে যোগ দেয়া ও কোর্স করতে উৎসাহিত করবেন। কিছু নির্দিষ্ট কর্মচারীদের বিভিন্ন কনফারেন্সে পাঠাতে পারেন যাতে করে তারা সেখান থেকে নানারকম তথ্য নিয়ে আসতে পারে যেগুলো আপনার কোম্পানির জন্য প্রয়োজনীয় এবং উপকারী হতে পারে।
একই সাথে টিমের প্রতিটি মানুষের মতামত জানতে চাওয়া এবং তাদের প্রত্যেকের ব্যাক্তিগত উন্নয়নের পিছনে সময় দেয়া, সেগুলো যাচাই বাছাই করা এবং সবাই একসাথে কাজ করার মন মানসিকতা গড়ে তোলা হচ্ছে একটি শক্তিশালী টিম গড়ে তোলার সবচেয়ে সহজ উপায়। এই টিমটিই আপনাকে সাফল্যের চূড়ায় নিয়ে যেতে পারবে। এছাড়াও সব সময় চেষ্টা করবেন নতুন কিছু শেখার। কারণ শেখার কোন শেষ নেই। যেমন ওয়ারেন বাফেট প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা করে পড়াশুনা করেন। মার্ক জুকারবার্গ ম্যান্ডারিন শিখেছেন যাতে এশিয়ান ক্লায়েন্টদের সাথে সহজে কথা বলে ভাবের আদান প্রদান করতে পারেন। তাই নতুন কিছু শেখার আগ্রহ আপনাকে আপনার ব্যবসায় অবদানের ক্ষেত্রে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।
৪. নতুন নতুন প্রযুক্তি
প্রতিযোগিতায় সহজেই পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে নতুন নতুন প্রযুক্তি হাতে পেয়েও সেগুলো ব্যবহার না করা। সহজ কিছু সফটওয়্যার যেমন সময়ানুবর্তীতা ঠিক রাখার সফটওয়্যার, অ্যাকাউন্টিং এর কাজ সহজেই সেরে ফেলার কিছু সফটওয়্যার, নিজের কোম্পানির কম্পিউটারগুলিকে আপডেটেড রাখতে কিছু সফটওয়্যার যদি আপনি ব্যবহার না করেন তবে আপনি যে পিছিয়ে যাবেন এতে কিন্তু কোন সন্দেহ নেই। কারণ এগুলি আপনার কোম্পানির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে অবশ্যই লাগবে। আপনাকে আরও খেয়াল রাখতে হবে যেন আপনার টিম হাতের কাছেই সব প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো পেয়ে থাকে। এসবের মধ্যে রয়েছে হাই স্পীড ইন্টারনেট এবং বিভিন্ন আধুনিক উৎপাদনশীল যন্ত্র। এগুলি আপনার সাপ্লাই চেইনের প্রতিটি ধাপে প্রচুর সময় বাঁচিয়ে দেবে।
যারা অনলাইনেই বেশিরভাগ কেনাকাটা করে থাকে এবং মোবাইল ও ট্যাবের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করে থাকে তাদের জন্য একটি আধুনিক সফটওয়্যার আপনার কোম্পানিকে এমন অনেক গ্রাহকের কাছে ইজিলি এক্সেসেবল করে আপনার ব্যবসা অনেক বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করবে। এটি ছাড়াও অনেক সফটওয়্যার আছে যেগুলি ড্রাফ্ট তৈরি, পাঠানো এবং রিসিভ করা ছাড়াও বিভিন্ন ধরণের ডকুমেন্ট তৈরি এবং সিগনেচার নিয়ে সহজেই কাগজপত্র তৈরি করে ফেলতে পারে। এই ধরণের অভিনব প্রযুক্তিতে আভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ শুধু যে একটি উল্লেখজনক পরিবর্তন আনবে তা-ই নয়, এটি আপনার ব্যবসায়ের ধরণ বদলে দিয়ে সেটিকে আরও উন্নত করে তুলতে সাহায্য করবে।
৫. অন্যান্য আনুসাঙ্গিক
আপনার যদি বিনিয়োগের প্রয়োজন হয় তবে এমন অনেক ওয়েবসাইট আছে যারা বিনিয়োগকারী এবং উদ্যোক্তাদের মাঝে যোগাযোগ করিয়ে দেয়। যেমন ব্র্যাক ব্যাংক বা গ্রামীণ ব্যাংক। এরা গ্রামের গরিব মানুষদের ব্যবসার জন্য অর্থ দিয়ে থাকে। বিনিময়ে এরা অল্প কিছু লাভ নেয় এবং সব থেকে বড় ব্যাপার যেটি সেটি হচ্ছে এদের অনেক প্রচার হয়। এরা যদিও অনলাইনে টাকা বিনিয়োগ করা শুরু করেনি এখনো তবুও চাইলে এরা এটি করতে পারে আর হাজার হাজার নতুন উদ্যোক্তাদের পথ দেখাতে পারে।
যখন আপনি নিজে সাফল্য অর্জন করে অন্যদের সাহায্য করার মতো অবস্থায় পৌঁছাবেন ঠিক যেমন করে আপনাকে কেউ ব্যবসায়ের শুরুতে সাহায্য করেছিলো সফল হতে তখন আপনি নিজেই সাফল্যের নতুন সংজ্ঞা বুঝতে পারবেন। নতুন উদ্যোক্তাদের তাদের ব্যবসার প্রসার ঘটাতে সাহায্য করার মাধ্যমে আপনি কিন্তু বিভিন্ন উদ্যোক্তা এবং বিনিয়োগকারীদের সাথে নিজের নেটওয়ার্কটি আরও দৃঢ় করে তুলতে পারবেন। একই সাথে আপনার ব্র্যান্ডটিও ছড়িয়ে পড়বে মানুষের মাঝে। এরই ধারাবাহিকতায় আপনি নতুন নতুন বিজনেস স্ট্রাটেজি এবং প্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে পারবেন এবং নিজের কোম্পানিকে আপডেটেড করে সবার চেয়ে এগিয়ে রাখতে পারবেন।