চাকরিদাতা হতে চাইলে
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে মানুষের রুচিবোধে, পছন্দে-অপছন্দে। একসময় সরকারি চাকরি ছাড়া অন্য কিছু ভাবতেই পারত না শিক্ষিতরা। চাকরির প্রতি তরুণদের মাত্রাতিরিক্ত এই ঝোঁক এখন অনেকটাই কমে এসেছে। প্রতিযোগিতার এই বাজারে চাকরি পেতে কতই না কাঠখড় পোহাতে হচ্ছে। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে দীর্ঘ প্রস্তুতি নিয়েও চাকরি নামক সোনার হরিণ বগলদাবা করার নিশ্চয়তা কে কাকে দেবে? এসব কারণে তরুণরা এখন উদ্যোক্তা হওয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছে। এতে ঝুঁকি থাকলেও রয়েছে রাজ্যের স্বাধীনতা। চার দেয়ালে বন্দি থেকে রোজ ৯ টা-৫টা অফিস করার ঝামেলা নেই। সব মিলিয়ে হালের আত্মপ্রত্যয়ী তরুণরা আর চাকরির পেছনে ছুটতে নয় উদ্যোক্তা হয়ে অন্যকে চাকরি দেয়ার ব্যাপারে আকাক্সক্ষী।
যে কোনো উদ্যোগের শুরুতে বহু ঝড়-ঝাপ্টা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়। বিশেষ করে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে ব্যবসা শুরু করার পথটা মসৃণ নয়। ব্যাংক নতুন উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে চায় না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে সাড়া পেতে ঘাম ঝড়াতে হয়। এসব মোকাবেলা করে সততা-নিষ্ঠা ও একটু কৌশলী হয়ে কেউ যদি একবার নিজেকে ব্যবসায় মেলে ধরতে পারে তবে তাকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয় না। বাংলাদেশে এরকম হাজারও নজির আছে। যারা স্বপ্ন দেখেছেন এবং সেই স্বপ্ন পূরণে ঝুঁকিও নিয়েছেন, তারা সফল হয়ে পথ দেখিয়েছেন। এমনই একজন নিটল নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল মাতলুব আহমাদ। তিনি তার ব্যবসার শুরু সম্পর্কে বলেন, ব্যবসায় প্রথম থেকেই আমার শিক্ষা ও বুদ্ধি দিয়ে প্রোডাক্ট গ্যাপগুলো খুঁজে বের করেছি। আমার নীতি ছিল, আজ যদি রসুনের ঘাটতি হয় তবে কালই আমি রসুন আমদানি করব, পরশু বাজারে দেব। এভাবে আমি শরটেজ মিট করতাম। এতে পণ্যের দামে স্থিতিশীলতা আসত। ফলে আমাদেরও লাভ হয়েছে, দেশেরও লাভ হয়েছে।
উদ্যোক্তা হওয়ার দৌড়ে সফলতা যেমন আছে আবার অনেককে ছিটকেও পড়তে হয়। যারা রাতারাতি বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখেন তারাই ছিটকে পড়েন। তরুণ উদ্যোক্তাদের ছোট ব্যবসা দিয়ে শুরু করার পরামর্শ দিয়েছেন আরেক সফল শিল্পোদ্যোক্তা ইফাদ গ্রুপের চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমেদ টিপু। বলেন, তরুণদের প্রতি আমার পরামর্শ প্রথমে ছোট থেকেই ব্যবসা শুরু কর। যে ব্যবসায় হাত দেবে সেটি সম্পর্কে স্টাডি কর। প্রথমেই লস প্রজেক্টে হাত দিলে অঙ্কুরেই বিনাশ হওয়ার সম্ভবনা থাকে। কোন সেক্টরে বিনিয়োগ করে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা বেশি এ বিষয়ে মাতলুব আহমাদ বলেন, বর্তমানে বিনিয়োগের সেরা জায়গা পেট্রোকেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ। টেক্সটাইলেও সম্ভাবনা প্রচুর। লেদার স্যু ইন্ডাস্ট্রি, ডাইভারসিফিকেশন অব এক্সপোর্ট ইন্ডাস্ট্রি, ফুড প্রসেসিং প্লান্ট, প্লাস্টিক কাঁচামাল প্লান্ট, বিটুমিন প্লান্ট হল বিনিয়োগের সম্ভাবনাময় জায়গা।
উদ্যোক্তা হিসেবে টিকে থাকার জন্য প্রথম শর্তই হচ্ছে সাহস ও ঝুঁকি নেয়ার মানসিকতা থাকা। সফল ব্যবসায়ী হতে হলে নিজের পুঁজির ব্যবহারে বাস্তববাদী হতে হবে। সাফল্য নির্ভর করে সঠিকভাবে অর্থ ব্যবস্থাপনার ওপর। তারাই উদ্যোক্তা হিসেবে সফল হন যারা সততা, আমানতদারি বজায় রাখে। ইফতেখার আহমেদ বলেন, সততা, নিষ্ঠা, কঠোর পরিশ্রম, সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা এসব বিষয়ে আমি শুরু থেকেই খুবই সিনসিয়ার। আমি কাউকে কোনো দিন ঠকাইনি। কেউ আমার কাছে ১০টি টাকাও পাবে না। মাতলুব আহমাদ বলেন, ব্যবসায় সফলতার মূলে আমানতদারি, বিশ্বস্ততা। ‘অনেস্টি ইজ দ্য বেস্ট পলিসি’। মনে রাখতে হবে, আমরা ব্যবসায়ীরা ব্যাংক টাকা নিয়ে ব্যবসা করি। ব্যবসায় লস করেছি, কিন্তু ব্যাংকের কাছে কোনো দিন মাফ চাইনি। এভাবে ব্যাংক যদি আপনার বন্ধু হয়ে যায়, তাহলে যে কোনো পরিমাণ লোন আপনি পেতে পারেন।