বিনিয়োগের আগ্রহ কম দেশি উদ্যোক্তাদের
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
রাজনৈতিক অস্থিরতা বন্ধ হওয়ার পরও দেশি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের আগ্রহ বাড়ছে না। বরং চলতি অর্থবছরের প্রথম ৩ মাসে বিনিয়োগের আগ্রহ কমেছে প্রায় ৩৩ শতাংশ। এর কারণ হিসেবে উদ্যোক্তারা ব্যবসায়িক পরিবেশ ভালো না থাকাকে দায়ী করছেন। তারা বলছেন, বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করতে গেলে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হয়। গ্যাস-বিদ্যুতের সংযোগ পাওয়া খুব কঠিন। সংযোগ পাওয়া গেলেও গ্যাস-বিদ্যুতের সঙ্কট শিল্প-কারখানার জন্য বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। তাছাড়া উচ্চ সুদের পাশাপাশি ব্যাংকের ঋণ পাওয়াও বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাই বিনিয়োগ কাঙ্ক্ষিত হারে বাড়ছে না।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৩ মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) দেশি উদ্যোক্তারা ১৯ হাজার ৫১০ কোটি টাকা বিনিয়োগের জন্য নিবন্ধন করেছেন। আর গত অর্থ বছরের শেষ ৩ মাসে (এপ্রিল-জুন) দেশি উদ্যোক্তারা ২৯ হাজার ১০৬ কোটি টাকা বিনিয়োগের নিবন্ধন করেছিলেন। সেই হিসেবে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর এই ৩ মাসে বিনিয়োগের নিবন্ধন বা আগ্রহ কমেছে ৯ হাজার ৫৯৬ কোটি টাকা বা ৩২ দশমিক ৯৭ শতাংশ।
দেশি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের আগ্রহ কমলেও বেড়েছে বিদেশি উদ্যোক্তাদের আগ্রহ। সর্বশেষ ৩ মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বিদেশি উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ নিবন্ধন করেছেন ৩০ হাজার ৭৪০ কোটি টাকার। আগের ৩ মাসে তাদের বিনিয়োগ নিবন্ধনের পরিমাণ ছিল ১১ হাজার ১২৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ বিদেশি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ নিবন্ধন বেড়েছে ১৯ হাজার ৬১৩ কোটি টাকা বা ১৭৬ শতাংশ। এ সময়ে বিদ্যুত্ খাতের বড় প্রকল্প বিনিয়োগের নিবন্ধনে আসায় বিদেশি উদ্যোক্তাদের নিবন্ধনের পরিমাণ বেশি হয়েছে।
দেশি উদ্যোক্তাদের নিবন্ধন কমা প্রসঙ্গে ঢাকা চেম্বারের একজন সাবেক সভাপতি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিনিয়োগের নিবন্ধনে বাড়া-কমা থাকবেই। বড় বিষয় হলো দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ আশাব্যঞ্জক নয়। গ্যাস-বিদ্যুতের সঙ্কটসহ নানা সমস্যায় উদ্যোক্তারা হতাশ। তাই বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, দেশি উদ্যোক্তারা দেশের ব্যবসায়ীক পরিবেশের বিষয়টি জানেন বলেই তারা বিনিয়োগ করতে চান না। যতদিন পর্যন্ত ব্যবসায়ের পরিবেশ উন্নত না হবে ততদিন কাঙ্ক্ষিত হারে বিনিয়োগ হবে না। আর বিদেশি উদ্যোক্তারা অনেক ক্ষেত্রেই বিনিয়োগের নিবন্ধন করলেও শেষ পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারেন না। এর কারণ হলো— তারা বিনিয়োগের সময় নানা বাধার মুখে পড়েন। ফলে তারা ফিরে যান। তাই যে করেই হোক দেশের বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত করতে হবে।
বিডার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমান সরকার বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত করতে বদ্ধপরিকর। ইতিমধ্যে ব্যবসায়ীক পরিবেশ উন্নত করতে কী করতে হবে এবং তা কীভাবে করতে হবে এসব নির্ধারণে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে সভা করা হয়েছে। সরকার চাইছে ব্যবসায়ের পরিবেশ উন্নত করেই বিনিয়োগ বাড়ানো হবে। বিনিয়োগের পরিস্থিতি নিয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পিআরআই এর নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করতে গেলে উদ্যোক্তাদেরকে নানা বাধার মুখে পড়তে হয়। বিদ্যুতের সংযোগ পাওয়া একটি বড় সমস্যা। বাংলাদেশে বিদ্যুতের সংযোগ পেতে সময় লাগে এক বছরেরও বেশি। একটি মামলা হলে সেটি নিষ্পত্তিতেও অনেক সময় অপচয় হয়। অথচ পাশের দেশ ভারত ও নেপালে এসব সমস্যা অনেক কম সময়ে সমাধান করা হয়। ভারত কেন্দ্রীয় সরকারের মাধ্যমে পরিচালিত হয় না। একেক অঙ্গরাজ্য একেকভাবে পরিচালিত হয়। তারা ব্যবসা পরিবেশ উন্নতি করতে পারলেও বাংলাদেশ পারেনি। ড. আহসান মনসুর আরো বলেন, আমাদের আমলাতন্ত্রও অনেক জটিল। জমির নিবন্ধন খরচ এখানে বেশি। এ বিষয়গুলোতে নজর দেয়া দরকার। তবেই দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত হবে, বাড়বে বিনিয়োগ।
উদ্যোক্তারা বলেছেন, ব্যবসা পরিবেশ সূচকে উন্নতি করতে চাইলে সবার আগে জরুরি এক ছাদের নিচে সব সেবা (ওয়ান স্টপ সার্ভিস) নিশ্চিত করা। এছাড়া বিদ্যুত্ সংযোগ, জমিপ্রাপ্তি এবং মামলা নিষ্পত্তিতে এখন যে সময় লাগছে, সেটি কাটিয়ে উঠতে হবে। তাছাড়া বিদ্যুত্ সংযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে যেভাবে সময় অপচয় হয় তা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এটি কমিয়ে আনতে হবে। পাশাপাশি ব্যবসা সংক্রান্ত নীতির ধারাবাহিকতা থাকতে হবে।